পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সরিয়া পড়িত। কিন্তু তাহা হইবার জো নাই; সুর্যের আকর্ষণীশক্তি তাহাকে বেশ মজবুত করিয়া টানিয়া রাখিয়াছে এবং পৃথিবীও অগত্যা বাধ্য হইয়া সূর্যের চারিদিকে ঘোরপাক খাইতেছে। পৃথিবী ছাড়া আরো কতকগুলি প্রকাণ্ড গোলক সুর্যের চারিদিকে ঘুরিতেছে। এইগুলিকে গ্রহ বলে। এই গ্রহগুলির মধ্যে আবার কয়েকটির সঙ্গী বা উপগ্রহ আছে। এই উপগ্রহগুলির কাজ গ্রহের চারিদিকে ঘোরা। যেমন পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ। এই-সকল গ্রহ, উপগ্রহ এবং অনেক উঙ্কা ও ধূমকেতু ইত্যাদি লইয়া সূর্যের রাজ্য।

 রাজ্যের কর্তা সূর্য; সুতরাং তাহার খবরটা আগে লওয়া আবশ্যক। আমরা এখান হইতে সূর্যকে একটা উজ্জ্বল গোলার মতো দেখি। আর সেটা যে নিতান্ত ঠাণ্ডা নয়, তাহাও বেশ বুঝিতে পারি। সূর্য এখান হইতে নয় কোটি মাইলেরও বেশি দূরে। কিন্তু এত বড়ো সংখ্যা আমাদের কল্পনায় আসে না। আলো এত দ্রুত চলে যে, এক সেকেণ্ডে সাতবার পৃথিবীর চারিদিকে পাক দিয়া আসিতে পারে। কিন্তু তবু সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসিতে সাড়ে সাত মিনিট সময় লাগে। সুর্যটা যে খুবই মস্ত, তাহা না বলিলেও চলে। তেরো লক্ষটা পৃথিবী একত্র করিলে তবে সূর্যের সমান বড়ো একটা গোলক তৈয়ারি হইতে পারে।

 আমরা সূর্যের যতটুকু দেখি, উহাই তাহার সমস্ত নহে। উহা ছাড়া তাহার চর্তুদিকে জ্বলন্ত বাষ্পের একটা আবরণ বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়া আছে। কিন্তু সেটা তত উজ্জ্বল নহে বলিয়া সুর্যের প্রখর তেজে আমরা তাহার কিছুই দেখিতে পাই না। সূর্যের যখন পূর্ণ গ্রহণ হয়, অর্থাৎ চন্দ্র যখন সুর্যের ও আমাদের পৃথিবীর মাঝে আসিয়া সুর্যকে একেবারে ঢাকিয়া ফেলে, তখন এই বাষ্পীয় আবরণ অতি চমৎকার দেখায়। এইজন্যে জ্যোতির্বিদ পণ্ডিতেরা পূর্ণগ্রহণ দেখিবার সুযোগ ছাড়েন না। আজকাল বর্ণবীক্ষণ যন্ত্রের (Spectoscope) সাহায্যে দিবালোকেই এ-সকল বিষয়ের চর্চা করা সম্ভব হইয়াছে। সূর্য যেরূপ প্রচণ্ড তেজে জ্বলিতেছে, তাহা আমাদের কল্পনা করা অসম্ভব। তাহার গরমের তুলনায় আমাদের কয়লার আগুন তো ঠাণ্ড। সেখানে আগুনের ঝড় ঘূর্ণীপাকের মতো অনবরত ঘুরিতেছে। সেই ফুটন্ত সমুদ্র তোলপাড় করিয়া অবিশ্রান্ত অগ্নিপ্রবাহ চলিতেছে। জ্বলন্ত শিখা চারিদিকে রক্তজিহ্বার ন্যায় লাফাইয়া উঠিতেছে এবং দেখিতে দেখিতে শতসহস্র মাইল ছড়াইয়া পড়িতেছে।

 প্রধান গ্রহের সংখ্যা আটটি; চারিটি বড়ো, আর চারিটি ছোটো। আমাদের পৃথিবী কনিষ্ঠ গ্রহের মধ্যে গণ্য। সূর্যের নিকটতম গ্রহের নাম বুধ, তাহার পর শুক্র, তাহার পরে পৃথিবী, তাহার পরে মঙ্গল—এই চারিটিই ছোটো গ্রহ। ইহার মধ্যে পৃথিবীই সর্বাপেক্ষা বড়ো; শুক্র প্রায় পৃথিবীর সমান, মঙ্গল পৃথিবীর আট ভাগের এক ভাগ এবং বুধ পৃথিবী ও চন্দ্রের মাঝামাঝি। মঙ্গল সকল সময় সূর্যের কাছে কাছেই ফিরে সুতরাং তাহার সাক্ষাৎ পাওয়া সচরাচর ঘটে না। শুক্র অথবা শুকতারা যখন সর্যোদয়ের পর্বে পৰ্বদিকে অথবা সর্যাস্তের পর পশ্চিমদিকে ঝলমল করিতে থাকে তখন তাহার উজ্জ্বল জ্যোতির কাছে সকল গ্রহ নক্ষতই ম্লান বোধ হয়। শুধু চোখে মঙ্গল গ্রহকে একটা লালচে রঙের তারার মতো বোধ হয়। এই গ্রহের সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য কথা জানিবার আছে। ইহার উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কাছে সাদা বরফ দেখা যায় এবং সেই বরফ গ্রীষ্মকালে কমে ও শীতকালে বাড়ে

২৯৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২