পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भेिलन-ब्रांख्रि থাfমরা অতি মৃদুস্বরে এই কয়েকটি কথা উচ্চারণ করিতে না করিতে, বিজন নিজেই রাজার নিকট আসিয়া নতশির হইয়া কহিল,—“আমিই রাজাবাহাদুর ভুল ক’রে রাজকন্যাকে আহত করেছি। ধা দণ্ড দেবেন, আপনি দিন ।” রাজার অনুমান তবে সত্য ? স্বজন রায়ের চক্রান্তেই তাছার প্রাণাধিক কন্যার জীবনসংশয়। রাজার হৃৎপিণ্ড-নির্গত রক্তস্রোত উৎক্ষিপ্ত হইয়া মস্তিষ্ক আলোড়িত করিতে লাগিল। দুই হাতে মাথা চাপিস্থা ধরিয়া, উঠিয়া দাড়াইয়া বেদনাগম্ভীর স্বরে তিনি বলিলেন, “ছা রে হতভাগ্য মাতৃহস্তারক। দেশমঙ্গলের জন্ত যে মাতা তার সুখশান্তি সৰ্ব্বস্ব পণ করেছেন, তাকে তুই হত্যা করলি। এর দও আমি কি দেব ? এর সমুচিত দণ্ড এ জগতে নেই ; অন্য জগতে আছে কি না, জানি না। যা দুর্জন, তুই চলে যা ।” বিজন মৌন হইয়া রহিল। তাহার বুকে যে জ্বালা জ্বলিতেছিল, রাজার তিরস্কার-জালা হইতেও তাহা প্রখর প্রচণ্ড । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী সকাতর অস্থনয়ে বলিয়া উঠিলেন, “বাবা, মাপ কয়ো বিজন দাকে । অমৃতপ্ত আশ্রিতজনকে তাড়িয়ে না। আশ্রয় দিয়ে তাকে খুপথে চালিত করে ।” রাজা তখন শোকাকুল, এ কথা তিনি শুনিলেন ; কিন্তু মৰ্ম্মে প্রবেশ করিল কি না, বোঝা গেল না । হৃদয়বিদারক স্বরে তিনি কঞ্চিলেন, “হায় হায় ! সব ব্যর্থ। রাণীর আমার এত আশা, আকাঙ্ক্ষণ, উদ্যম, কল্পনা--সব বৃথা ! সব ব্যর্থ।” জ্যোতিৰ্ম্মী মোহজড়িত কণ্ঠে বলিলেন,—“কেন বলছ বাবা তুমি অমন ক’রে ? আমার কষ্ট হচ্ছে।” বলিতে বলিতে রাজকন্তার সাশ্র নয়ন বুজিস্থা আসিল । রাজা মুহূৰ্ত্তকাল নীরব হইয়া রছিলেন ; তাহার পর কন্যার মাথায় হাত রাখিয়া মুদ্রিত ময়নে আবার বলিয়া উঠিলেন, “স্থষ্টির মধ্যে যা কিছু ভাল, —যা কিছু উৎকৃষ্ট, তাই দিয়ে যে স্বয়ং বিধাতাপুরুষ তোকে গড়ে তুলেছিলেন ! মুন্দর স্বরূপ মূৰ্ত্তিখানির মধ্যে আকাশের মতই প্রেমদীপ্ত সুবিশাল হৃদয় লুকিয়ে ছিল তোমার ! কুসুমকোমল ঐ লক্ষ্মীশ্ৰীতে স্বৰ্য্য তার মঙ্গল জ্যোতি, বিদ্যুৎ তার তেজঃশক্তি ঢেলে দিয়েছিলেন । আমার ত তোমাকে মানুষ করতে হয় মি—তুমিই মাতৃস্নেহে আমাকে মানুষ ক'রে তুলেছিলে! ওগো স্নেহমী মা আমার ! হায় হায় ! সবই ব্যর্থ হোল । সম্লতানের থড়েগ বিধাতার في 6 ذ চমৎকার রচনা অকালে চক্ষুর নিমিষে নষ্ট হয়ে গেল রে, হায় হায় ।” রাজকন্যার নয়ন তেমনই নিমীলিত রহিল ; মোহঘোরেই তিনি একবার ফু পাইয়া উঠিলেন। শরৎকুমার অএ মুছিয়া রাজীকে বলিলেন,—“আপনি এমন অধীর হ'লে ত চলবে না । একে ত বাচাতে হবে, উঠুন, চলুন, এইবার ঘরে নিক্সে ধাই।” রাজা নিরাশা-ব্যাকুল স্বরে বলিলেন,—“পারবে তুমি ? বাঁচাতে পারবে ডাক্তার ? না না, সে আশা কোরো না । হায় হয়, সব ব্যর্থ,--আশা-বাসন সব বৃথা ! সয়তানের নিদারুণ খড়গ যে ভগবানের ইচ্ছাকে ভেঙে চুরমার ক’রে দিয়েছে—তুমি পারবে ? পারবে না ডাক্তার - পারবে না, স্বর্গের ধনকে তুমি মৰ্ত্ত্যরাজ্যে বেঁধে রাখতে পারবে না ! স্বয়ং বিধাতাপুরুষ হার মেনেছেন, আর তুমি পারবে ? হায় হায়, সব ব্যর্থ সব চুরমার!” শরৎকুমার হাত দিয়া অশ্রু উথলিত আনত মুখ ঢাকিলেন । মহাত্মাজীও এই শোকদৃশ্বে অভিভূত হইয়া স্তব্ধভাবে পাশে দাড়াইয়া ছিলেন। শক্তি সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া এতক্ষণের পর বলিলেন,—“রাজা, শোক করবেন না। . ইনি ত মানবী নন-ইনি একটি মঙ্গল ভাব ; একটি Idea, ইহার মৃত্যু নাই ।” রাজা একটু হাসিলেন,- অশ অপেক্ষাও সে হাসিতে স্বগভীর ধাতনা প্রকাশিত করিয়া তিনি বলিয়া উঠিলেন—“কি বলছেন আপনি ! মঙ্গলের মৃত্যু নাই ? মিথ্যা—সে কথা! মিথ্যা সে বিশ্বাস ! এ রাজ্য হ’তে মঙ্গল কল্যাণ যা কিছু সব চলে গেছে, --নাই নাই,-- এ দেশে মঙ্গল নাই, এ জাতির কল্যাণ নাই ! সবাই বলে,ভারত পুণ্য-ভূমি, মিথ্যা—সে কথা মিথ্যা ! এ হতভাগ্য দেশ চিরপাপ-নিমজ্জিত , এই মোহান্ধ জাতি চির-অভিশপ্ত। মঙ্গল নাই, এ দেশের মঙ্গল নাই ।” রাজকন্তীর মোহধোর অাবার ভাঙ্গিয়া গেল । র্তাহাকে জাগরিত দেখিয়া জহাত্মাজী রাজার কথায় উত্তরে কিছু মা বলিয়া তাহাকে বলিলেন—“রাজকন্তে, এই একটু আগে ডাক্তারকে তুমি যে কথা বলছিলে, সেই কথা আর একবার বল ত মা ! তোমার সেই মঙ্গলবাণীর মঙ্গল ভাবে মঙ্গল কাৰ্য্যশক্তি আমাদের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে উদ্বোধিত হয়ে উঠুক।” রাজকন্ত আনন্দকম্পিত ক্ষীণকণ্ঠে বলিলেম— *গুরুদেব ! আপনি আমার কাছে এসে বসুন।