পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী করিয়া দিয়া আজ কি না সেই বৰ্ব্বরগণ সদৰ্পে চলিয়া যায় ! এ কি অভূতপূৰ্ব্ব কাণ্ড ! “পুলিস সাহেব” আর ধৈর্য্য রক্ষা করিতে পরিলেন না, গায়কদিগকে গান নিবৃত্ত করিবার অভিপ্রায়েষ্ট প্রধানত: তদজ্ঞায় রেগুলেশন লাঠিগুলা উদ্যত, বেগে উঠিতে পড়িতে লাগিল। আঘাতে কাহারও মাথা ফাটিল, কাগরও হাতের নিশান উড়িয়া গেল, কেহ ভূপতিত হইবামাত্র সহচর সেবকগণ কবুক গ্যাস্থলে নীত ইষ্টতে লাগিল। পুলিসের আক্ৰমণ আরম্ভ হইলেষ্ট রাজা অতুলেশ্বরের ধমনীসঞ্চিত বংশগত বাররক্ত সতেজে দেহ-সঞ্চারিত হইয়াছিল ; তিনি সামান্ত নিশান-ফষ্টির দ্বারাষ্ট পুলিসের প্রকাগু লাঠির আক্রমণ ব্যর্থ করিতে করিতে গায়ক-বালকদিগকে লইয়া অগ্রসপ হইতেছিলেন । একবার তাহার শিরস্ত্রাণ মলমল পাগড়ির উপর লাঠির অল্প আঘাত লাগিল । এক জন পার্শ্বচুর সেই সময় তাহাকে সবলে সরাইয়া না দিলে র্তাহণকে আহত হইতে হষ্টত । অতুলেশ্বর মুহূৰ্ত্তমাত্র মুখ তুলিয়া তাহার রক্ষণকারীকে দেখিয়া লইয়া পুনরায় গায়কদলের সহিত গান করিতে করিতে অগ্রসর হইলেন। A মোটর জনতার মধ্যে অতি ধীরে ধীরে চলিতেছিল। নিশ্চেষ্ট বণিরূপে প্রেসিডেণ্টের পাশে বসিয়া রাজকুমারী জ্যোতিৰ্ম্ময়ী যেন দাহ-যন্ত্রণা ভোগ করিতেছিলেন। ধৈর্য্যের এ কি ভীষণ অগ্নিপরীক্ষণ । কয়েকদিন পুৰ্ব্বে তিনি স্বপ্নে যে অগ্নিদাহ অমুভব করিয়াছিলেন এ যে সেইরূপ ভীষণ কষ্টকর জ্বালা ! তাহার ইচ্ছা হইতেছিল--দশভুজার মহাশক্তিতে তিনি সকলকে রক্ষণ করেন –কিন্তু শক্তি নাই,-- শক্তি নাই ! নিতাস্ত বলহীন নিরুপায় নারী মাত্র डिनि ! বন্ধ মোটর হইতে সম্মুখের ঘটনা ভাল করিয়া দেখা যাইতেছিল না, জ্যোতিন্ময়ীক আগ্রহও ছিল ন। অধিকাংশ সময়ই মুদি তনয়নে একাগ্রচিত্তে তিনি সেই সৰ্ব্বশক্তিশালী বিচারককে ডাকিতে ছিলেন । গায়কদল গানের তৃতীয় কলি ধfমণ— “আমরা রক্তবীজের ঝাড় । মরণ-মাঝেই গোপন মোদের সঞ্জীবনী বা ভু ! চাই না রক্তপাত,—আমরা–কোবো না আঘাত ; ব্যর্থ কোরবো অরির অস্ত্র ধৰ্ম্ম কৃপা-বলে ; . আয় রে ভাই দলে দলে, “বন্দে মাতরম্ ব’লে!” গায়কদিগের শত কণ্ঠের উদ্ধে রাজা অতুলেশ্বরের সবল কণ্ঠ মুস্পষ্ট ধ্বনিত হইয়া উঠিল। জ্যোতিৰ্ম্ময়ী সেই ধ্বনিতে পরম পুরুষেরই অভয়বাণী যেন শুনিতে পাইলেন ; তাহার হৃদয়-প্রাণ আশ্বস্ত হইয়া উঠিল। তিনি চক্ষু খুলিয়া দেখিলেন, প্রেসিডেন্ট উঠিয়া দরজামুখে ঝুকিয়া দাড়াইয়া চালককে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “লাল পাগড়িগুলো স’রে পড়লে না কি হে ? আর ত কষ্ট বেশী দেখতে পাচ্ছিনে । পাণ্ডালের কাছাকাছিও এসে পড়া গেছে দেখছি।” মোটর-চালক উত্তর করিল- “পুলিসকৰ্ত্ত এই একটু আগে কোথায় চ'লে গেলেন । পাহারাওয়ালাগুলো একটু দম নিচ্ছে বোধ হয়, হ্যা, অণল মিনিট পনেরর মধ্যেই আমরা পাণ্ডালে পৌছিতে পারব।” প্রেসিডেণ্ট যথাস্থানে বসিতে বসিতে দম লইয়। বলিলেন,- “পুলিস দেখছি ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছ থেকে কোন নতুন হুকুম আনতে গেল !” তাহার পর পাশ্বোপবিষ্ট নীরব স্তব্ধ জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর দিকে চাহিয়া তিনি বলিলেন,—“তুমি বোধ হয় খুব ভয় পাচ্ছ— বাজকুমারি ?” উত্তর হইল-“ভয় পাবার ত কেশন কারণ নেই। আমরা ত গভর্ণমেণ্টের বিপক্ষ বা শত্রু নই। আমাদের দেশবন্দনা-গীতিতে ম্যাজিষ্ট্রেট যে কেন এত ক্ষেপে উঠলেন—তl ত বুঝতেষ্ট পারিনে। এ দেশ কি তাদেরও বন্দনীয়, পূজ্য নয় ?” প্রেসিডেন্ট বলিলেন,—তাদের এরূপ ভুল বুঝাই ত যত অনর্থের মূল ! এতে মিত্রকেও তারা শত্র ক’রে তোলেন ।” এই সময় অদূরে রোরুদ্যমান বালক-কণ্ঠ হইতে “বন্দে মাতরম্ " ধ্বনি উঠিল। জ্যোতিৰ্ম্ময়ী গাড়ীর দরজায় মুখ বাড়াইয়া দেখিলেন,-দুই জন পাহারাওয়ালা এক জন বালককে বাক্য-শাসনে গান নিবৃত্ত করিতে না পারিয়া লাঠির শাসনে বলপূৰ্ব্বক ময়দানের দিকে টানিয়া লইয়া যাইতেছে ; কিন্তু আহত হইস্নাও বালকের গান বন্ধ হয় নাই । এ দৃশু জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর অসহ্য হইয়া উঠিল। চালককে গাড়ী থামাইতে আজ্ঞা দিয়া প্রেসিডেণ্টকে তিনি বলিলেন,—“দেখছেন ত কি কাও হচ্ছে ! আমি নেমে পড়লুম—হেটেই পরে পাণ্ডালে যাব— আপনি এগিয়ে চলুন ; আমার জন্য অপেক্ষা করবেন না।” প্রেসিডেণ্ট অবাক হইয়া গেলেন, তাহার বাকাফুট হইবার অগ্ৰেই জ্যোতিৰ্ম্মী নামিয়া পড়িলেন। মোটরের পাশে বসন্ত এবং অনাদি রক্ষকতাকার্য্যে নিযুক্ত ছিল, তাহার রাজকুমারীকে পথ করিয়া দিল ।