পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سbد ذخ কেবল ভাবিতে ভুলিয়া গিয়াছেন তিনি কি চান—কন্ত বা পুত্র ; প্রস্থতির চিন্তাতে এমনি তিনি একাগ্রচিত্ত । অরুণোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুামসুন্দর-মন্দিরে যখন নহবতে প্রভাতী রাগিণী বাজিয়া উঠিল, ঠিক সেই সময়ে নবশিশু ভূমিষ্ঠ হইল। তাহার রোদনধ্বনিতে অন্তঃপুরিকাগণের প্রাণে একটা অপরিমিত উচ্ছ্বলিত আনন্দ-আবেগ বহাইয়া দিল । দোলোৎসব রাগিণী আজ তাহার মধ্যে অস্ফুট, অনচ্ছন্ন হইয়া পড়িল । শিশু-কণ্ঠের সাড়া পাইয়। মঙ্গল-শঙ্খ তাছার প্রতিধ্বনি গাহিল, হলুধ্বনি উঠিল, বাদ্যকারদিগের ঢাক ঢোল কাসী ঘণ্টা,—সানাইয়ের মুন্থ নিনাদে মিলিত হইয়া আকাশে বাতাসে একটা পুলক মত্ততা জাগাইয়া তুলিল। বহির্বাট ও অন্তর্বটির সন্ধিস্থলে যে প্রহরী পাহারায় নিযুক্ত ছিল-- সে তাহার কর্তব্য ভুলিয়া উদ্ধশ্বাসে রাজাকে গিয়া খবর দিল যে র্তাহার বংশধর ও ছত্রধর জন্মিয়াছে। এই সকল কাও এমন চকিতে সম্পন্ন হইয়া গেল যে, নবশিশু যে কি সস্তান, ইহা জিজ্ঞাসা করিতেও মহারাণীর অবসর হইল না, বুঝি সাহসেও কুলাইল না । ধাত্রী বগন শিশুকে কোলে তুলিয়া লইয়া আপন৷ হইতে বলিল - “কন্সা-সস্তান গে।” তখন মহারাণীর নিশ্বাস যেন যন্ধ হইয় পড়িল ; নয়ন অশ্রীপুর্ণ হুইয়া উঠিল,—প্রস্থতির মুখে গরম দুধ দিতে তিনি ভুলিয়া গেলেন। শিশুর রোদনধ্বনি শুনিয় বারীন্দী হইতে উঠিয়া—দ্বার ঠেলিয়া যাহারা অতিকাগৃহে বুকিয়া পড়িয়াছিল—তাহার হা-হুতাশ করিতে করিতে কেহ বসিয়া পড়িল, কেহ বা ফিরিয়া গেল ; শঙ্খধ্বনি হুলুধ্বনি সহসা থামিয়া পড়িল । নিমেযের মধ্যে চারিদিকে যেন একটা হাহাকার প্রবাহ বহিল ; উঠানের বাস্তধবনি কেবল থামিল না ; যেমন বাজিতেছিল, সেইরূপই বাজিতে লাগিল বাস্তকারদিগকে বারণ করিবার উপ্তমটুকুও তখন কাহারও রছিল না। তাৰার নবসংসারে এতদূর নিরানন্দ নিরাশ৷ আনয়ন করিয়াছে, তাহা না জানিয়া সদ্যোজাত সঞ্জয়াত নববস্ত্রে সজ্জিত শিশু মধু মুখে পাইরা দুইটি অঙ্গুলির সহ চকু চক শৰে তাহ পান করিতে করিতে প্ৰজলিত দীপশিখার প্রতি আনন্দ-বিস্ময় দৃষ্টিতে চাহিয়৷ দেখিতে লাগিল । ধাত্রী কিছু পরে মহারাণীর কোলে কস্তাকে ফেলিয়া দিয়া কহিল,—“মেয়ে হ’য়েছে, তাতে এত দুঃখ কেন মহারাণি ? সাত রাজার ধন স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী এক নাণিক ব’লে কোলে তুলে নিন। দেখুন দেখি কত রূপ !” তখন প্রস্থতি নিরাপদ হইয়াছেন,—তাহার সেবাশুশ্ৰষা শেষ করিয়া ধাত্রী তাহার গায়ের উপর একখানা শুভ্র বস্ত্র ফেলিয়া-দিয়াছে । স্থতিকাগৃহের দ্বার সকল এখন উন্মুক্ত, গৃহপ্রবিষ্ট অরুণালোকে বালিকা-শিশুর মুখখানি কি সুন্দর দেখাইতেছিল ! তাহার দিকে চাহিয়া মহারাণীর অশ্রু স্তম্ভিত হইয়া পড়িল । এ কি ! সত্যই এ কি রূপ ! কি লাবণ্য • সুবর্ণবর্ণের গোলায় কে যেন ইহাকে ধুইয়া দিয়াছে। মহারাণী অবাক হইয়া তাহাকে দেখিতে লাগিলেন। কিন্তু মেয়েয় রূপ দেখিয় তাহার দুঃখ কমিল না— বরঞ্চ বাড়িয়া উঠিল, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া তিনি মনে মনে বলিলেন—“এ শিশু যদি আমার অতুলের পুত্রসন্তান হইত—হায় রে ।” রাজা কন্যা-দর্শনে আসিলে ম৷ বলিলেন,— "এবারও তোমার মেয়ে হোল অতুল ! ভেবেছিলুম ছেলে হবে,—ত ভগবান সে অাশা পূর্ণ করলেন না ।” রাজা সতৃষ্ণনয়নে কন্যাকে দেখিতে দেখিতে বলিলেন,-“তাতে দুঃখ কেন মা,– সংসারে কি মেয়ের দরকার নেই ?” “আমাদের সংসারে ছেলেরই যে দরকার ছিল । তা এবার হোল না, অন্তবারে হবে ।” “নাই হোল মা ।” “বেশ বলছিস্ যা হ’ক ! তোর এত বড় বংশ, এত বড় নাম সব লোপ পেরে যাবে নাকি ?” "লোপ পাবে কেন ? মেয়েরাই আমার নাম রাখবে ?” “জালাসনে অতুল ! তুই হ’লি রায়চৌধুরী— জামাই হবে তোর ঘটক, চটক একটা ত !” “এই জন্তে এত ভাবনা ! আনি দেখো—নামের মামলা ঠিক মিটিয়ে নেব । জান- চাটুয্যে বাড়ুৰ্য্যে মজুমদার মহলানবীশ—সকলেই রায়চৌধুরী হন্তে পারে,—আনি যে জামাই করব—তার ল্যাজে নিশ্চয়ই রায়চৌধুরীট বসিয়ে দেব—তুমি নিশ্চিন্ত থাক মা !”

  • হাসাসনে বাছ,—জাহ। এ মেয়ে যদি তোর ছেলে হয়ে জন্মাত রে!” -

“অত দুঃখ কেন করছ মা । ভুলে গেছ যে আমাদের আদি বংশ মেয়েরই বংশ। আমার প্রমাতামহী তার পিতৃরাজ্যে রাণী হয়েছিলেন—আমার মেয়েও তাই হবে । আমার অন্ত স্থা মেয়ের নানকরণ করেছ তুমি,