অত্যন্তই বিস্মিতা হইল; এবং তারপর তার মনে হইল, রূপই বা তার এমন অসাধারণটা কি?
লোকের রটনা যে কতটাই অবাস্তব হইতে পারে তাই দেখিয়াও সে অবাক হইল। সে যে এতদিন শুনিয়াছে রাজা তাঁর অর্দ্ধেক রাজ-ঐশ্বর্য্য সুষমার চরণেই ঢালিয়া দিয়াছেন। হীরায় তার গা ভর্ত্তি এবং রূপ নাকি তার সেই হীরার চেয়েও উজ্জ্বল। তার যায়গায় এই সিদাসিদে নিরালঙ্কারা সুষমাকে বড়ই অস্বাভাবিক ঠেকিল। স্বামীর দুঃখিত কণ্ঠ ও অভিমান বাক্যও পরিমলের ঈর্ষা বিদ্ধ অন্তরে এই সুযোগে লজ্জার সূচী বিদ্ধ করিতে ছাড়িল না।
গভীর রাত্রে ঘুম ভাঙ্গিয়া কাহার শীতল স্পর্শ এবং চাপা কান্না অনুভব করিয়া নরেশ জিজ্ঞাসা করিলেন “কে”।
পরিমল ঝাঁপাইয়া তাঁহার বুকের উপর পড়িয়া দুইহাতে তাঁহাকে জড়াইয়া ধরিল, অশ্রুপরিপ্লুত কাতর স্বরে বলিল, “আমার উপর তুমি নির্দ্দয় হয়ো না। আমি যে সব হারিয়ে তোমায় পেয়েছি!”
নরেশ স্ত্রীর মুখ চুম্বন করিলেন, তাঁর বুক ভরিয়া একটা নিশ্বাস উঠিল। বলিলেন, “পরিমল! সুষমার কথা তুমি কি ভুলে যেতে পারবে?”
পরিমল মাথা হেলাইয়া জানাইল সে পারবে। লজ্জায় সঙ্কোচে কথার উত্তর সে দিতে পারিল না।
“সে জন্মের মতই আমার সংস্রব ছাড়িয়ে গেছে, তোমার কল্পনা থেকেও অন্ততঃ তাকে তুমি মুক্তি দিও, আমরা যেমন ছিলুম তেম্ন্ই থাক্বো।”
নিরঞ্জন সুষমাকে লইয়া নরেশচন্দ্রের বাগানে যাইবার জন্যই বাহির হইয়াছিল। হঠাৎ সে বলিল “ওই বাগানের রাস্তার ধারেই আমি আধমরা হয়ে পড়েছিলুম, রাজাবাহাদুর আমায় ওইখান থেকেই তুলে নিয়ে আসেন। বাগানের দরওয়ানগুলো ঠিক যেন যমদুত!”