পাতা:সার ওয়াল্টার স্কটের গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९x8 তখন সাহায্য করিবার মত শক্তি ছিল না। সৈকতভূমি তখন জোয়ারের জলে ডুবিতে চলিয়াছে। কাজেই পাহাড়ের কোল (ঘষিয় সকলকে কোনওমতে চলিতে হইতেছিল। এই লোকটি না থাকিলে সার আর্থার কখনই এই পথে চলিতে পারিতেন না । আজিকার সন্ধ্যা সত্যই ভয়াবহ রূপে দেখা দিয়াছিল । ঝটিকার গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সামুদ্রিক পক্ষীর আর্গুচীৎকার, সমুদ্র-তরঙ্গের ভীষণবিক্ষোভ মিশিয়া অতি বিভীষিকাপূৰ্ণ করিয়া তুলিয়ছিল। ষে পথে তিন জন প্রাণী চলিঙেছিল, উত্তাল তরঙ্গ মাঝে মাঝে সেখানে আছাড় খাইয়া পড়িতেছিল । প্রতি মুহূৰ্বেই সমুদ্র পথটিকে কুক্ষিগত করিবার জন্য ছুটিয়া আসিতেছিল ! তিন জনেরই ওখন লক্ষ্য সেই কৃষ্ণবর্ণ পদার্থ। কিন্তু প্রতি মুহূৰ্বেই সমুদ্র উহাকে গ্রাস করিবার জন্ত অট্টহাস্ত করিতেছিল । তরঙ্গ যেখানে ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল, কৃষ্ণবর্ণ পদার্থটি তখনও তাহার উপরে দেখা যাইতে ছল । একটা বাক ফিরিবার পর একটা পাহাড়ের আড়ালে তার তাহাকে দেখা গেল না। তিন জমেরই মনে তখন নৈরাস্তের তীব্র বেদন জাগিয়া উঠিল । তথাপি তাহার! অগ্রসর হইতে লাগিল । যেখানে আসিলে শৈল-শৃঙ্গটিকে পুনরায় দেখা যাইবে, সেখানে আসিয় তাহার। আর তাহার দেখা পাইলেন না । সহস্র তরঙ্গমালার গহবরে তাহা ডুবিয়া গিয়াছে। বৃদ্ধ ভিখারীর মুখমণ্ডল এ দৃষ্ঠে বিবর্ণ হইয় গেল । ইসাবেল ক্ষীণস্বরে আগুনাদ করিয়৷ উঠিলেন । তিনি বলিলেন, "ভগবান, দয়া কর।” ভিক্ষুকও তাহার প্রতিধ্বনি করিল । সার আর্থার কাতর স্বরে বলিয়া উঠিলেন, “ম, আমার ! শেষে এমন শোচনীয় মৃত্যু !” পিতার অঙ্গ আশ্রয় করিয়া কণ্ঠ বললেন, “বাৰু! বাবা – আর তুমিও আমাদের প্রাণরক্ষা করতে এসে, প্রাণ হারালে !" বৃদ্ধ বাণ “পেটা গণনীয় নয়। আমার জীবন থাকলেই বা কি, আর গেলেই বা কি ! এখানেই মরি বা অন্য জায়গায় গিয়ে মরি, একই কথা ।” সার আর্থার বলিলেন, "শোন বৃদ্ধ, তুমি বড়ু ভাল লোক । আর কোন উপায় কি নেই ? ভেবে দেখ, আমি তোমাকে যথেষ্ট ধনসম্পদ দেবতোমাকে গোলাবাড়ী কোরে দেব—নিশ্চয়—" ভিক্ষুক বিক্ষুব্ধ গর্জমান সমুদ্রের দিকে চাহিয়৷ বলিল, “আমাদের সকলেরই ধন-সম্পদ এক হয়ে ৰাৰে-বেশী দেরী নেই। আমার কোন জমিজমা সার ওয়াটার স্বটের গ্রন্থাবলী নেই । আপনারও আর দেবার মত অবকাশ রইল নী—সবই জলে এপুনি ডুবে যাবে!” এই সকল আলোচনার সময় সকলে পাহাড়ের একটা উচ্চ পাথরের উপর দাড়াইয়াছিলেন । কারণ, আর অধিক দূর অগ্রসর হওয়া তাহার। আদেী নিরাপদ মনে করেন নাই—এক পা অগ্রসর হইলেই মৃত্যু অবখ্যম্ভাবী । এইখানে দাড়াইয়। তাহারা মূহু অথচ অমোঘ পরিণামের প্রতীক্ষা করিবেন । পুরাকালে পৌত্তলিক স্বৈরশাসকগণ খৃষ্টবিশ্বাসীদিগকে ক্রুদ্ধ হিংস্র পশু ছাড়িয়া দিয়৷ ষে ভাবে হত্য করিত—আঞ্জ এষ্ট তিন ব্যক্তি সেইরূপ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত খৃষ্টানগণের ন্যায় মৃত্যুর প্রতীক্ষ করিতেছিলেন । পিঞ্জরমুক্ত হিংস্র পশু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপর লাফাইরা পড়িবার পূৰ্ব্বে, হতভাগ্য যেমন দাড়াইয়। মৃত্যুর প্রতীক্ষা করিত, সমুদ্রতরঙ্গ যভক্ষণ না তাহাদিগের উপর ঋ"পাইয়! পড়ে, ততক্ষণ তাহারাও সেইভাবে প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন । এইরূপ ভাষণ অবস্থাতেও ইসাবেল চিস্তাকে কেন্দ্রীভূত করিলেন–র্তাগর মনে সাহস ও প্রতীতি জাগিয়। উঠিল । তিনি বললেন, “চেষ্টা না করেই কি এমুনি ভাবে আমরা প্রাণ দেব ? যতই দুরারোহ হোকু না, এই পাহাড়ের উপরে কি উঠবার কোন পন্থা নেই ? সমুদ্রের জল যাতে কাছে না পৌছুতে পারে, এমন একটা উঁচু জায়গায় কি আঞ্জ রং এর মত পাঞ্চবার কোন উপায় নেই ? সকলেই আমাদের কথা এভক্ষণে জানতে পেরেছে- -আমাদের সাহাধ} করবার জন্যও আসতে পারে ততক্ষণ বঁচিবার কি কোন পন্থ। নেই ?” সার আর্থীরের কর্ণে কথাগুলি প্রবেশ করিল, কিন্তু তাহার নিকট অর্থ বোধগম্য হইল না । ভিনি শুধু বৃদ্ধ ভিক্ষুকের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন । ষেন এই ভিখারীই তাহাদিগকে প্রাণদান দিতে পারে। অকিলটি চুপ করিয়া রহিল, তার পর বলিল, “এক সময় আমার খুব সাহস ছিল, পাহাড়ে ওঠা আমার বাতিক ও ছিল। ঐ সব কালে পাহাড়ে উঠে পাখীর ছান। ধরতাম । কিন্তু সে অনেক দিন আগের কথ। । দড়ি না হলে এই পাহাড়ে ওঠা মামুষের সাধ্যের বাইরে। দড়ি আম্লেও আপনাকে রক্ষা করা যাবে কি রকমে ? এই দিকে একটা পথ আগে ছিল, এখনো হয় ত থাকৃতে পারে ; এখন সেটা খুজে পেলে হয় । যাক, আপনারা যেখানে আছেন, চুপ ক'রে দাড়িয়ে থাকুন। জয় ভগৱান !