পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (অষ্টম ভাগ).pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন। ১৩০৮ ] বঙ্গীয়-সাহিত্য পরিষদের কাৰ্য্যবিবরণ। S/o প্ৰভেদ দেখাইবার জন্য পাণিনি জগতের শ্রেষ্ঠতম ব্যাকরণ রচিত করিলেন-ভঁাহার ব্যাকরণের সর্বত্র দেখান হইয়াছে, “ছন্দসি ভাষায়াং” এইরূপ । তাহাতেও সংস্ক ত ভাষা নিগড়িত হইল না, তাহার স্বাধীনগতি থামিল না ! ক্ৰমে পরিবৰ্ত্তিত হইয়া তাহার যে অবস্থা দাড়াইল তাহা যথাযথ বুঝাইতে পাণিনিসূত্রে কুলাঙ্গতে পারলেন না। কাত্যায়ন তখন বাৰ্ত্তিক রচনা করিয়া পাণিনির সুত্ৰকে সময়োচিত করতে অগ্রসর হইলেন । কাত্যায়নের বাৰ্ত্তিককে যদি সমসাময়িক স্বীকার করা যায় তাহা হইলে মানতে হয়, যে শ্রেষ্ঠ বৈয়াকরণ পাণিনির সুত্রের ভ্ৰম প্ৰমাদ সংশোধন জন্য তিনি বাৰ্ত্তিক রচনা করিয়াছিলেন । ইহা সন্তব্য নহে । নতুবা বলিতে হয়, পাণিনির পরে ভ{যায় যে পরিবত্তিত অবস্থা হইয়াছিল। তাহা দেখাইবার জন্য বাৰ্ত্তিক কার পাণিনির সুত্রে নূতন সুত্ৰ যোজনা করিয়া দিয়াছিলেন। গ্ৰীক ভাষার ব্যাকরণ পূৰ্ব্বে ছিল না। রোমকেরা যখন গ্রীসৃ জয় করে, তখন রোমকেরা গ্রীস্ সাহিত্যের মনোহারি তায় মুগ্ধ হয়। উহাতে তাঁহাদের প্রবেশলাভের জন্য গ্ৰীক বৈয়াকরণ ণের গ্ৰীক ব্যাকরণ প্ৰস্তুত করে । ভাষাকে নিয়ন্ত্রি ত বা নিগড়িত করিবার জন্য গ্ৰীক ব্যাকরণ রচিত হয় নাই । সেইরূপ আমাদের বাঙ্গালা ভাষার ব্যাকরণ র্যাহারা গড়িতে যাইবেন, তঁহাদের ইহা মনে রাখা উচিত, যে তাহারা ভাষায় যাহা আছে, তাহারই প্ৰয়োগ প্ৰকৃতি গঠন প্ৰণালীর নিয়মাদি কিরূপ তাহা ব্যাখ্যা করিবেন মাত্র, কেহ কিছু গাড়বেন না । আজ অনেকেই সংস্কৃত ও বাঙ্গালা কারকের বিভক্তি লইয়া অনেক আলোচনা করিয়াছেনি। আমার বোধ হয় তাহারা একটী কথা অনুধাবন করেন নাই । ভাষা বিজ্ঞানে যাহাকে Postposition পর নিপাত বলে, বাঙ্গালা 'ভাষায় সেইরূপ কতকগুলি আছে। ‘হইতে, দ্বারা, থেকে’ প্ৰভৃতির কারকের বিভক্তিব্যুৎ ব্যবহার হয়। সংস্কৃতের সেইরূপ হয় না । অন্য ভাষার উদাহরণ দিলে| কথাটা ভাল বুঝা যাইবে । ইংরাজিতে যেমন কারকার্থ প্ৰকাশক of, to, in, প্ৰভৃতি শব্দের পুর্বনিপাত হয়—যথা সেইরূপ বাঙ্গালায় হইতে’ “থেকে’, ‘দ্বারা’, প্ৰভৃতির পর নিপাত হয়,- যেমন ছাদ হইতে জল পড়িতেছে। সংস্কৃত বঙ্গ ভাষার আদি জননী বলিয়া যাহারা বাঙ্গালা ব্যাকরণ সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে গড়িতে চাহেন, তঁহাদের একটা বিষয়ে দৃষ্টি রাখা উচিত। ফরাসী, ইতালীয় প্রভৃতি ইউরোপীয় ভাষা, লাটিন ভাষা হইতে উৎপন্ন হইলে ও কাহারও ব্যাকরণ লাটিন ব্যাকরণের অনুসারে গঠিত নািহ । সমস্ত মানবজাতি মনুর অপত্য বলিয়া যদি ইউরোপীয় ও ভারতীয় জাতিকে কেহ এক বলিতে চাকুন, তাহা যেমন ভুল হয়, হিন্দী, বাঙ্গালা, উড়িয়া, সংস্কৃত ভাষা হহঁতে উৎপন্ন বলিয়া সংস্কৃতের সহিত এক বলাও সেইরূপ ভুল । সত্য বটে। এই সকল ভাষা সংস্কৃতের রূপান্তর, কিন্তু উভয়ের মধ্যে এত অন্তর যে তাহাকে হোমিওপ্যাথিক ডাইলিউসন হিসাবে এক বলা যায় মাত্র । র্যাহারা শিক্ষার দোহাই দিয়া বা বিভিন্নদেশবাসী লোকের মধ্যে ভাষার একত্ব সাধন দ্বারা একতা