পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র সেই কথা। শরতের কথায় রাজকুমারী হাসিয়া বলিলেন, “আচ্ছা ডাক্তার-দা’ ভেবে দেখুন দেখি, পণ্ডিত মহাশয়ের সে দিন কি আহলাদ হবে—?” “কোন দিন ?” “যে দিন তিনি বাঙ্গালীদের সৈনিকবেশ দেখবেন – অবশ্য যদি এমন দিন কথন ও আসে । আচ্ছা, আমরা যে পথ ধরেছি - এটা কি ঠিক পথ ডাক্তার’দা ? ব্যায়াম শিক্ষাতে ছেলেদের মনের তেজও কি বাড়বে ? অার গভর্ণমেণ্টের চোখে-— এক দিন সেই তেজ স্বর্য্যচন্দ্রের মতই এমন প্রত্যক্ষ হ’য়ে উঠবে যে, তখন আর এদেব বীরত্ব অগ্রাহ করতে পারবেন না ?” "গভর্ণমেণ্ট কি বুঝবেন না বুঝবেন বলতে পারিনে,—ভবে ছেলেব। এতে যে তেজস্বী হ’য়ে উঠবে,—তাতে সন্দেহ নাই।”

  • কে জানে এক এক সময় অীমার মনের মধ্যে এমন একটা নৈরাশু জমাট বাধে—মনে হয় এ যেন আমায় ক্ষুদ্র শক্তি দিয়ে সাগয় বাধীর প্রয়াস হচ্ছে!” “না রাজকুমারী, আপনি ক্ষুদ্র শক্তি নন, শক্তিতে আপনি মহীয়সী ; আপনার কার্য্যের ফল যে এক দিন খুব বড় হ’য়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ করবেন না ।”

অতিরিক্ত উৎসাহের সহিতই শরৎকুমার এ কথা বলিলেন, তাহার বাক্যে সত্যের একটি মূৰ্ত্তি প্রতিভাত হইল। আবার পূর্বের ন্যায় একটা আনন্দপ্রবাহ রাজকুমারীর হৃদয়ে উথলিয়া উঠিল । জ্যোতিশ্মরী সেই স্রোতে চালিত হইয়া কহিলেন--"আপনি জানেন না - ডাক্তার-দা—আমি কতটা দুৰ্ব্বল এক এক সময় কাজ করবার কোন শক্তিই থাকে না অামার । আচ্ছা ড! ক্রা র-দা—আপনি আমার সহায় হবেন ?" “যদি অধিকার দেন,--সৰ্ব্বপ্রাণে ।” এই উত্তরে সহসা যেন জ্যোতিৰ্ম্ময়ী সচেতন হইয়া উঠিল । ঠাকুরমার ঠাট্ট মনে পড়িয়া গেল । শরৎকুমার তাঁহাকে ভুল বুঝিলেন না ত ?-- অকারণে সংসী অস্বাভাবিক গম্ভীর হইয়া উঠিয়া বালিক। বলিল— “মাপ করবেন—শরৎবাবু, কি বাজে বকৃছি!-- আমার সহায় বন্ধু আর কেউ হ’তে পারবে না— আমি নিজেই—” পিতার কণ্ঠস্বর তাহার কর্ণে প্রবেশ কয়িল— য়াজা গিড়িতে উঠিতে উঠিতে ডাকিলেন—“রাণি !” জ্যোতিৰ্ম্মী চমকিয়া উঠিল উভয়ে কথাবাৰ্ত্তায় এত >8為 তন্ময় ইইয়। পড়িয়ছিল যে, কখন ষে রাজী ঘোড়া হইতে নামিয়া উপরে উঠিয়াছেন—তাহ কেহই জানিতে পারে নাই । মুখের কথা অসমাপ্ত রাপিয়া জ্যোতিৰ্ম্মী বলিয়া উঠিল—“বাবা এসেছেন।” বলিয। তাহাকে স্বাগত করিয়া লইবার জন্য সিড়ির নিকট আসিয়া দাড়াইল । শরৎ অপরাধীর মত বারান্দাতেই দাড়াইয়া রহিলেন ;–হঠাৎ কি কথায় কি ব্যবহারে রাজকুমারীকে তিনি অপ্রসন্ন হুইবার কারণ দিলেন –তাহ তিনি বুঝিয়া উঠিতে পারিলেন নী । রাজকুমারাও বোঝেন নাই কোন ভাবেয় এ উন্মেষণ । কেন তিনি বিরক্ত হইলেন ? কাহার প্রতিই বা বিরক্ত হইলেন ? নিজের প্রতি না শরতের প্রতি ? সপ্তদশ পরিচ্ছেদ দুর্ঘটনা খেলায় হারিল বিজনকুমার, শরৎকুমারের কণ্ঠে উঠিল রাজকুমারীব ফুলমাল্য ; ইহার প্রতিশোধ গ্রহণে বদ্ধপরিকর ইষ্টলেন মুঞ্জন রায় । জ্যোতিৰ্ম্মন্ধীকে পুত্রবধু করিবেন-- এই সংকল্পে কিছুদিন যে উপদ্রববাণ কান্মুকাবদ্ধ রাখিয়াছিলেন, আবার রীতিমত ভাবে তাহার বিক্ষেপণ অায়োজন আরম্ভ হইল । নদীতে একটা নূতন চড়া পড়িতেছিল ; সে চড়া যে রাজার জমীদারীভুক্ত, তাহাতে কোন সংশয়ই নাই ; আইন আদালত বুঝিয়। এত দিন গুজন রায় নিজেই তাহ মানিয়া লইয়াছিলেন , হঠাৎ এক রাত্রে রাজপ্রজাদিগের সহিত ৰুদ্ধ বাধাইয়া এই চরের একাংশ নিজ এলাকাভুক্ত করিলার চেষ্টা করিলেন । চেষ্ট৷ নিষ্ফল হইল ; জিতিল রাজধলই,-–কিন্তু উভয়পক্ষেই জখম হইল অনেক লোক । ইহার মধ্যে রাজসৰ্দ্দার বলবন্ত সিং গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হইল। এই সংবাদ পাইয় দেওয়ানের সহিত পরামশে ব্যাপৃত থাকায় আজ বিকালে যথাসময়ে রাজা গৃহে ফিরিতে পারেন নাই । পিতাকে স্বাগত করিয়া লষ্টতে সিড়ির ঘরে আসিবামাত্র তাহার চিন্তা-বিষণ্ণ মুখ দেখিয়া জ্যোতিম্মী অন্য সব কথা ভুলিয়া গেল। তাহার সেীতমুক কণ্ঠ হইতে ধ্বনিত হইল - “বাব৷ ”