পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సితి মলিতে "চল রে বেট চল’ বলিয়। গাড়ী ষ্ট! কাইয়া দিল । ছেলের বুড়ীর বাক্যবাণ এবং লগুড়শক্তিকে একই সঙ্গে নিঃশক্তি ব্যর্থ করিয়া দিয়া একটু দূরে সরিয়া গিয়া স্থাকিল—“নানি গে৷ মানি, এত রাগ কেন গো নানি, নানারে অগনি ইঞ্জির করিব মোর এখুনি ।” রাজা তখন বারান্দায় এক,কা বসিয়া ছিলেন, গোলযোগ শুনিয়া রেলিঙের নিকটে আসিয়া দাড়াইলেন। উক্তরূপ ব্যঙ্গাভিনয় দেখিয়া তাহার ওষ্ঠাধরে করুণ হাসির রেগা পাত হইল । দুৰ্ব্বলে সবলে চিরদিনই এইরূপ নিষ্ঠুর অভিনয় চলিম আসিতেছে। বিধাতার করুণ নীতি প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর শক্তিকে অতিক্রম করিয়া কোনও দিন সৰ্ব্বেসৰ্ব্ব হইতে পরিবে কি না, কে জানে । রাজা একবার গেটের দিকে চাহিয়া দেখিলেন, তাহার দ্বারপাল কেহ ত এই গোলযোগ নিবারণের চেষ্টা করিতেছে মা ! তাহার মনের কথা মনেই মিলাইয়া পড়িবার পূৰ্ব্বেই এক জন প্রহরী ছেলেদের তাড়াই। আসিল । কারণ, বুড়ী অনন্তগতি হইয়৷ রাজত্বারে আসিম্বা প্রহরীর আশ্রয় ভিক্ষা করিয়াছিল । রাজা দেখিলেন, সে প্রহরী রাজদ্বারপাল নহে, পুলিস পাহারাওয়tল । সে লাঠি বাগাইয়া ডাক-ঠাক করিতেই ছেলেরা এবাব হাসিতে হাসিতে অদs হইয়া পড়িল । ধূড়া কিছুক্ষণ দ্বারে দাড়াইয়া, একটু দম লইয়া, নিশ্চিস্ত অণরাম অ বার পথযাত্রা করিল। পুলিসকে দেখিয়া রাজার মনে পড়িয়া গেল, তিনি বন্দী । এত দিন স্বর।জ্যে বন্দী ছিলেন, এখন স্বগৃহে বন্দী । রাজা 11রান্দার অদ্যপাশে আসিয়া দাড়াইলেন । পরিধাের দিন, শুভ্ৰ মেঘস্তরে সজ্জিত নীলাম্বরতলে ডান বিছাইয় দিয়! ই একটি চিল পাতার মত ভাসিতেছে, আশেপাশে দুই একটি ক্ষুদ্র চাতক পক্ষ আম্ফালন করিয়া পতঙ্গের আকারে উড়িতেছে, দিগন্তের ধার দিয়া বকের সার উড়িয়া গেল, কাকগুণ অাম-কাঠালশাছের আগায় বসিয়া কী কী ডাক ছাড়িতেছিল, নি ? ও কfননকুঞ্জে গাছের আড়ালে লুকাইয়া ছোট একটি পাপী মুন্দর শিশ ধরিয়াছিল, হঠাৎ শিশ বন্ধ করিয়া উড়িয়া আসিয়া রাজার সম্মুখবৰ্ত্তী প্রস্তরমূৰ্ত্তিটির মাথার উপর বসিল, পাথরের একটি স্তম্ভাসনের উপর আনতমুখী উক্ত মুগঠিত। মূৰ্ত্তি প। খুলাই বসিয়া, দুইটি ক্ষুদ্র হরিণ-শিশুর গাত্রে দুই হাত রাখিয়া সমেহ-দৃষ্টিতে