পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
হারানাে খাতা।

উদার মনই তাঁর ছিল! আমার বাবা ছিলেন ডেপুটী ম্যাজিষ্ট্রেট। একবার সূর্য্যাস্ত খাজনার দায়ে ঐ গাজন হাটের তালুক—তখন আর তা এগার আনি নেই,—তার ষোল আনাই তখন গিরিশচন্দ্র মিত্রেরই হয়ে গেছে—সেই তালুক লাটে ওঠে। বাবা খুব সামান্য দামে তাঁর সেই নিজের পৈতৃক বিষয় একজন চাপরাসীকে দিয়ে কিনিয়ে রাখেন এবং পরের দিন নিজের হাতে পত্র লিখে যারা তখন তাঁর ন্যায্য বিষয় অন্যায্য ভাবে ভােগ করছিল, তাদেরই খবর দেন যে কেনবার টাকাটা পেলিই তিনি ওদের তালুক ফিরিয়ে দেবেন। হলােও তাই। আমার আজও সেই কথা মনে কর্‌তে আল্লাদে আর গৌরবে বুক কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমি সংসারে এসে কার জন্যে কি করলুম?

 “পিতৃহীন হয়েছিলেম, নিতান্ত অসময়ে। সবে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় পড়তে গেছি, বিনামেঘে যেন বজ্রাঘাত হলো! ভাই বােন আমার আর কেউ ছিল না। মার পক্ষে বড়ই কষ্টকর। ছুটীর সময়টুকুই তাঁর কাছে থাকি, বারমাস তিনি একলা।

 “কল্‌কাতার হােষ্টেলে যাঁরা বাস করেছেন, আমাদের মতন পাড়াগেঁয়ে বিশেষতঃ পশ্চিম বঙ্গ ছাড়া অন্য অঞ্চলের ছেলে গেলে তাদের সেখানে যে কত বড় দুর্দ্দশা ঘটে সে হয়ত তাঁদের জানা আছে। কোন্ সময় অন্যমনস্ক হয়ে একজন ‘কেডারে ডাহে?’ বলে ফেলেছে,— আর রক্ষা আছে! খোঁজ করে করে তাই, নিজের স্বজাতী (?) দেখেই ভাব করে ফেলা যেত এবং আমার এক ঘরের পড়শী হলেও পশ্চিমবঙ্গকে ‘দূরে পরিহার’ চেষ্টাতেই ব্যস্ত থাকতেম। কারণ, আমাদের পক্ষে তাঁরা ছিলেন একটু ‘দুর্জ্জন’।

 “কালীপদ আমার বিশেষ অন্তরঙ্গ হয়ে দাঁড়ালাে। জীবনে সেই বাইরের মানুষের সঙ্গে হৃদয়ের সম্বন্ধ প্রথম স্থাপন করতে যাওয়া,—আর