পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У о о স্বামীজীর বাণী ও রচনা কে? সাপ আর হাঙ্গরের ওপর মানুষেরও জাতক্রোধ ; মানুষও বাগে পেলে ওদের ছাড়ে না । সকাল বেলা খাবার-দাবার অাগেই শোনা গেল যে, জাহাজের পেছনে বড় বড় হাঙ্গর ভেসে ভেসে বেড়াচ্চে। জল-জ্যাস্ত হাঙ্গর পূর্বে আর কখন দেখা যায়নি—গতবারে আসবার সময়ে স্থয়েজে জাহাজ অল্পক্ষণই ছিল, তা-ও আবার শহরের গায়ে । হাঙ্গরের খবর শুনেই, আমরা তাড়াতাড়ি উপস্থিত । সেকেণ্ড কেলাসটি জাহাজের পাছার উপর—সেই ছাদ হ’তে বারান্দা ধ’রে কাতারে কাতারে স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে ঝুকে হাঙ্গর দেখছে। আমরা যখন হাজির হলুম, তখন হাঙ্গর-মিঞার একটু সরে গেছেন ; মনটা বড়ই ক্ষুণ্ণ হ’ল। কিন্তু দেখি যে, জলে গাঙ ধাড়ার মতো এক প্রকার মাছ ঝণকে ঝণকে ভাসছে । আর এক রকম খুব ছোট মাছ জলে থিক থিক করছে। মাঝে মাঝে এক একটা বড় মাছ, অনেকট ইলিশ মাছের চেহারা, তীরের মতো এদিক ওদিক ক’রে দৌড়চ্চে । মনে হ’ল, বুঝি উনি হাঙ্গরের বাচ্চ । কিন্তু জিজ্ঞাস ক’রে জানলুম – তা নয়, ওঁর নাম বনিটো । পূর্বে ওঁর বিষয় পড়া গেছলো বটে ; এবং মালদ্বীপ হতে উনি শুটকিরূপে আমদানি হন হুড়ি চড়ে – তাও পড়া ছিল । ওর মাংস লাল ও বড় সুস্বাদ--তাও শোনা আছে। এখন ওঁর তেজ আর বেগ দেখে খুশী হওয়া গেল । অত বড় মাছটা তীরের মতো জলের ভিতর ছুটছে, আর সে সমুদ্রের কাচের মতো জল, তার প্রত্যেক অঙ্গ-ভঙ্গি দেখা যাচ্চে । বিশ মিনিট, আধঘণ্ট-টাক, এই প্রকার বনিটোর ছুটোছুটি আর ছোট মাছের কিলিবিলি তো দেখা যাচ্চে। আধ ঘণ্টা, তিন কোয়ার্টার—ক্রমে তিতিবিরক্ত হয়ে আসছি, এমন সময়ে একজন বললে—ঐ ঐ ! দশ বার জনে ব’লে উঠল—ঐ আসছে, ঐ আসছে!! চেয়ে দেখি, দূরে একটা প্রকাও কালো বস্তু ভেসে আসছে, পাচ সাত ইঞ্চি জলের নীচে । ক্রমে বস্তুটা এগিয়ে আসতে লাগলো । প্রকাগু থ্যাবড়া মাথা দেখা দিলে ; সে গদাইলস্করি চাল, বনিটোর সে সেণ তাতে নেই ; তবে একবার ঘাড় ফেরালেই একটা মস্ত চক্কর হ’ল। বিভীষণ মাছ ; গম্ভীর চালে চলে আসছে—আর আগে আগে দু-একটা ছোট মাছ ; আর কতকগুলো ছোট মাছ তার পিঠে গায়ে পেটে খেলে বেড়াচ্চে। কোন কোনটা বা জেকে তার ঘাড়ে চড়ে বসছে। ইনিই সসাঙ্গোপাঙ্গ হাঙ্গর ।