পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৭

শিক্ষিতের ভাষা, সর্বসাধারণের মধ্যে ধর্মপ্রচার ক'রতে সে ভাষার চেয়ে চলিত ভাষাই বেশী কাজে লেগেছিল, তাই বৌদ্ধ বিদুষীদের অধিকাংশ রচনাই পালিতে পাওয়া যায়। থেরী গাথা ছাড়া অন্যত্র যে সব নারীর রচনা পাওয়া যায় তার মধ্যে বুদ্ধপত্নী যশোধরার নাম উল্লেখযোগ্য। সিদ্ধার্থ বুদ্ধত্ব লাভের পর যখন কপিলাবস্তুতে শুদ্ধোধনের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন তখন যশোধরা তার শিশু পুত্র রাহুলকে তার কাছে পাঠিয়ে দেন পিতৃধন চাইবার জন্য, বুদ্ধও তাকে নিজধর্মে দীক্ষা দিয়ে ভিক্ষু ক'রে নে'ন। এই উপলক্ষ্যে একটি পালি কবিতায় যশোধরা ছেলের কাছে তার পিতাকে চেনবার সুবিধার জন্য বুদ্ধের রূপ বর্ণনা করেছেন; তাঁর শুদ্ধ নীল মৃদুকুঞ্চিত কেশ, সূর্যের মতো উজ্জ্বল প্রশস্ত ললাট, চক্রচিহ্নযুক্ত আরক্ত পদতল, সর্বসুলক্ষণাক্রান্ত পুণ্যশরীরের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, “সেই নবীর লোকহিতের জন্য চলে গেছলেন,—সেই পুরুষসিংহই তোমার পিতা।” কবিতাটির মধ্যে পতিপরিত্যক্তা নারীর অভিযোগের বা অশ্রুর চিহ্নমাত্র নেই, পুরুষসিংহেরই উপযুক্ত সিংহিনীর বলিষ্ঠ মনের পরিচয়, তার মহাপুরুষ স্বামীর জন্য অকৃত্রিম শ্রদ্ধা এবং গৌরববোধ লেখাটির প্রতি ছত্রে দেদীপ্যমান।

 থেরী-গাথা ছাড়া হীনযানী বৌদ্ধদের জাতকগুলিতে পালিভাষায় এবং মহাযানী বৌদ্ধদের বোধিসত্ত্বাবদানমালা ও জাতক মালার সংস্কৃত ভাষায় আমরা সে যুগের বহু মহীয়সী নারীর পরিচয় পাই। তাঁদের মধ্যে কাশীরাজ কৃকীর কন্যা মালিনী এবং কুমার কাশ্যপের মায়ের কথা উল্লেখযোগ্য। মালিনীর বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরাগ সনাতনপন্থী কাশীর রাজসভার