পাতা:সার ওয়াল্টার স্কটের গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩২ সময় আমার পূৰ্ব্বপুরুষেয় লিখিত বইখানা সার আর্থারের হাতে দিয়েছিলেম । তখন তাকে বইয়ের উপর মুদ্রিত শ্লোকটা পড়তে দিয়েছিলাম। তোমার মন তখন অন্তর থাকলেও, শ্লোকটা তোমার কাণে গিয়েছিল । কাজেই কথাগুলো কাণের ভেঙর থেকেই গিয়েছিল। গ্রিজেলের উপকথাও তুমি শুনেছিলে । কাজেই স্বপ্নে ঐ শ্লোকট। জেমার মনে জেগে উঠেছিল। তুমি যে কাজ করবে মনে ঠিক করেছ, সে পথে অবিচলিত থাকা স্বপ্নে চলুতে পারে, জেগে উঠে চলে না । সেটা বোকামি । ওর কোন অর্থ হয় না ।” আরক্তমুখে লভেল বলিলেন, “পেটা আমি স্বীকার করি । মনে হয়, আপনার কথাই ঠিক । এই তুচ্ছ ব্যাপারে মুহূর্বের জন্য আমার মন একাগ্র হয়েছিল ; এর জন্য আপনার বিচার বুদ্ধিতে আমি খেলো হয়ে গেছি ! কিন্তু বিরুদ্ধ ইচ্ছা ও সংকল্পের দোটানায় আমি প'ড়ে গিয়েছি । তরঙ্গের উপর যখন নৌক{ থাকে, তখন একটা সরু দড়ি দিয়ে তাকে ডাঙ্গায় আনা যায়, কিন্তু মোট কাছি দিয়ে তাকে ডাঙ্গায় ভোলা ষায় না । তা জানেন ত?” প্রত্নতাত্ত্বিক বলিলে , “খুব ঠিক কথা । আমার মন্তব্য অনুসারে কাজ কর । তোমাকে আমার খুব ভাল লাগছে, খুব ভাল লোক বলেই মনে হচ্ছে । এখন শোন, লভেল, সত্যি ক’রে বল দেখি, কেন তুমি নিজের দেশ ছেড়ে আমাদের দেশে এসেছ, নিজের কাজকৰ্ম্ম ছেড়ে দিয়েছ ? সে সব ছেড়ে অলসের মত ফেয়ারপোর্টে কেন রয়েছ ? বৈরাগ এসেছে বোধ श्झ ।।” প্রশ্ন এড়াইবার উপায় নাই দেখিয়া লভেল ধৈর্য্য সহকারে সব শুনিলেন । তার পর বলিলেন, “তই যদি হয়, হতে পারে । সমগ্র জগতে আমার আপনার বলবার মভ কেউ নাই ! এমন অবস্থায় আমার মনে নিৰ্ব্বেদ আসতে পারে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করবার ও বাধা হয় না । যে লোকের ভাল বা মন্দ শুধু তার নিজেরই উপয় পড়ে, সে তার খেয়ালমত কাজ করবার অধিকারী * স্নেহভরে লভেলের স্কন্ধদেশে হাত রাখিয়া ওল্ডৰকৃ বলিলেন, “আমায় মাপ কর বন্ধু। একটু ধীরভাবে আমার কথা গুলো শোন ; ধরে নিলাম সংসারে তোমার কোন এমন বন্ধু বা আত্মীয় নেই, যে তোমার সাফল্যে আনন্দ লাভ করতে পারে । অথবা এমন কেউ নেই, যাকে তুমি আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করে, তার কৃতজ্ঞতাভাজন হতে পার। কিন্তু ত৷ সর ওয়ান্টার স্কটের গ্রন্থাবলী হলেও কৰ্ত্তব্যের পথে দৃঢ়ভাবে চলুতে বাধা কি ? কারণ, সমাজ তোমার কৃতকৰ্ম্মের ফল প্রত্যাশ! করে—ষে ভগবান তোমার স্রষ্টা, তিনি সমাজের এক জন হিসাবেই তোমাকে পৃথিবীতে এনেছেন —মভরা: অন্যের সেবা করাও তোমার কৰ্ত্তব্য ।" “কিন্তু আমার মধ্যে সে রকম শক্তি আছে ব’লে আমার মনে হয় না। আমি সমাজের কাছে কিছুষ্ট দাবী করিনে, শুধু নিজের মর্জিমত জীবনের পথে চলতে চাই । তবে কারও কাজে বাধা দিতে চাইনে —নিজের ভার বহন করবার সম্পূর্ণ ক্ষমতা আমার আছে । আমার বাসনাও এত সামান্ত যে, আমার অর্থ সামান্ত হলেও আমার প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ” লভেলের স্কন্ধদেশ হইতে হাত তুলিয়া লইয়া পথের দিকে চাহিয়া ওল্ড কু বলিলেন, “তুমি যখন এমন দার্শনিক যে, তোমার যথেষ্ট টাকাকড়ি আছে ব’লে মনে কর, তখন আর বলবার কিছুষ্ট নেই—তোমাকে উপদেশ দিতে ষা ওয়ার অধিকার ও আমার থাকুতে পারে না। তুমি এখন দৰ্শনতত্ত্বের শীর্ষদেশে পৌছে গেছ । ভবে আত্ম ভাগরূপ দৰ্শন-তত্ত্বের অধকারীর কাছে ফেয়ারপোর্ট কি করে বসবাসের যোগ্য বলে বিবেচিত হল ? এ যেন মিশরের বছমত পৌত্তলিকদিগের মধ্যে একজন প্রক স্ত ধাৰ্ম্মিকের ধৰ্ম্মদণ্ড প্রতিষ্ঠিত করেছে। ফেয়ারপোটে এমন একজনও লোক নেই যে, স্বর্ণধেনুর উপাসক নয় । এমন কি, প্রতিবেশীদের প্রভাবপুষ্ট হয়ে আমার মত লোক ও পৌত্তলিক হয়ে দাড়িয়েছে ।” লভেল বলিলেন, “আমার আমোদ-প্রমোদের প্রধান বস্তু হল—সাহিত্যচর্চা । অবস্থার প্রভাবে প'ড়ে আমি সামরিক ব্যবসায় ত্যাগও করেছি : আমার প্রচেষ্টার অনুসরণে আমি তাই ফেয়ারপোটকে বেছে নিয়েছি ” ওল্ডবক যেন সবই বুঝিয়াছেন, এমনই ভাব প্রকাশ করি বলিলেন, “এখন আমি বুঝতে পারছি, আমার পূৰ্ব্বপুরুষের নীতি-বাক্যটাকে তুমি নিজের কাজে কেন লাগাতে চেয়েছ । তুমি একজন সাহিত্যিক ব'লে মুপরিচিত হতে চাও, আর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বার। লোকের প্রীতিও অর্জন করবার বাসনা মনে পোষণ কর।” বৃদ্ধের আগ্রহাতিশষ্য দেখিয়া লভেল মনে করিলেন যে, বুদ্ধের ভ্রম সংশোধন না করাই সঙ্গত । লভেল তাই বলিলেন, “ঐ রকম একটা চিস্ত মনের মধ্যে পোষণ ক'রে আমি বোকামীরই পরিচয় দিয়াছি বটে।” o