পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 о о স্বামীজীর বাণী ও রচনা —তাদের পুর্বপুরুষের বিবরণ নির্ণয় করতে যদি পৌরাণিক কাহিনীর কিছু মূল্য আছে স্বীকার করা যায় --ত সত্ত্বেও । প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা মনে পড়ছে বলি-ইওরোপে সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীরাই বেশীর ভাগ ছেলেমেয়েকে মাতুষ করেছেন এবং শিক্ষা দিয়েছেন ; তাদের পিতামাত বিবাহিত হলেও তারা ‘জীবনের নানাবিধ অভিজ্ঞতার’ রসাস্বাদ করতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক ছিলেন । তারপর অবশু সন্ন্যাসাশ্রমের বিরুদ্ধবাদীদের মুথে এ-কথা তো লেগেই আছে যে, ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেক বৃত্তি দিয়েছেন—কোন না কোন ব্যবহারের জন্য ; সুতরাং সন্ন্যাসী যখন বংশবৃদ্ধি করছেন না, তিনি অন্যায় কাজ করছেন—তিনি পাপী। বেশ, তা হ’লে তো কাম ক্রোধ চুরি ডাকাতি প্রবঞ্চনা প্রভৃতি সকল বৃত্তিই ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন—আর তাদের মধ্যে প্রত্যেকটিই সংস্কৃত বা অসংস্কৃত সামাজিক জীবন-রক্ষার জন্য অত্যাবশ্ব্যক । এগুলির বিষয়ে বিরুদ্ধবাদীদের কি বক্তব্য ? জীবনে সব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় কর চাই, এই মত অবলম্বন ক’রে কি ঐ গুলিও পুরা দমে চালাতে হবে নাকি ? অবশ্য সমাজসংস্কারক দলের সঙ্গে যখন সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা এবং তার যখন তার কি কি ইচ্ছা, তাও ভাল রকম অবগত আছেন, তখন তাদের এই প্রশ্নের ‘হঁ৷’-জবাবই দিতে হবে । আমাদের কি উগ্রস্বভাব বিশ্বামিত্র অত্রি প্রভৃতি ঋষিদের, বিশেষতঃ নারীর সাহচর্যে পুরামাত্রায় নানাবিধ অভিজ্ঞতা অর্জনকারী’ বশিষ্ঠবংশের অনুসরণ করতে হবে ?—কারণ, অধিকাংশ গৃহস্থ ঋষিই বৈদিক স্বক্ত পাঠ ও সোমপানের জন্য যেরূপ প্রসিদ্ধ, যখন যেখানে পেরেছেন, তখন সেখানেই পুত্রোৎপাদনের বিষয়ে উদারতার জন্যও তদ্রুপ প্রসিদ্ধ ;--এদের অথবা যে-সকল অবিবাহিত সন্ন্যাসী ঋষি ব্রহ্মচর্যকেই ধর্মের মূলমন্ত্র বলে প্রচার করে গেছেন, আমরা তাদের অনুসরণ করব ? তারপর অবশ্য ভ্ৰষ্টের দল তো রয়েছেই, তাদের মাথায় তো গালাগালের বোঝা পড়াই উচিত—যে-সকল সন্ন্যাসী তাদের অদশ ঠিক ধরে রাখতে পারেননি সেই দুর্বল অসৎপ্রকৃতি সন্ন্যাসীর দল । কিন্তু আদর্শটি যদি খাটি ও সরল হয়, তবে আমাদের একজন ভ্ৰষ্ট সন্ন্যাসীও যে-কোন গৃহস্থ অপেক্ষা শতগুণে উন্নত ও শ্রেষ্ঠ, কারণ চলতি কথাতেই আছে—‘ভালবেসে না পাওয়া বরং ভাল ’ ।