বিষয়-শিক্ষা ও ইংরাজিকে স্বতন্ত্র শিক্ষণীয় বিষয়ম্বরূপে গণ্য করা হয় তবে ছাত্রগণ কুতরপে শিক্ষা করিবার অবকাশ পায় এবং শিক্ষাসমাপনের পর স্বদেশের হিতসাধন ও জীবনের মহৎ কর্তব্য -পালনের উপায় তাহাদের নিকট সুগম করিয়া দেওয়া হয়।
বাঙালা-ভাষাশিক্ষাঅভাবে ছাত্রগণ যে বাংলা সমাজের জন্য সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত হইতে পারিতেছে না কেবল তাহাই নহে, তাহাদের নূতন শিক্ষাও সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হইতেছে না। কখনো কখনো আমাদের ইংরাজ শিক্ষকগণ আক্ষেপ করিয়া থাকেন যে, আমাদের শিক্ষিত ব্যক্তিগণ ইংরাজি ও বাংলায় যেসকল প্রবন্ধ রচনা করেন অনেক সময় তাহাতে চিন্তা ও ভাবের অকিঞ্চিৎকরতা লক্ষিত হয়; স্পষ্টই বুঝা যায় আমাদের শিক্ষিত বিষ্ঠাকে আমরা নিজের মনের চিন্তায় পরিণত করিতে কোনো কালে। অভ্যাস করি নাই, সেগুলিকে বলপূর্বক অশ্রুসিক্ত চক্ষে সমগ্র গলাধঃকরণ। করিয়াছি। কিন্তু পরকীয় বিষ্ঠাকে স্বকীয় চিন্তায় পরিণত করিতে হইলে মাঝথানে স্বদেশীয় ভাষা আবশ্যক। বিশ্ববিষ্ঠ্যালয়ের পাকশালায় ছত্রিশ অধ্যাপকে মিলিয়া ছত্রিশ বিদ্যার ব্যঞ্জন রন্ধন করিতে পারেনকিন্তু নিজের হৃৎপিণ্ডের নিকটবর্তী অ্যাজমকালীন পাকযন্ত্রটির মধ্যে তাহাকে পুনঃ পাক করিয়া লইলে তবেই সে যথার্থ আপনার হয়। আমরা রসনায় ইংরাজি বিস্তার বিচিত্র আম্বাদ পাইতেছি সনেহ নাই, কিন্তু যতক্ষণে। তাহা বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের নাড়ীতে নাড়ীতে উত্তপ্ত রক্তরূপে প্রবাহিত না হয় ততক্ষণ সে বিষ্ঠা যে হজম হইয়াছে তাহার কোনে। প্রমাণ নাই।
৯ বঙ্গদর্শনে মূজিত আছে, এই প্রবন্ধ ‘গত জ্যৈষ্ঠ মাসে মজুমদার লাইব্রেরীর অন্তর্গত আলোচনাসমিতির বিশেষ অধিবেশনে পঠিত’। গ্রন্থে বর্জিত শেষ অংশ সাময়িক হইতে সংকলিত হইল”―