পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి 28 স্বামীজীর বাণী ও রচনা অধিক । আর ‘সনাতন-মতাবলম্বী এই কথাটির কি অদ্ভূত প্রভাব –কর্মকাণ্ডের বিশেষ বিশেষ নিয়মগুলি একটিও বাদ না দিয়া যে পালন করে, একজন গ্রামালোকের নিকট সে-ই খাটি সনাতনপন্থী, আর যে পালন না করে, সে হিন্দুই নয়। অতি দুঃখের বিষয় যে, আমার মাতৃভূমিতে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, র্যাহারা কোন তস্থবিশেষ অবলম্বন করিয়া সর্বসাধারণকে সেই তন্ত্রমতে চলিতে উপদেশ দেন ; যে না চলে, সে র্তাহাদের মতে খাটি হিন্দু নয়। সুতরাং আমাদের পক্ষে এখন এইটি স্মরণ রাখা বিশেষ আবশ্বক যে, উপনিষদই মুখ্য প্রমাণ, গৃহ ও শ্রেীতস্বত্র পর্যন্ত বেদ-প্রমাণের অধীন । এই উপনিষদ আমাদের পুর্বপুরুষ ঋষিগণের বাক্য, আর যদি তোমরা হিন্দু হইতে চাও, তবে তোমাদিগকে উহা বিশ্বাস করিতেই হইবে । তোমরা ঈশ্বর-সম্বন্ধে যাহা খুশি তাহাই বিশ্বাস করিতে পারো, কিন্তু বেদের প্রামাণ্য স্বীকার না করিলে তোমরা নাস্তিক । খ্ৰীষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্যান্ত শাস্ত্র হইতে আমাদের শাস্ত্রের এইটুকু পার্থক্য । ঐগুলিকে শাস্ত্র আখ্যা না দিয়া ‘পুরাণ’ বলাই উচিত। কারণ উহাতে জলপ্লাবনের ইতিহাস, রাজা ও রাজবংশের ইতিহাস, মহাপুরুষগণের জীবনচরিত প্রভৃতি বিষয় সন্নিবেশিত হইয়াছে। এগুলি পুরাণের লক্ষণ, সুতরাং যতটা বেদেব সহিত মিলে, উহাদের মধ্যে ততটাই গ্রাহ । বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মশাস্ত্র যতটা বেদের সহিত মিলে ততটা গ্রাহা, কিন্তু যেখানে না মিলে সেখানটা মানিবার প্রয়োজন নাই। কোরান-সম্বন্ধেও এই কথা । এই-সকল গ্রন্থে অনেক নীতি-উপদেশ আছে ; সুতরাং বেদের সহিত উহাদের যতটা ঐক্য হয়, ততটা পুরাণবং প্রামাণিক, অবশিষ্টাংশ পরিত্যাজ্য। বেদ-সম্বন্ধে আমাদের এই বিশ্বাস আছে যে, বেদ কখনও লিখিত হয় নাই, বেদের উৎপত্তি নাই। জনৈক খ্ৰীষ্টান মিশনরী আমাকে এক সময় বলিয়াছিল, তাহণদের বাইবেল ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর স্থাপিত, অতএব সত্য । তাহাতে আমি উত্তর দিয়াছিলাম ; আমাদের শাস্ত্রের ঐতিহাসিক ভিত্তি কিছু নাই বলিয়াই উহা সত্য । তোমাদের শাস্ত্র যখন ঐতিহাসিক, তখন নিশ্চয়ই কিছুদিন পুর্বে উহা কোন মনুষ্য দ্বারা রচিত হইয়াছিল। তোমাদের শাস্ত্র মন্ত্যপ্রণীত, আমাদের শাস্ত্র নহে । আমাদের শাস্ত্রের অনৈতিহাসিকতাই উহার সত্যতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ । বেদের সহিত আজকালকার অন্তান্ত শাস্ত্রগ্রন্থের এই সম্বন্ধ ।