পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্যামল শস্য-ক্ষেত্র, একটু দূরেই সন্ধ্যার কুয়াশায অস্পষ্ট গঙ্গা ও ওপারে পাহাড়টা দেখতে দেখতে গঙ্গার ধারে এলাম। পূৰ্ণচন্দ্ৰ ততক্ষণ উঠে গিয়েছে-গঙ্গার জলে দীর্ঘ রশ্মি পড়ে কঁপিছে। দ্বিারা থেকে মাথায় করে লোকে কলাইএর বোঝা নিয়ে ফিরছে।--মাঠে খুপাড়ী থেকে কলাইএর ভূষার সাজাল দিয়েছেতারই ধোযার গন্ধ বেরুচ্ছে । জীবনটা কি অপূৰ্ব, শুধু তাই আমার মনে পড়ে। সেই কতদিন আগে-- মনে পড়ল এমন দিনটিতে বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম আড়ংঘাটার ঠাকুর বাড়ীতে । সেই ছোট্ট ঘরটাতে থাক,তাম, মোহন্ত ভোর বেলি উঠে কি স্তোত্ৰ পাঠ করত, আর পিতলের লোটায় ঝোল রোধে আমাদের খেতে দিত। সেই তেঁতুলতলার দিকে বেডাতে যাওযা-সেই ওপবের ছাদে বসে সংস্কৃত ব্যাকরণ ও ভিক্টর হিউগোর লা মিজারেবল পড়া-স্বপ্নের মত মনে আসে । এহ আজকাল পূর্ণিমায় সেই আড়ংঘাটার ছাদটা কি রকম দেখাচ্ছে ? বাবার করুণ-স্মৃতিমাখা আড়ংঘাটার কথা কি কখনো ভুলবো ? ওপারের ধূসর পাহাড় শ্রেণী, কুয়াশাচ্ছন্ন উদাস গঙ্গাবক্ষ, সুদূর পূর্ব দিক্‌চক্রবাল-এদের সামনে রেখে কেবলই মনে পডে আমার দেশের ভিটায় এমনি জ্যোক্স। আজ উঠেছে – চাপা পুকুরের পুকুর ঘাটে, বেলেঘাটী ব্রিজের মাঠে, ইচ্ছামতীরধারে, চাটগায্যের মণিদের বাড়ী পুরোনে। স্মৃতির সব জায়গাগুলোতে । কুটির মাঠের কথা হঠাৎ মনে পডে-দেশের জন্যে মন কেমন করে। তারপর পূর্ণচন্দ্ৰকে পেছনে রেপে ঘোড়া ছেড়ে দিলাম । চারধারের মাঠ কুয়াশায় ঘিরে নিয়েছে, সারাদিনের পশ্চিমে বাতাসের পর এত ঠাণ্ডা পড়েছে যে হাতে দস্তান। পরেও আঙ্গুল কনকিন করছে।--ভীমদাসটোলায় ঘরে ঘরে লোকে কলাই-ভূষায় “যুৱ’ লাগিয়ে আগুন তাতছে-ইন্দারায। মেয়েরা জল তুলছে। গত বর্ষাকালে যে খালটা দিয়ে নৌকা বেয়ে ভণ্ড সিংএর বাড়ীর পিছনের ঘাট দিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম। সে খালিটার জল এখন শুকিযে গিয়েছে। বালির ওপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে এলাম। বাধের ওপরে উঠে আবার আড়ংঘাটার কথা মনে এল। বাঁধ ছাড়িয়েই একদৌড়ে ঘোড়া ছুটিয়ে একেবারে ঘোড়া নিয়ে এলাম রাসবিহারী সিং এর টোলার অশথ গাছটার কাছ পৰ্য্যন্ত। এত জোরে এলাম যে পরমেশ্বরী কুমারের যে খুবড়ীতে লোকজন আগুন তাপছিল-তারা স্থা করে চেয়ে রইল । ।। ৭ই জানুয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ ʻh s