পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজয়ার আশীৰ্ব্বাদ অভিশাপের মতই কথাটা তাহার প্রাণে গিয়া বাজিল। করুণ অনুরোধে তিনি ভৈরবীকে বলিলেন, "ভৈরবী-ম, ছেলেমামুষের উপর রাগ করবেন না । যা বারু, যা, প্রণাম কর ওঁকে ৷” অতঃপর অরুন্ধতী উঠিয়া দাড়াইয় বারুণীর হাত ধরিয়া তাহাকে ভৈরবীর নিকটে টানিয়া অনিয়া আবার বলিলেন, “প্রণাম কর " বারুণী এ বার বিনা বাক্যে প্রণাম করিয়া তাহার নিকটে বসিল । ভৈরবী গাজার কলিকাতে জোরে আর একটি টান দিয়া হাসিয়া বলিলেন, “ভাল হবে, ভাল হবে বৈ কি, দাও ত মী, দাও ত মী অরুন্ধতী, ধূমধুমানী বেটীকে একটা টিপ পরিয়ে, আমি এবীর আকৃড়ায় যাই ।” অরুন্ধতী মেঝের উপর হইতে কোটাটি হাতে লইলেন, তাহার পর ঢাকুন খুলিয়া একটি টিপ কন্সাকে পরাইয় দিলেন। ভৈরবী আহলাদে বলিয়া উঠিলেন, “আঃ ম’রে যাই, ঠিক যেন সাগরজলে তুফানদুলুনি !” বলিয়া তিনি তাঙ্গর আলখাল্লার মধ্য হইতে একটি ক্ষুদ্র হুক বাছির করিলেন । এইটি র্তাহার থলির সর্বশ্রেষ্ঠ আসবাব । দরকার মত ইহার মস্তকে চড়ে তাহার গাজার কলিকা,—আর বিনা দরকারে ইহার দেহেচড়ান তারে তাহার আঙ্গুলের আঘাত পড়ে । ভৈরবী কলিকার ছাইট। মেঝের উপর ঢালিয়৷ দাসীর হাতে দিলেন। সে র্তাহার অভিপ্রায় বুঝিয়া জল ঢালিয়া কলিকাটা ঠাও। করিয়া আনিয়া দিল। তখন তিনি কলিকাটি থলির মধ্যে পুরিয়া স্থ কার বীণাটি হাতে লইয়া উঠিয় দাড়াইলেন। তার পর প্রং প্রীং করিয়া গান ধরিলেন— “বম্ বম্ববম্বৰম্ ভৈরব ভৈরবী ! দুনিয়া ভরা সাগর তুফান তোরা—কে মর্বি আর কে রবি ? ইৗং হ্ৰীং হ্ৰীং প্রীং প্রীং প্রীং, কি করলি তুই ও ঠাকুর । পুণ্যি নিয়ে মন্তি দিলি ভক্তি ভক্ত সব ফতুর । বম্ বম্ বম্ গাজায় দে দম্ ভৈরবী ভৈরবী । ভক্তি মুক্তি সিদ্ধি সাধন ऍांकिङ् कि जांब्र प्रद३ ?" গাহিতে গাহিত্তে তিনি চলিয়া গেলেন । ২১৩ পরদিন বৈকালবেলা খবর আসিল, মিষ্টার দত্ত যে জাহাজে আসিতেছিলেন, সে জাহাজ ডুবিয়া গিয়াছে । যুরোপব্যাপী মহাসমরের আরম্ভকাল ১৯১৪ খুষ্টাব্দ । নিম্নলিখিত কাহিনীটি তাহীর বহু বৎসর পূৰ্ব্বে ১৮৮৪ খৃষ্টাব্যের ঘটনা । অতএব এখন হইতে ধরিলে সে অtঙ্গ প্রায় ৪০ বৎসর পূৰ্ব্বেকার কথা । তৃতীয় প্রহর রাত্রি, উৰ্দ্ধদেশে চন্দ্রহীন আকাশ—তার কারাজ্যের একখানি বিরাট— বিচিত্র চিত্রপটের দ্যায় প্রতিভাত । অগণ্য নক্ষত্রঘন মৃদু-জ্যোতিঃ ছায়া-পথের উভয় পাশ্বে কোথাও বা বড় বড় দুই চারিটি উজ্জ্বল গ্রহনক্ষত্র, কোথাও বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারকারাজি শ্রেণীতে শ্রেণীতে, গুচ্ছে গুচ্ছে, মাঝে মাঝে বা বিরল সংখ্যায় সঙ্গিকারী বিজনচারী বেশে দু্যতি বিস্তার করিতেছিল । নিমে গঙ্গাসাগর এই আলোকচ্ছট। বক্ষে ধারণ করিয়া তরঙ্গলীলায়িত্তরূপে অবিরাম গর্জনে মহাসাগরের উদ্দেশ্যে প্রধাবিত হইয়াছিল। এমন সময় দুই জন স্ত্রীপুরুষ তীরদেশে বালুক1পারে কাট-বনের নিকট আসিয়া দাড়াইল । ইছার স্বামি-স্ত্রী। স্ত্রীর বক্ষে একটি নিদ্ৰিত শিশু সন্তান। সন্ধ্যাকালে পুরুষটি কলাগাছের একটি ভেলার উপর তালপাতার একটি ডোঙা আঁটিয়া এই ঝোপের নীচে রাখিয়া গিয়াছিল। এখানে আসিয়া কলার ভেল টানিয়া লইয়। স্ত্রীর সহিত সে উপকূলে পৌছিল,—তরঙ্গস্পর্শ হইতে দুই এক হাত তফাতে ভেলাথানি নামাইয়া রাখিয়া স্ত্রীর বক্ষ হইতে শিশু সন্তানটিকে লইয়া ডোঙার মধ্যে তাহাকে শোয়াইয়া দিল । শিশু জাগিল না, কান্দিল না, সামাঙ্গমাত্রায় অচিফেন-সেবিত হইয়। সে বেশ অঘোরে ঘুমাইতেছিল। পত্নী মুতবৎস, তাহার সন্মান হুইয়া রক্ষা পায় না । এই নিমিত্ৰ সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হইবার পূর্ব হইতেই সাগরের উদ্দেশে তাঙ্গর শিশুকে মানত রাখিয়াছে। শিগু এখন এক বৎসরের। মাত৷ আবার অন্তঃসত্ব, এবার মানত রক্ষা না করিলেই নয়। ৰিলম্ব হইলে দেবতার ক্রোধানলে বর্তমান