পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যাচ্ছে।” তারপর সে আবার বেঁটে হয়ে, ঘোড়ার লাগাম ধরে পথ দেখিয়ে চলতে লাগলো। খানিকদূর গিয়ে বলল, “ঐ যে আমার বন্ধু যাচ্ছে। ওকে ধরে নিয়ে আসি।” বলেই সে চট করে আকাশের মতো লম্বা হয়ে গেল আর এয়া লম্বা দই পা ফেলে তার বন্ধুর কাছে গিয়ে উপস্থিত হলো। তারপর আর কোন কথাবার্তা না বলে তাকে হাতে ধরে উঠিয়ে নিয়ে রাজপুত্রের কাছে চলে এলো। বন্ধুটির বেশ ষণ্ডামার্কা চেহারা। রাজপুত্র জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি? আর কিই-বা করতে পারো তুমি?” লোকটি বলল, “আমি ভোঁদারাম। আমি নিজেকে ফুলিয়ে প্রকাণ্ড বড় হয়ে যেতে পারি। কিন্তু এই বেলা ঘোড়া ছটিয়ে পালাও, নইলে আমি এত তাড়াতাড়ি ফুলে উঠবো যে ভারি বিপদে পড়বে। এই বলেই সে ফুটবলের মতো ফুলতে আরম্ভ করলো। ঢ্যাঙারাম তো আগেই দৌড় দিয়েছে। রাজপুত্রও দেখাদেখি ঘোড়া ছটিয়ে সরে পড়তে লাগলেন। ফুলে ফুলে পাহাড়ের মতো বড় হয়ে ভোঁদারাম হঠাৎ আবার ছোট হতে আরম্ভ করলো; পেটে যত বাতাস ভরেছিল সব ছেড়ে দিতে তার মুখ থেকে এমনি জোরে বাতাস ছুটতে লাগলো যে ঝড়ের বাতাস কোথায় লাগে! তা দেখে রাজপুত্র বলল, “বেশ, এমন লোক সচরাচর মেলে না। তুমি আমাদের সঙ্গে চল।” এই বলে তারা তিনজনে এগুতে লাগল।

 খানিকদূর গিয়ে রাজপুত্র দেখল একটি লোক চোখে পট্টি বেঁধে রাস্তা দিয়ে চলেছে। ঢ্যাঙারাম বলল, “ঐ আমাদের আরেক বন্ধু।” রাজপুত্র সে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কে হে? অমন করে যে চোখ বেঁধে রাস্তা দিয়ে চলেছ, পথ দেখবে কেমন করে?”

 লোকটি বলল, “আমার নাম আগুনচোখ। তোমরা খোলা চোখে যা দেখ, আমি চোখ বেঁধে রাখলেই তা দেখতে পাই। খোলা চোখে দেখলে যত মোটা জিনিসই হোক না কেন, তার এপার-ওপার স্পষ্ট দেখতে পাই। ভালো করে কোন জিনিসের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে সেটা হয় হাজার টুকরো হয়ে ভেঙে যায়, নাহয় পড়ে ছাই হয়ে যায়।” এই বলেই সে চোখের বাঁধন খুলে সামনের একটা পাহাড়ের দিকে কটমট করে চেয়ে রইলো। দেখতে দেখতে পাহাড়টা ফেটে, ভেঙে চুরমার হয়ে একটা বালির ঢিপি হয়ে গেল, আর তার ভিতর থেকে একতাল সোনা বের হলো। আগুনচোখ সেই সোনার তালটা রাজপুত্রকে দিল।

 রাজপত্র খুব খুশি হয়ে বলল, “দেখ তো সেই রাজকন্যা কি করছেন, কোথায় তিনি আছেন, আর এখান থেকে কত দূর?”

 আগুনচোখ বলল, “ঐ যে তিনি একলা সেই লোহার বাড়িতে বন্ধ হয়ে বসে বসে কাঁদছেন। ওঃ সে যে অনেক লম্বা রাস্তা। এমনি করে ঘোড়ায় চড়ে গেলে যে এক বছরেও সেখানে পৌছতে পারবে না। অবশ্য ঢ্যাঙারাম যদি নিয়ে যায় তবে সন্ধ্যার আগেই সেখানে পৌঁছে যাব।” অমনি ঢ্যাঙারাম আর তিনজনকে কাঁধে নিয়ে রওনা হলো। সন্ধ্যার সময় সেই লোহার বাড়ির দরজায় তারা পৌঁছে দেখল দরজা খোলা রয়েছে। তাই দেখে যেই তারা ভিতরে ঢুকেছে, অমনি দরজা দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল আর তারা সেই বাড়ির মধ্যে বন্দী হয়ে গেল। তখন আর কি করে—তারা এদিকে-ওদিকে ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগল। চারদিকে অনেক লোকজন, তাদের খুব জমকালো পোশাক, কিন্তু কেউ নড়ে চড়ে না—সব যেন পাথর হয়ে রয়েছে।

 বাড়ির চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে তারা খাবার ঘরে এসে উপস্থিত। সেখানে

দেশ-বিদেশের গল্প
১১৫