পাতা:সর্ব্বসম্বাদিনী - জীব গোস্বামী.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেন না, সকলের একত্র মিলন সম্ভবপর নহে। সুতরাং এই পক্ষের যুক্তি সহজেই নিরস্ত অনুব্যাখ্যা sås জ্ঞানেও এইরূপ ভ্রমের সম্ভাবনা থাকিতে পারে। কিন্তু প্রামাণিক শব্দজ্ঞান ভ্ৰম প্রমাদি দোষবিরহিত, উহাতে সে আশঙ্কা নাই । যেমন হিমালয়ে হিম,-রত্নাকরে রত্ন, ইত্যাদি স্থলে উক্ত শব্দেই প্রামাণ্য বদ্ধমূল রহিয়াছে।

  • যে ব্যক্তি পূর্বে ইন্দ্ৰজাল প্রদর্শিত মায়ামুণ্ড প্রত্যক্ষ করিয়াছে এবং উহা যে মিথ্যা, যাহার এই জ্ঞান জন্মিয়াছে—এই ভ্ৰান্তির ধারণাবশতঃ প্রকৃত প্রস্তাবে সে স্থলে সে কোন যথার্থী , ; ছিন্ন মুণ্ড দেখিলেও, তাহাতে তাহার বিশ্বাস জন্মে না, আকাশবাণীতেও সে যদি শুনিতে পায়।

যে, ইহা যথার্থ ছিন্ন মুণ্ড, তথাপি কোন বিশ্বস্তু ব্যক্তির কথা ভিন্ন কোনও প্রকারে প্রকৃত তত্ত্বনির্ণয়ে সে সমর্থ হয় না। বিচারশীল ব্যক্তিমাত্রের ইহা স্বীকাৰ্য্য। এ স্থলে প্রত্যক্ষের প্রামাণ্য নাই, 11 = কিন্তু শব্দপ্রমাণ অন্য কোন প্রমাণের অপেক্ষা না করিয়া স্বতঃই প্রমাণরূপে পরিগৃহীত হয়। ] আবার মনে করুন, দশটি লোকের মধ্যে একজন নিজস্কে ছাড়িয়া দিয়া অপর নয় জনের গণনা করিয়া বলিতেছে-“আমাদের দশ জনের মধ্যে অপর ব্যক্তি কোথায়”? তখন যদি তাহাকে । কেহ বলে, “তুমিই দশম”, “আমিই দশম", এই শব্দ তাহার শ্রবণপথে প্রবেশ মাত্রই তাহার প্রমাদ্বিঘাতক মোহ বিনষ্ট করিয়া দেয়। ইহাতে স্পষ্টতঃই প্রতিপন্ন হইতেছে যে, শব্দপ্রমাণ নিরপেক্ষ, ইহা কাহারও অপেক্ষা রাখে না। প্রত্যক্ষ, আত্মশক্তির অনুরূপ স্থলবিশেষে শব্দ, প্রমাণের সাহায্য করে। যেমন অগ্নি হিম-নাশের উপায়। এ স্থলে প্রত্যক্ষ শব্দ-প্রমাণের সহায়ক মাত্র । কিন্তু এমন স্থল আছে, যেখানে প্রত্যক্ষ একবারেই প্রমাণ বলিয়া গণ্য হয় না।” . যেমন দেবকী দেবী স্থানান্তরে শ্ৰীকৃষ্ণকে বলিতে ছেন—“হে মতে, মথুরা নগরে তুমি আমার গর্ভরূপে অবস্থান করিয়াছিলো।” এ স্থলে প্রত্যক্ষের কোনও প্রামাণ্য নাই, বরং প্রত্যক্ষকে উপমর্দন কেরিয়া শব্দপ্রমাণ স্বকীয় প্রামাণ্য প্রকটন করিতেছে। আরও দেখুন, সর্পদেষ্ট ব্যক্তিকে ওঝা যখন বলে—“তোমার দেহে আর বিষ নাই, আমার | – } মন্ত্রবলে তোমার দেহের বিষ নষ্ট হইয়াছে”-তৎপ্রতিপাদিত এই মন্ত্রণাদিতে প্রত্যক্ষের বিরোধ নাই। স্ত্ৰ স্থলে প্রত্যক্ষ শব্দপ্রমাণের সহায়ক । “সুবৰ্ণভন্ম স্নিগ্ধ”-এই উক্তিতেও শব্দ প্রমাণই সাধকতম ৷ শব্দপ্রমাণই প্রতীতির প্রধানতম সাধক ৷ মানবদেহে গ্ৰহগণের ক্রিয়াকলাপাদির প্রতীতিতেও শব্দপ্রমাণই মূল । কেহ কেহ বলেন-“যাহা সৰ্ব্ব-প্রত্যক্ষসিদ্ধ, তাহাই সত্য।” এই সিদ্ধান্তও সমীচীন নহে। – হইয়া যায়। অপিচ। যাই হুলবিশেষে বন্ধ লৌকিন্তু শাস্ত্ৰে বহু লোকের প্রত্যক্ষ সিদ্ধ বলিয়া স্বীকৃত হয়, তাদৃশ বস্তুরও প্রকৃষ্ঠ পক্ষে অন্তরূঃ প্রতীতি, উপুলব্ধি হয় অর্থাৎ যাহা বহু লোকে এক প্রকার সত্য বলিয়াই মনে করে, বিশেষ বিচারে তাহার অন্তরূপ প্রতীতিও ঘটিয়া থাকে। অথবা // পৌরুষেয় শাস্ত্ৰে যাহা সত্য বলিয়া নির্ণীত হয়, অপৌরুষেয় শাস্ত্ৰে তাহা সত্য বলিয়া স্বীকৃত হয়। ■ না। (সুতরাং প্রত্যক্ষ প্রমাণ অপেক্ষা শব্দপ্রায়ই বলবত্তর)। 1+5