পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (অষ্টম ভাগ).pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

be সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা । [ সন ১৩০৮ এইরূপে নবকল্পিত বাঙ্গালী ব্যাকরণে সংস্কৃত উর্দু, পার্স ইত্যাদি অধ্যায় ভেদ থাকিলে 5f'5 °ff3 | প্ৰাকৃত ভাষা সম্বন্ধে এই পৰ্য্যন্ত বলা যায় যে, যে ভাষা সামান্য লোকে বুঝিত, অপভাষা বলিয়াই কেবল যে তাহা নাটকে সামান্য জনের মুখে দেওয়া হইত এমন নহে। কুমারে আছে, শিবপরিণয়ে শিব সংস্কৃতে মন্ত্র পাঠ করিলেন, আর পাৰ্ব্বতীকে প্ৰাকৃত মন্ত্র পড়ান বা বুঝান হইল । সুতরাং যাহা সাধারণের বোধ সৌকর্য্যার্থে ব্যবহৃত হওয়া আবশ্যক, তাহ প্ৰাকৃত হওয়াই উচিত । সেই জন্যই বুদ্ধদেব তৎকাল প্ৰচলিত পালি ভাষায় ধৰ্ম্মোপদেশ দানের ব্যবস্থা করেন। এখন আমাদের বাঙ্গালা ভাষাকে সাপারণবোপ্য করিতে হইলে ইহার সংস্কৃতত্ব হ্রাস করা অবশ্যক হইবে । শব্দ ত্যাগ করিতে বলিতেছি না । শব্দের ব্যবহার, পদ ও বাক্য গঠনাদির ব্যবস্থা প্ৰাকৃতভাবে হওয়াই উচিত । আজ ও কাজ সম্বন্ধে পাড়ে মহাশয় যে “জ” এর সাদৃশ্য দেখাইয়া আজ ও কাজ শব্দ উৎপাদনের প্রতি হঙ্গিত করিয়াছেন, তাহা ঠিক নহে ৷ প্ৰাকৃত ভাষার “য” এর প্রয়োগ যত বেশী, তত “জ” এর নহে ; সুতরাং কাৰ্য্য হইতে কাজ করিবার জন্য প্ৰাকৃত ভাষায় “য” ত্যাগ করিবার কারণ “য” এর অভাব নহে এবং সেই অভাবকে মূল ধরিয়া বাঙ্গালায় “কাজ” লিখিতেও যে “য” বাদ দেওয়া হয় তাহা নহে। মিশ্রধাতু সম্বন্ধে পাড়ে মহাশয় যে অর্থ করিলেন, ওরূপ অর্থ কেহ করে না।” “মরিয়া গেল”-এখানে “গেল” গমনার্থক নগে, ইহা ক্রিয়ার সমাপ্তিসূচক অংশমাত্র। ঐ অংশের অর্থ ওরূপ নহে। অতঃপর শ্ৰীযুক্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত এম, এ, বি, এল মহাশয় বলিলেন, বাঙ্গালা ব্যাকরণ সম্বন্ধে শাস্ত্রী মহাশয় যাহা বলিলেন, তাহা সুন্দর সুযুক্তিপুর্ণ এবং মনোজ্ঞ । তাহার মতামতের বিরুদ্ধে বলিবার আমার কিছু নাই। তাহার প্রবন্ধ শুনিয়া যাহারা সমালোচনা করিলেন, তাহাদিগের কয়েকটি কথা সম্বন্ধে আমার কিছু বক্তব্য আছে । কোন কোন বক্তার কথায় বোধ হইল, তাহারা ভাষাকে ব্যাকরণের নিয়মনিগড়ে শৃঙ্খ- , লিত করিতে একান্ত ইচ্ছুক। ইহা সম্পূর্ণ ভুল। ভাষার স্রোতকে ব্যাকরণের বাঁধ দিয়া বাধিতে চেষ্টা করা আমার বোধ হয় ঐরাবতের গঙ্গাস্রোতরোধ চেষ্টার মত উপহাসাম্পদ । আমার বিশ্বাস উহা মানুষের ক্ষমতায় হয় না । ব্যাকরণের অতীত ইতিহাস আলোচনা করিলে বুঝা যায় যে, ভাষাকে নিয়ন্ত্রিত করা ব্যাকরণের উদ্দেশ্য নহে-ভাষার বিদ্যমান অবস্থা বুঝাইয়া দেওয়াই ব্যাকরণের কাৰ্য্য। দুটি প্রাচীন ভাষার উদাহরণ দিতেছি । প্রথমতঃ দেখুন সংস্কৃত ভাষা, যে ভাষার ভিত্তির উপর বাঙ্গালা ব্যাকরণ গঠিত করার প্রস্তাব হইয়াছে, সেই ভাষার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাহার ব্যাকরণও কত পরিবৰ্ত্তিত হইয়াছে। বৈদিকযুগে সংস্কৃত ভাষার যে আকার ছিল, কালে বৈদিক ভাষার সে আকার পরিবৰ্ত্তিত হইল । যখন বৈদিক ভাষা সংস্কৃত আকার ধারণ করিল, তখন ভাষার প্রকৃতি ও অবস্থা এবং বৈদিক ভাষার সহিত