পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাফনায় বস্তৃতা—বেদান্ত X 3 নিরূপণে সমর্থ। পুরাণ সমসাময়িক লোকের ভাষায় লিখিত—উহাকে আধুনিক ংস্কৃত বলা যায়। ঐগুলি পণ্ডিতদিগের জন্য নহে, সাধারণ লোকের জন্য ; কারণ সাধারণ লৈাকদার্শনিক তত্ত্ব বুঝিতে অক্ষম। তাহাদিগকে ঐ-সকল তত্ত্ব বুঝাইবার জন্য স্থলভাবে সাধু, রাজা ও মহাপুরুষগণের জীবনচরিত এবং ঐ জাতির মধ্যে যে-সকল ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল, সেগুলির মধ্য দিয়া শিক্ষা দেওয়া হইত। ঋষির যে-কোন বিষয় পাইয়াছেন, তাহাই গ্রহণ করিয়াছেন ; কিন্তু প্রত্যেকটিই ধর্মের নিত্য সত্য বুঝাইবার জন্য ব্যবহৃত হইয়াছে। তারপর তন্ত্র। এইগুলি কতক কতক বিষয়ে প্রায় পুরাণের মতো এবং তাহাদের মধ্যে কতকগুলিতে কর্মকাণ্ডের অন্তর্গত প্রাচীন যাগযজ্ঞকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে । এইগুলি হিন্দুদের শাস্ত্র । আর সে জাতির মধ্যে এত অধিকসংখ্যক ধর্মশাস্ত্র বিদ্যমান এবং যে জাতি অগণিত বর্ষ ধরিয়া দর্শন ও ধর্মের চিন্তায় তচুরি শক্তিকে নিয়োজিত কবিয়াছে, সে-জাতির মধ্যে এত অধিক সম্প্রদায়ের অভু্যদয় অতি স্বাভাবিক। আরও সহস্ৰ সহস্র সম্প্রদায়ের অভু্যদয় কেন হইল না, ইহাই অশ্চির্যের বিষয় । কোন কোন বিষয়ে এই-সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে অতিশয় বিভিন্নত বিদ্যমান। সম্প্রদায়গুলির এই-সকল খুটিনাটির বিভিন্নত বুঝিবার সময় এখন আমাদের নাই । সুতরাং যে-সকল মতে, যে-সকল তত্ত্বে হিন্দুমাত্রেরই বুিশ্বাস থাকা অবশ্যক, সম্প্রদায়সমূহের সেই সাধারণ তত্ত্বগুলি সম্বন্ধে আমরা আলোচনা করিব । প্রথমতঃ স্বষ্টিতত্ত্ব। হিন্দুদের সকল সম্প্রদায়েরই মত—এই স্বষ্টি, এই প্রকৃতি, এই মায়া অনাদি অনন্ত । জগং কোন বিশেষ দিনে স্বল্প হয় নাই। একজন ঈশ্বর আসিয়৷ এই জগং স্বষ্টি করিলেন, তারপর তিনি ঘুমাইতেছেন, ইহা হইতে পারে না । স্বষ্টিকারিণী শক্তি এখনও বর্তমান । ঈশ্বর অনন্তকাল ধরিয়া সৃষ্টি করিতেছেন, তিনি কখনই বিশ্রাম করেন না। গীতায় শ্ৰীকৃষ্ণ বলিতেছেন ; যদি হ্যহং ন বর্তেয়ং জাতু কৰ্মণ্যতন্দ্ৰিত: । * * * উপহন্যামিমা: প্রজা: —যদি আমি ক্ষণকাল কর্ম না করি, তবে জগৎ ধ্বংস হইয়া যাইবে । জগতে এই যে স্বষ্টিশক্তি দিবারাত্র কার্য করিতেছে, ইহা যদি ক্ষণকালের জন্য বন্ধ থাকে, তবে এই জগং ধ্বংস হইয়া যায়। এমন সময়ই ছিল না, যখন সমগ্র জগতে এই শক্তি ক্রিয়াশীল ছিল না ; তবে অবশ্য যুগশেষে প্রলয় হইয়।