পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ও রসতত্ত্ব ১. বিভাৰ, অমুক্তাব, স্থায়িভাব, সঞ্চারিভাৰ নাট্যশাস্ত্রের প্রবক্তা আচার্য ভরত রস’কে সাহিত্যের বীজরুপে বর্ণনা করিয়াছেন। ‘রস’বীজ হইতে কাব্যের উৎপত্তি । আবার ‘রস’ই কাব্যের ফল—কেন না, কাব্যপাঠের পরিসমাপ্তি রসামুভূতিতে, সহৃদয়ের রসচর্বণায় । এই রসের স্বরূপ কি ? রস কাহাকে বলে ? সংস্কৃতে 'রস' ধাতুর অর্থ ‘আস্বাদন, এই 'রস' ধাতু হইতেই ‘রস’-শব্দের উৎপত্তি। স্বতরাং যাহাকে আস্বাদন করা যায়, তাহাই 'রস'। মধুর, অম, কটু, তিক্ত, কষায়, লবণ— এই সকলই ‘রস’, কেন না, বাহ জিহেবন্দ্রিয়ের দ্বারা উহাদিগকে অস্বাদন করা যায়। সেই জন্যই জিহবার অপর নাম ‘রসনা’—কেন না, উহার দ্বারা উপরোক্ত ছয়টি বিভিন্ন রসের আস্বাদন সম্ভবপর হইয়া থাকে, উহা আস্বাদনের করণ (instrument, organ) । সাহিত্য-রসের ক্ষেত্রেও ব্যুৎপত্তি একই । এখানেও সেই আস্বাদনই অর্থ। শুঙ্গার, করুণ, হাস্য, বীভৎস প্রভৃতি 'রস' সমস্তই আস্বাদ্য, কিন্তু বাহ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নহে। সাহিত্যরসের উপযুক্ত রসনেন্দ্রিয় সহৃদয়ের অস্তরিক্রিয়, তাহার অনুভূতিপ্রবণ চিত্ত। সাহিত্যিক ‘রস মধুর প্রভৃতি রসের ন্যায় বহিরিক্রিয়গ্রাহ নহে, উহা আস্তরেন্দ্ৰিয়বেদ্য । উহ! সাহিত্যের অন্তরতম তত্ত্ব, ঔপনিষদিক ব্রহ্মের মত উহার স্বরূপ গুহানিহিত—"নিহিতং গুহা যৎ । ভাষার দ্বারা উহাকে স্পর্শমাত্র করা যায় ; উহার প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটিত হয় কেবল র্তাহারই নিকট, যিনি উহার অপরোক্ষ মানস অনুভূতি লাভ করিতে পারিয়াছেন। এই তো গেল 'রস'-শব্দের ব্যুৎপত্তিগত (etymological) অর্থ। কিন্তু রসাস্বাদের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি কি ? সহৃদয় শ্রোতা, দর্শক বা পাঠক কি করিয়া অভিনয়দর্শনে বা কাব্যপাঠশ্রবণে রসতত্ত্ব অনুভব করিয়া থাকেন ? সেই