পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રોઝ স্বদেশ অবকাশ কেহ কীড়িয়া লইতে পারে না। গ্রীক হউক,আরব হউক, চৈন হউক, সে জঙ্গলের ন্যায় কাহাকেও আটক করে না, বনস্পতির ন্যায় নিজের তলদেশে চারি দিকে অবাধ স্থান রাখিয়া দেয় ; আশ্রেয় লইলে ছায়া দেয়, চলিয়া গেলে কোনো কথা বলে না । এই একাকিত্বের মহত্ত্ব যাহার চিত্ত আকর্ষণ করে না সে ভারতবর্ষকে ঠিকমত চিনিতে পারিবে না। বহু শতাব্দী ধরিয়া প্রবল বিদেশী উন্মত্ত বরাহের ন্যায় ভারতবর্ষকে এক প্রান্ত হইতে আর-এক প্রান্ত পর্যন্ত দন্ত দ্বারা বিদীর্ণ করিয়া ফিরিয়াছিল ; তখনো ভারতবর্ষ আপন বিস্তীর্ণ একাকিত্ব দ্বারা পরিরক্ষিত ছিল ; কেহই তাহার মর্মস্থানে আঘাত করিতে পারে নাই। ভারতবর্ষ যুদ্ধবিরোধ না করিয়াও নিজেকে নিজের মধ্যে অতি সহজে স্বতন্ত্র করিয়ারাখিতে জানে; সেজন্য এ পর্যন্ত অস্ত্রধারী প্রহরীর প্রয়োজন হয় নাই । কর্ণ যেরূপ সহজ কবচ লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, ভারতবর্ষীয় প্রকৃতি সেইরূপ একটি সহজ বেষ্টনের দ্বারা আবৃত, সর্বপ্রকার বিরোধবিপ্লবের মধ্যেও একটি দুর্ভেদ্য শান্তি তাহার সঙ্গে সঙ্গে অচলা হইয়া ফিরে ; তাই সে ভাঙিয়া পড়ে না, মিশিয়া যায় না, কেহ তাহাকে গ্রাস করিতে পারে না, সে উন্মত্ত ভিড়ের মধ্যেও একাকী বিরাজ করে । যুরোপ ভোগে একাকী, কর্মে দলবদ্ধ। ভারতবর্ষ তাহার বিপরীত। ভারতবর্ষ ভাগ করিয়া ভোগ করে, কর্ম করে একাকী। যুরোপের ধনসম্পদ আরামস্থখ নিজের । কিন্তু তাহার দানধ্যান স্কুলকলেজ ধৰ্মচর্চা বাণিজ্যব্যবসায় সমস্ত দল বাধিয়া । আমাদের সুখসম্পত্তি একলার নহে ; আমাদের দান ধ্যান অধ্যাপন আমাদের কর্তব্য একলার । এই ভাবটাকে চেষ্টা করিয়া নষ্ট করিতে হইবে এমন প্রতিজ্ঞা করা কিছু নহে ; করিয়া ও বিশেষ ফল হয় নাই, হইবেও না। এমন-কি, বাণিজ্যব্যবসায়ে প্রকাও মূলধনএক জায়গায় মস্ত করিয়া উঠাইয়া তাহার