পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
হারানাে খাতা।

 সুষমার একথা শুনিয়া কি মনে হইল সেই জানে, সে সহসা বলিয়া উঠিল “দেখুন, বাবা! আমার সেই ছোট্ট বাড়ীটীতে অনেকগুলি দরকারী জিনিষ পত্র আছে, আজ আমরা সেই খানেই যাই চলুন; কাল তখন সব গোছগাছ করে নিয়ে বেরিয়ে পড়া যাবে একেবারেই।”

 ভিতরের কথা না জানিয়া নিরঞ্জন সহজেই সম্মত হইল। যেখানে একদিন ভিখারী নিরঞ্জন নরেশের কৃপালাভ করিয়াছিল, সেখানের ভৃত্যবর্গ হয়ত মনিবের অসাক্ষাতে আজও তাহাকে তেমন করিয়া না মানিতেও পারে। নরেশের পত্র থাকিলেও মানুষের প্রকৃতিকে কি হুকুমে রদ করা যায়? তাই সেখানে তাহার কিছু উপদ্রুত হওয়া সম্ভব জানিয়াই নিজের বাড়ীতেই সে ফিরিতে চাহিল। নিরঞ্জন সঙ্গে থাকাতে মনে যথেষ্ট সাহস ছিল।

 এখানে আসিয়াই কিন্তু অপ্রত্যাশিত ফললাভে আনন্দে সে মূর্চ্ছা যাইবার উপক্রম করিল।—এযে তার সেই ছোট্ট বেলাকার ইষ্ট গুরু সেই সাধুজী! আজিকার বড় দুর্দ্দিনে অযাচিতরূপে আসিয়া তাহারই প্রতীক্ষা করিতেছেন। অবর্ণণীয় আনন্দের আতিশয্যে শিশুর মত চঞ্চল ও উৎফুল্ল হইয়া চোখে জল ও মুখে হাসি লইয়া সুষমা বারবার করিয়া বলিতে লাগিল “ঠাকুর গো! আপনি নিশ্চয়ই ভগবান! আমি যে কায়মনোবাক্যে আপনাকেই ডাকছিলুম, তা আপনি জানলেন কেমন করে?”

 সাধু কহিলেন “বেটা! আমি যে তোমায় নিজের দরকারেই খুঁজতে এসেছিরে! রাজাবেটা যদি হুকুম দেয়, তা হলে আমি তোকে আমার ‘অশরণালয়ের’ সেবাশ্রমের ভারটা দেবার জন্যে সঙ্গে করে অযোধ্যাধামে নিয়ে যাই।— সেখানে দুতিন জন জমিদারের সাহায্যে আর ভিক্ষার ধন