পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনেক বড়ো, তাকে ওরকমভাবে আসতে দেখেই আমরা বুঝলাম এবার একটা কাণ্ড হবে। মোহন এসেই বলল, “কেষ্টা কই?” কেষ্টা দূর থেকে তাকে দেখেই কোথায় সরে পড়েছে, তাই তাকে আর পাওয়া গেল না। তখন নবীনচাঁদ বলল “ঐ দাশুটা সব জানে, ওকে জিজ্ঞেসা কর।” মোহন বলল, “কিহে ছোকরা, তুমি সব জান নাকি?” দাশু বলল, “না, সব আর জানব কোথেকে—এই তো সবে ফোর্থ ক্লাশে পড়ি, একটু ইংরিজি জানি, ভূগোল, বাংলা, জিওমেট্‌রি-” মোহনচাঁদ ধমক দিয়ে বলল, “সেদিন নবুকে যে কারা সব ঠেঙিয়েছিল, তুমি তার কিছু জান কি না?” দাশু বলল, “ঠ্যাঙায় নি তো—মেরেছিল, খুব আস্তে মেরেছিল।” মোহন একটুখানি ভেংচিয়ে বলল, “খুব অস্তে মেরেছে, না? কতখানি আস্তে শুনি তো?” দাশু বলল, “সে কিছুই না—ওরকম মারলে একটুও লাগে না।” মোহন আবার ব্যঙ্গ করে বলল, “তাই নাকি? কিরকম মারলে পরে লাগে?” দাশু খানিকটা মাথা চুলকিয়ে তার পর বললে, “ঐ সেবার হেডমাস্টার মশাই তোমায় যেমন বেত মেরেছিলেন সেইরকম।” এ কথায় মোহন ভয়ানক চটে দাশুর কান মলে দিয়ে চীৎকার করে বলল, “দ্যাখ বেয়াদব। ফের জ্যাঠামি করবি তো চাবকিয়ে লাল করে দেব। তুই সেখানে ছিলি কি না। আর কিরকম কি মেরেছিল সব খুলে বলবি কি না?”

 জানই তো দাশুর মেজাজ কেমন পাগলাটেগোছের, সে একটুখানি কানে হাত বুলিয়ে তার পর হঠাৎ মোহনচাঁদকে ভীষণভাবে আক্রমণ করে বসল। কিল, ঘুষি, চড়, আঁচড়, কামড়, সে এমনি চট্‌পট্ চালিয়ে গেল যে আমরা সবাই হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। মোহন বোধ হয় স্বপ্নেও ভাবে নি যে ফোর্থ ক্লাশের একটা রোগাছেলে তাকে অমনভাবে তেড়ে আসতে সাহস পাবে—তাই সে একেবারে থতমত খেয়ে কেমন যেন লড়তেই পারল না। দাশু তাকে পাঁচ সেকেণ্ডের মধ্যে মাটিতে চিৎপাত করে ফেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “এর চাইতেও ঢের। আস্তে মেরেছিল।” এনট্রাস ক্লাশের কয়েকটি ছেলে সেখানে দাঁড়িয়েছিল। তারা যদি মোহনকে সামলে না ফেলত, তা হলে সেদিন তার হাত থেকে দাশুকে বাঁচানোই মুস্কিল হত।

 পরে এ কদিন কেষ্টাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “হাঁরে, নবুকে সেদিন তোরা অমন করলি কেন?” কেষ্টা বলল, “ঐ দাশুটাই তো শিখিয়েছিল ওরকম করতে। আর বলেছিল, “তা হলে এক সের জিলিপি পাবি।” আমরা বললাম, “কই, আমাদের তো ভাগ দিলি নে?” কেষ্টা বলল, “সে কথা আর বলিস কেন? জিলিপি চাইতে গেলুম, হতভাগা বলে কিনা ‘আমার কাছে কেন? ময়রার দোকানে যা, পয়সা ফেলে দে, যত চাস জিলিপি পাবি।”

 আচ্ছা, দাশু কি সত্যি সত্যি পাগল, না, কেবল মিচ্‌কেমি করে?

সন্দেশ-চৈত্র, ১৩২৪


কালাচাঁদের ছবি।

 কালাচাঁদ নিধিরামকে মারিয়াছে—তাই নিধিরাম হেডমাস্টার মহাশয়ের কাছে নালিশ করিয়াছে। হেডমাস্টার আসিয়া বলিলেন, “কি হে কালাচাঁদ, তুমি নিধিরামকে

১৩২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২