পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বন্য আঙুরলতার বোপঝাপ, জুনিপার গাছের বন-হাজার বছর আগের যে লোকদল, তাদের সভ্যতা, গবর্ব, সোনা রূপার রথ নিয়ে ঐ অস্পষ্ট কুয়াশাচ্ছন্ন দপ্ন তীরভূমির মতই ছায়া হয়ে হাজার বছর আগে কোথাব্য মিলিয়ে গিয়েছে। অনন্ত জীবন কেবল এই নীল জলধিরাশির পথ অনন্ত পানে চেযে চলেছে একটানা-বড় বড় সাম্রাজ্যের কঙ্কাল, তীরস্থ শেঠ ওলা, জলজ উদ্ভিদের মত একপাশে হেলায় ফেলে। রেখে দিযে উদাসীর মত চলেছে । আবার এখন থেকে থেকে হাজার বছর কেটে যাবে।-সে। দূর ভবিষ্যতের নবোদত প্ৰভাত সে যুগের তরুণ রংশধরদের কাছে আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞান, মোটর এরোপ্লেন, বেতার ২৪, ট্যাঙ্ক প্রভৃতি নিতান্ত আদিম যুগের পণ্য বলে বিঘোষিত হবে-প্রাচীন বোমানদের স্বর্ণরৌপ্যে। জাকজমকওয়াল। স্তিপ্ৰং বিহীন গাড়ীর মত । মানুষকে শুধু চলতে হবে। চলাই তার ধৰ্ম্ম-পথের নেশা তোমাকে আশ্রয় করুক। যুগে যুগে তোমাকে আসতে যেতে হবে-নব নব প্ৰভাতে নব নব ফুলফল, হাসিমুখ তরুণ শৈশব স্নেহ প্ৰেম আশা হাসি জ্যোৎস্না-পথের বঁাকে বঁাকে ডালি সাজিযে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।--অনন্ত জীবনপথে কতবার তুমি তাদের পাবে। আবার পেছনে ফেলে চলে যাবে-আবার পাৰে । চরণ বৈ মধু বিন্দতি । চরণ স্বাদুসুন্তু স্বয়ম—এই চলার বেগের অমৃত। তোমার আপনার জীবনে সীতা হোক । জীবনে অনস্তকে চিনতে হবে, নতুব। আত্মার দৈন্য ঘোচাতে পারবে না । গতির মধ্যে দিয়ে আনন্তের স্বরূপ চোখে ধরা দেবে। হে জীবন পথের পথিক, পথের ধারে ঘুমিয়ে প’ড়ো না । ৷৷ ৬ই জানুয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ আজ পূর্ণিমার দিনটা পূৰ্ণচন্দ্ৰকে ভাল করে উপভোগ করবার জন্যেই একটু দেরী করে বেড়াতে বেরুলাম । সুখটিয়া কুলবনেই বেলা গেল । সহদেবটোলায় তেলাকুচা ঝোপে ভরা সেই পথটায় যখন গেলাম তপন সূৰ্য্যের বাঙা রোদ ঝোপঝাপের গায়ে পড়েছে । আস্তে আস্তে ঘোড়া চালিয়ে আসছিলাম, প্রতি আকন্দ গাছ, তেলাকুচা লতা, নাটার্কাটার ঝোপ, ছায়াশ্যামল তৃণভূমি উপভোগ করতে করতে মুখে দোদুল্যমান আলোকলতার স্পর্শ মেখে, পিছনের মাঠে অস্তসূৰ্য্যের রক্তগোলিকটা পিঠের ওপর দিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখতে দেখতে মুশতািব্লন্টালায় এসে পৌছলাম। তারপর পাখীর কাকলি শুনতে শুনতে ডাইনের ግ እ