পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
সিরাজদ্দৌল্লা।

 সিরাজদ্দৌলার অসন্তোষের প্রকৃত কারণ কি, তাহা ইংরাজদিগের মধ্যে কাহারও নিকট অপরিজ্ঞাত ছিল না। ইংরাজের দোষক্ষালনের জন্য ইতিহাসপৃষ্ঠায় যাহাই লিখিত হউক, পদাশ্রিত বণিক হইয়া নবাবের ইচ্ছা এবং আদেশের প্রতিকুলে দুর্গসংস্কারে হস্তক্ষেপ করিয়া ইংরাজেরা যে যথেষ্ট পরিমাণে উদ্ধত স্বভাবের পরিচয় দিয়াছিলেন, সে বিষয়ে কাহারও সন্দেহ হইতে পারে না। কলিকাতার ইংরাজ দরবার যে এই সামান্য কথাটি একেবারেই বুঝিতেন না, তাহা বলিতে গেলে সত্যের অপলাপ করা হয়। তাঁহারা জানিতেন, বুঝিতেন, এবং ইহাও বিশ্বাস করিতেন যে, সরলভাবে অনুমতি ভিক্ষা করিলে ইংরাজ-বিদ্বেষী সিরাজদ্দৌলা কস্মিকালেও ইংরাজদিগকে দুর্গসংস্কারের অনুমতি প্রদান করিবেন না। সুতরাং তাঁহার জানিয়া শুনিয়াই সিরাজদ্দৌলার মুখাপেক্ষা করিতে সম্মত হন নাই। ইহাতে ইতিহাসের বিচারে ইংরাজকেই অপরাধী হইতে হইবে।

 সিরাজদ্দৌলা অরণ্যে রোদন করিলেন;—না ওয়াটস্ সাহেব, না কলিকাতার ইংরাজ-দরবার,—কেহই সে কথার সদুত্তর প্রদান করিলেন। সিরাজদ্দৌলা “উদ্ধত প্রকৃতির আশ্বস্ত যুবক” হইলে তৎক্ষণাৎ মহান্ অনর্থ উৎপন্ন হইতে বিলম্ব ঘটিত না। কিন্তু সিরাজদ্দৌলা মর্ম্মপীড়িত হইয়াও আত্ম-সংযম করিলেন। যে দুর্দ্দমনীয় হৃদয়রেগ সিরাজদ্দৌলাকে যৌবনে অশেষ পাপপঙ্কে টানিয়া লইতেছিল, সিংহাসনে আরোহণ করিবামাত্র সে হৃদয়বেগ অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছিল; নচেৎ ক্ষুদ্রজীবী ইংরাজ-গোমস্তা ওয়াটস সাহেবকে লাঞ্ছনা করিতে কতক্ষণ? সিরাজদ্দৌলা তাঁহাকে আর কোন কথাই বলিলেন না;—সাক্ষাৎভাবে