তাহাদিগকে দেখিতেছে। একটি শাবক তাহার কোলের উপর শস্থান, স্বর্ণকুমার দেবীর গ্রন্থাবলী অন্তটি মূৰ্ত্তির আঙ্কে পা মুড়িয়া দিয়া তাহার দিকে উদ্ধমুখ হইয়া আছে, যেন বলিতেছে, আমাকে কোলে উঠাই লও। কোন নিপুণ স্বদেশী ভাস্কর রাজকন্যাকে আদর্শ করিয়া স্নেহময়ী এই শকুন্তলামূৰ্ত্তি গড়িয়াছিলেন । রাজা ইহার দিকে চাহিয়া কস্তার কথাই ভাবিতে লাগিলেন । মাথার উপর শাণিত অস্ত্র দোদুল্যমান, কখন খসিয়া পড়িয়া তাহাকে ভূপাতিত করিবে, তাহার ঠিক নাই । তৎপূৰ্ব্বে কন্যার বিবাহ হইয়া গেলেই তিনি নিশ্চিন্ত হইতে পারিতেন । কিন্তু শরৎকুমার ত এখন জেলে, বিচারশেষে তাহীর ভাগ্যে কি আছে, কে জানে। অথচ ডাক্তার তাহদের জীবনের সহিত এত দূর জড়িত যে, অন্ত কাহাকেও জামাতা করিবার কথা তিনি মনেই আনিতে পারেন না। অনুষ্ঠানপুৰ্ব্বক না হউক, প্রকৃতপক্ষে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী শরৎকুমারেরই বাগদত্ত , কন্যাও যে তৎ প্রতি অমুরাগিণী, ইহাতেও র্তাহীর মনে সন্দেহ নাই। হাসিকে ও র্তাহীর মনে পড়িল । কিন্তু হাসির ত পিতা-মাতা আছেন। অনাদির সহিত সহজেই তাহার বিবাচও হইতে পরিবে । কিন্তু জ্যোতিৰ্ম্ময়ীকে দেখিবার তিনি ছাড়া আর যে কেহই নাই । হঠাৎ তাহার চিন্তাভঙ্গ হইল। শুনিলেন- “ভাল অ1ছ ত বা বা " চমকিয়া ফিরিয়া দাড়াইয়। দেখিলেন, যাইরে সংসবে তিনি একবারেই আসিতে চাহেন না, সেই ব্যক্তিই তাইlর সম্মুথে দণ্ডায়মান। কৈ, কেহ ত তাহাকে সুজন রায়ের আগমনসংবাদ জানাইরা যায় নাই । আবার মনে পড়িয়া গেল, তিনি বন্দী, তাহার ভূত্যেরাও পুলিসের হুকুমবরদার । সুজন সম্ভবতঃ পুলিসের সম্মতিক্রমেই এখানে চলিয়া আসিয়াছেন, তাহাকে জানান দিবার প্রয়োজনই বোধ করেন নাই । কিন্তু তাহীর মনের এই বিরক্তিভাব তাহার ভদ্বতী-সৌজন্তের মধ্যে লুকাইয়া পড়িল । মনে মনেই মনকে সবল কশাঘাত করিষা, সহজ প্রশান্তভাবেই স্বজনকে নমস্কার করিয়া কহিলেন, “এই যে খুড়া মশায়, কি মনে ক’রে ? বসতে আঞ্জ হোক ৷” "বসছি বাবা ; তুমিও বোলে, এই দেখতে এলুম তোমাকে ৷” দুই জনে রেলিঙের নিকটস্বত্তী দুইখানা চৌকিতে উপবিষ্ট হইলেন । সুজন রায় বসিয়া রাজার দিকে বেশ ভাল করিয়া নজর দিলেন । চেহারাখান একটু যেন রোগ রোগ, কিন্তু এখনও মূৰ্ত্তি দিয়া তেজ যেন ঠিকরিয়া পড়িতেছে।