পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
২০৩

আমায় শুধু নিঃশব্দ চোখের জল দিয়েই সাঙ্গ করে নিতে হলো। তার উপর যে মুখের চেয়ে জগতে আমার আর কিছুই সুন্দর ও প্রিয় ছিল না, সেই সবচেয়ে আদরের মুখই আমার নিজের হাতে—ভাবতে গেলে সমস্ত মন যেন ভয়ে ও বিস্ময়ে শিউরে ওঠে। পেরেছিলুমও তো!

 “সুখদার জন্যেই ভাব্‌ছিলুম যে বাড়ী ছেড়ে দুজনে কোথাও পালাব নাকি? এমন সময় আমার পালাবার শক্তি হরণ করে আমার সর্ব্বশরীর ব্যেপে বসন্তর গুটি দেখা দিল। সে কি যন্ত্রণা! উঃ সে কি যন্ত্রণা। বোধ করি শর শয্যা পেতে শুলেও তেমন করে সর্ব্বশরীরে তার ফলাগুলো বেঁধে না। হাজার হাজার ছুঁচ দিয়ে যদি সর্ব্বশরীরের মাংসের মধ্যে ফোঁড় তোলা যায় তাতেও কি অত বেশী যন্ত্রণা দিতে পারে? উপকথার রাজার যেমন চোখে শুদ্ধ ছুচ বেঁধা ছিল আমার চোখেও যেন তাই হলো। বিশেষ করে ডান চোখটায়। রোগের খেয়ালে যন্ত্রণার আর্ত্তনাদে কেবলই মরা মাকে আকুল হয়ে ডেকেছি আর সঙ্গে সঙ্গেই কার অশ্রুজলে ভেজা কাতর স্বর কানে গেছে, মা, মা, মা শেতলা! ভাল করে দাও মা! মা, মা, মা, মা, ভাল করে দাও মা!

 “যতক্ষণ জ্ঞান ছিল সুখদাকেই অনুভব করেছিলুম, দেখবার তো চোখ ছিল না। মধ্যে মধ্যে তাকে মিনতি করে বলেও ছিলুম ‘পালিয়ে যাও সুখদা! কেন অনর্থক প্রাণ দেবে, আমি তো গিয়েইছি।’

 সে কেঁদে উঠে বলেছিল ‘এক সঙ্গেই যাই চলো, একলা আমি দাঁড়াবো কোথায়?

 “এই প্রথম আর শেষ কথা আমাকে সে বলেছিল। এর পরের কোন কথাই আমার আর মনে নেই। আমার যখন জ্ঞান হলো তখন আমার সকল স্মৃতি লুপ্ত হয়ে গেছে, তাই মনে নেই কত দিনে কত অল্পে অল্পে আমি আমার সেই মরণ শয্যা থেকে বেঁচে উঠেছিলুম?