পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র দেশের পক্ষে কয়জন ? বঙ্গদেশের সর্বত্র যখন এইরূপ আয়োজন হইবে—তখনই না একদিন তাহার মনোগত আশা-অভিলাষ পুর্ণ হইতে পারে! ভারতের সৰ্ব্বদেশের লোক বীর বলিয়া পরিচিত, -—সৈনিক শ্রেণীভুক্ত, কেবল বঙ্গবাসী এই অধিকারবিচুত । একটা জনরব-বাঙ্গালী ভীরু, বাঙ্গালী কাপুরুষ—এই অখ্যাতি অপবাদ কেমন করিয়া ব্লটিল —কে রটাইল ? যেদিন বাঙ্গালীর এই মিথ্যা কলঙ্ক অপনীত হইবে—স্বয়ং রাজ ইহাদিগের বীরত্ব স্বীকার করিয়া লইয়া ইহাদিগকে সেনার অধিকার দান করিবেন—সেইদিন—সেইদিনই জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর অন্তরতম আশা পূর্ণ হইবে,-- তাহার আত্মা প্রসন্ন হইয়া উঠিবে,--তৎপুর্বে নহে । কিন্তু জ্যোতিৰ্ম্ময়ী কি একলাই এরূপ করিয়া ভাবিতেছে ? নহে, নছে, তাহা নহে, বাঙ্গাগার দিন আসিয়াছে—সম্ভবতঃ দেশের অনেকেই তাহার মত করিয়া ভাবিতেছেন, এই অভিপ্রায়ে কাজ করিতেছেন—তাহার চিন্তা তাহার চেষ্ট—তাহার কাৰ্য্য সেই শত সহস্ত্রের মধ্যে একটি কণা মাত্র । “তাহাই হউক।--তাছাই হউক—ছে ভগবান তাহাই হউক । তুমি দেশের সকল লোকের মনের আকাঙ্ক্ষা-বাসনার সহিত আমার এই শক্তিকণাকে মিলিত সংযোজিত করিম ইহাকে মহান করিয়া, বিরাট করিয়া তোল ।” অস্তগামী স্বর্য্যের দিকে চাহিয়া সে সৰ্ব্বা স্বঃকরণে এই প্রার্থনা করিল। স্তৰ্য্যদেব র্তাহার বক্তিম করমালা জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর মস্তকোপরি মিক্ষেপ করিয়া যখন তাছাকে আশীৰ্ব্বাদপুৰ্ব্বক নদীর পরপারে অস্তৰ্হিত হইলেন, তখন বালিকা গৃহনিগুণন্ত শুষ্টয়া সম্মুখের বারান্দায় আসিয়া দাড়াইল। এই সুবিস্তৃত বারান্দারই একধারে শরৎ দাড়াইয়াছিলেন, রাজকুমারীকে দেখিয়া তিনি নিকটে আগমন করিলেন। জ্যোতিৰ্ম্মী বলিলেন “ডাক্তার-দ! ! আপনিও বুঝি বাবার জন্ত অপেক্ষা করছেন ? বেড়াতে যান নি যে কোথাও **

  • কাল বাড়ী যব মনে করে', fজনিষপত্র প্যাকৃ করছিলুম।”
  • বাড়ী যাবেন ? এত শীঘ্ৰ ?” “শীঘ্র আর কই-- প্রায় দু-মাস ত আপনাদের অতিথি হয়ে আছি—”

“এমন শীঘ্র শীঘ্র সময় চলে যায় । মনেই হয় না যে, আপনি এতদিন এসেছেন । আপনার বোধ হয় অনেক কাজের ক্ষতি হচ্ছে ?” 8 “কাজের ক্ষতি ।--না তা ঠিক বলতে পারিনে—” শরৎ একটু থামিয়া থামিয়া কথাগুলা বলিলেন,-- রাজকুমারী হাসিয়া কছিলেন – “আপনি দেখছি আদর্শ বিনয়ী – * দুরে অশ্বের পদশব্দ হইল উভয়েই সেইদিকে মনোনিবেশ করিলেন,-কিন্তু ক্রমশঃ সে শব্দ দূরে মিলাইয়া গেল। রাজকুমারী বলিলেন “ডাক্তার-দা —বাবা এখনও এলেন না—আমার একটু ভাবনা “ভাবনাব কি কারণ ? তিনি যে অবস্থাতেই পড়ন, আত্মরক্ষা করতে পারবেন—আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন ।” “তা ঠিক । আচ্ছা বাঙ্গালীদের ভীরু ব’লে একটা অপবাদ আছে—ন ?” শরৎ হাসিলেন- বলিলেন, “মেকলে এইরূপ ব’লে গিয়েছেন--” “কিন্তু এমন মিথ্যা কথাটা আপনারাও ত অম্লানবদনে মেনে নিচ্ছেন ? বাঙ্গালী যদি ভীরু জাত ত’তো, তা হ’লে তাদের জমীদারী থাকত না । প্রত্যেক জমাদারীতে ত সারাদিন লাঠালাঠি চলছে —আর লাঠিয়ালেরা ত অকাতরে প্রভুর জন্য প্রাণ দিচ্ছে। এর যদিও সামান্ত লোক, তবু বীরত্বে কি এরা কোন শিক্ষিত রাজসৈন্তের চেয়ে কম ?” "গভর্ণমেণ্ট তা বোঝেন কই ?” “আপনারাও ত বোঝাবার চেষ্টা করেন ব’লে মনে হয় না । আমি কলকাতায় গিয়ে স্বদেশী চিত্রমেলায় একখানা ছবি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলুম । ছবিখানি বুদ্ধ লক্ষ্মণসেনের ; তিনি প্রাণভয়ে অন্তঃপুরের রাস্ত দিয়ে লুকিয়ে পালাচ্ছেন! ভীরুতার বীভৎস প্রতিমূৰ্ত্তি! আর এই চিত্রকল্পনার জন্য নবীন চিত্রকর নাকি দেশের নামজাদ চিত্রকরদের কাছে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন । দুঃখে আমার চোখ দিয়ে জল এসেছিল ; ইচ্ছা হচ্ছিল, ছবিখন টেনে নিয়ে ছিড়ে কুটি কুটি করে ফেলি।” ক্রোধের আবেগে জ্যোতিৰ্ম্মীর মুখ আরক্তিম হইয়া উঠিল! শরৎকুমার নীরব হইয়া রছিলেন। বালিকা পুনরায় উত্তেজিত ভাবে কহিল, "মিথ্যা কথা ! মিথ্যা কলঙ্ক ! কক্ষণো লক্ষ্মণসেন প্রাণভঙ্গে অমন ক’রে চেীরের মতন পাপান নি ।” “অসম্ভব ব’লেই ত মনে হয় । কিন্তু মুসলমান ঐতিহাসিকেরা নাকি ঐ রকম বলেছেন ?” “আর সেই মিথ্যা ইতিহাসকে আমরা অমর