পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\○○ স্বামীজীর রাণী ও রচনা কেবল কতকগুলি সাধু ব্যক্তি বাস করেন, অথচ সেখানে একটিও মন্দির না থাকে, তবে সেই স্থানকেই তীর্থ বলিতে হইবে। যদি কোন স্থানে শত শত মন্দির থাকে, অথচ যদি সেখানে অনেক অসাধু লোক বাস করে, তবে সেই স্থানের আর তীর্থত্ব থাকে না । আবার তীর্থে বাস করাও বড় কঠিন ব্যাপার ; কারণ অন্য স্থানের পাপ তীর্থে খণ্ডিত হয়, কিন্তু তীর্থে কৃত পাপ কিছুতেই দূরীভূত হয় না। সকল উপাসনার সার—শুদ্ধচিত্ত হওয়া ও অপরের কল্যাণ সাধন করা। দরিদ্র, দুর্বল, রোগী—সকলেরই মধ্যে যিনি শিব দর্শন করেন, তিনিই যথার্থ শিবের উপাসনা করেন । আর যে-ব্যক্তি কেবল প্রতিমার মধ্যে শিব উপাসনা করে, সে প্রবর্তকমাত্র। যে-ব্যক্তি কেবল মন্দিরেই শিব দর্শন করে, তাহার অপেক্ষ যে-ব্যক্তি জাতি-ধর্মনির্বিশেষে একটি দরিদ্রকেও শিববোধে সেবা করে, তাহার প্রতি শিব অধিকতর প্রসন্ন হন । কোন ধনী ব্যক্তির একটি বাগান ছিল, এবং দুইটি মালী ছিল । তাহাদের মধ্যে একজন খুব অলস, সে কোন কাজ করিত না ; কিন্তু প্ৰভু আসিবামাত্র করজোডে প্রভূর কিবা রূপ, কিবা গুণ ? বলিয়া তাহার সম্মুখে নৃত্য করিত। অপর মালীটি বেশী কথা জানিত না—সে খুব পরিশ্রম করিয়া প্রভুর বাগানে সকল প্রকার ফল ও শাকসবজি উৎপন্ন করিত ও সেই গুলি মাথায় করিয়া অনেক দূরে প্রচুর বাটতে লইয়া যাইত। বলে। দেখি, এই দুই জন মালীর মধ্যে প্রভৃ কাহাকে অধিকতুর ভালবাসিবেন ? এইরূপে শিব আমাদের সকলের প্রভু, জগং তাহার উদ্যানস্বরূপ, আর এখানে দুই প্রকার মালী আছে। এক প্রকার মালী অলস কপট, কিছুই করিবে না, কেবল শিবের রূপের –তাহার চোখ নাক ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বর্ণনা করিবে ; আর এক প্রকার মালী আছেন, যাহারা শিবেব দরিদ্র দুর্বল সন্তানগণের জন্য, তাহার স্থঃ সকল প্রাণীর কল্যাণের জন্য চেষ্টা করেন । এই দ্বিবিধ প্রকৃতিবিশিষ্ট ভক্তের মধ্যে কে শিবের প্রিয়তর হইবে ? নিশ্চয়ই যিনি শিবের সন্তানগণের সেবা করেন। যিনি পিতার সেবা করিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে আগে তাহার সস্তানগণের সেবা করিতে হইবে। যিনি শিবের সেবা করিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহার সন্তানগণের সেবা সর্বাগ্রে করিতে হইবে-জগতের জীবগণের সেবা আগে করিতে হইবে । শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে, র্যাহারা ভগবানের দাসগণের সেবা করেন, তাহারাই ভগবানের শ্রেষ্ঠ দাস। অতএব এইটি সর্বদা স্মরণ রাখিবে।