পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
৪৭

করিলেন। সীতা, বামে ও দক্ষিণে, পরম রমণীয় প্রদেশ সকল নয়নগোচর করিয়া, যার পর নাই প্রীতিলাভ করিতে লাগিলেন। পূর্ব্ব দিন, তাঁহার যেরূপ উৎকণ্ঠা ও অসুখসঞ্চার হইয়াছিল, তাহার কোনও লক্ষণ লক্ষিত হইল না।

 অবশেষে, রথ ভাগীরথীতীরে উপস্থিত হইল। ভাগীরথীর অপর পারে লইয়া গিয়া, সীতাকে, এ জন্মের মত, বিসর্জন দিয়া আসিতে হইবে, এই ভাবিয়া, লক্ষ্মণের শোকসাগর অনিবার্য্য বেগে উচ্ছলিত হইয়া উঠিল। আর তিনি ভাবগোপন বা অশ্রুবেগ সংবরণ করিতে পারিলেন না। সীতা, দেখিয়া, সাতিশয় বিষন্ন হইয়া, জিজ্ঞাসিলেন, বৎস, কি কারণে তোমার, এরূপ ভাব উপস্থিত হইল, বল। তখন লক্ষ্মণ নয়নের অশ্রুমার্জ্জন করিয়া বলিলেন, আর্য্যে, আপনি ব্যাকুল হইবেন না; বহু কালের পর, ভাগীরথীর দর্শনলাভ করিয়া, আমার অন্তঃকরণে কেমন এক অনির্বচনীয় ভাবের উদয় হইয়াছে; তাহাতেই অকস্মাৎ আমার নয়নযুগল হইতে বাষ্পবারি বিগলিত হইল। আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা কপিলশাপে ভস্মাবশেষ হইয়াছিলেন; ভগীরথ কত কষ্টে, গঙ্গা দেবীকে ভূমণ্ডলে আনিয়া, তাঁহাদের উদ্ধারসাধন করেন। বোধ হয়, তাহাই ভাগীরথীদর্শনে স্মৃতিপথে আরূঢ় হওয়াতে, এরূপ চিত্তবৈকল্য উপস্থিত হইয়াছিল। সীতা একান্ত মুগ্ধস্বভাব ও নিতান্ত সরলহৃদয়া;