পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوسيواوج কিন্তু তাঁহাকে এখানে টানিবার পক্ষে কাহার আকৰ্ষণ-বল অধিক—অণুভার বা এই কিন্নর-নৌকার, তাহা ঠিক বলা যায় না। অণুভা যখন অভিমানভরে সর্থীকে এইরূপ অনুযোগ প্রশ্ন করে, তখন হাসি উত্তর না দিয়া—কখনও বা মৃদুমধুর হাসিতে কখনও বা চুল টানিয়া কখনও বা চুম্বনে তাহার মুখ বন্ধ করে । নাবিকতায় উতয়েই সুদক্ষ । প্রথম প্রথম এক জন মাঝি তাহদের সঙ্গে থাকিত—আজকাল মাঝিকে তাহার নৌকায় লয় না –বেলা শেষে নৌকা কুলে ভিড়িলে মাঝি নৌকা টানিয়া যথাস্থানে লাগায় । হাসি দাড় টানিতে টানিতে গান ধরিয়াছিল ;– আহা মরি মরি আজি জোয়ারে লেগেছে ঢল ! ওরে স্রোত তরী মোর চল বেগে ছুটে চল । একি রঙ্গ কি কৌতুক ক্ষুদ্র আমি বারিটুক ধয়েছি তরঙ্গ রূপ-যৌবনে টলমল ! চল শ্রোত তরী মোর বেগে চল ছুটে চল । নভ আজ রঙে ভরা—কি মুন্দর বমুন্ধরা কনক ভাদরে ক্ষণে—চমকে বাদল জল । চল স্রোত তরী মোর চল বেগে ছুটে চল! ঐ যে মেঘের নীচে, ঘাটের সীমানা পিছে— কদম্ব কি কৃষ্ণতর ? কিবা ওর নাম বল ? শাখা-ঢাকা ফুলে ফুলে, ডাকে রোজ দুলে দুলে জানে না কি বন্দী আমি ? বলহীন কণা-জল । আজি মুক্ত প্রাণ দেহ, রাখিতে কি পায়ে কেহ ! এখনি উচ্ছ্বাসনীয়ে লুটিব চরণ-তলে— ! স্রোত ওরে তন্ত্রী মোর চল বেগে ছুটে চল। রাজা তখন গুণমাচরণের সহিত এই পথে প্রাসাদে খাইতেছিলেন ; গান শুনিয়া তীরে দাড়াইয়া শুীমাচরণকে বলিলেন— “বেশ ত মিষ্টি গল ! তোমার মেয়ে গাচ্ছে বুঝি ? আমি ত জানতাম না অণুভ গাইতে পারে ?” শুামাচরণ বলিলেন, “না অণুভা নয়, গান করছে হাসি—কৃষ্ণলালের মেয়ে—ও গান-বাজনা বেশ শিখেছে।” এই সময় বোটের মুখ ফিরিল,—হাসির চোখ পড়িল তাঁরদেশে রাজার দিকে,—সহসা তাহার গান খামিয়া গেল।--রাজা তাহার লজ্জা বুঝিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন । অণুভার চোখ ছিল তীরের বিপরীত দিকে, সে কহিল, "গান বন্ধ কয়লে যে ” হাসি এ প্রশ্নের উত্তর না করিয়া কহিল, স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী

  • কে ভাই উনি " অণুভ তখন ঘাড় ফিরাইয়া তীরের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কছিল, “কই, কাউকে ত দেখছিনে ?”

“চ’লে গেলেন যে,—তোমার বাবাও সঙ্গে ছিলেন । কে উনি ভাই ?” "হ’তে পারেন রাজা—জান না ? প্রসাদপুরের রাজী—এসেছেন যে ” "রাজকুমারীর বাবা ? তিনি হ’তেই পারেন না, —এ এক জন পুরুষ মানুষ।” অণুভ হাসিয়া কহিল, “রাজা কি স্ত্রীলোক হয় নাকি ?” হাসি এ-কথায় খুব খানিকট হাসিল ; তার পর কহিল, “ন গো না, ভl নয়, আমি বলছি, ইনি একজল যুবাপুরুষ ” "রাজা হ’লেই বুঝি বুড়ো হ’তে হয় ?” "অtঃ, তা কে বলছে- তবে রাজকুমারীর বাবা নন ইনি নিশ্চয়ই, দেখতে একে অনেক ছোট ।” “তবে বোধ হয় কুমায় অনাদি-দা, রাজার সঙ্গে প্রতিবারই ভ উনি আসেন, এবারেও বোধ হয় এসেছেন। এর সঙ্গে তোর বিয়ে হ’লে ভাই বেশ হয়। রাজকুমারী এখনো বিন্ধে করলেন না, রাজা বোধ হয় অনাদি-দাকেই পুস্কি নেবেন,—এইরূপ ত গুজব । বিয়ে করবি ভাই তাকে ” এবীয় যে অনাদি রাজার সঙ্গে কলিকাতায় আসেন নাই—সে খবরটা অণুভ রাখে নাই । হাসি সে কথায় মন না দিরা কহিল, “কি রং ভাই ।” অণুভ কহিল, “রাজবাড়ীর সকলেই সুন্দর । রাজার রংও চমৎকার! তুই অনাদিদাকে বিয়ে কর ভাই, আমরা সম্বন্ধ করি। রাণী হবি তুই, আমরা বলব রাণী দি ” অনুজ্ঞা দূরে বসিয়াছিল—তাহার গাল টিপিতে পারিল না হাসি ;–কিন্তু হাসির চুলে অণুতা যে ফুলগুচ্ছ পরাইয়া দিয়াছিল, তাহা খুলিয়া সে ছুড়িয়া মারিল । অণুভ আবার সেই ফুলে তাছাকে বিধিবার চেষ্টা কম্বিল। এইরূপ ফুলসন্ধানে তাহারা ৰেশ যখন মাতিয়া উঠিয়াছে—তখন তীর হইতে গুণমাচরণ ডাকিলেন, “অণু? সন্ধ্যা হয়ে আসছে-ফের এবার ”— মুহূর্তে তাহীদের হাসি-কৌতুক বন্ধ হইল এবং নৌকাও কুলের দিকে ফিরিল। অল্পক্ষণের মধ্যে সংযত শিষ্ট-শাস্ত মেয়ে দুইটি ঘাসের উপর শুীমাচরণের কাছে আসিয়া দাড়াইল । গুণমাচরণ কছিলেন,