পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
হারানাে খাতা।

মতে নরেশের ঘাড়ে ভূতে ভর করিয়া তাহাকে এই অপকর্ম্মে প্রবৃত্তি করিয়াছিল। পরিণত যৌবনে অসহায় নারীর যে সকল আপদ ঘটা অবশ্যম্ভাবী তাহারই বিড়ম্বনায় সে সময়ে এই পরগৃহবাসিনী পূর্ণ যৌবনা মেয়েটা একান্তই বিব্রত ও বিপন্ন হইয়া রহিয়াছে। মা মরার পর তাহার পূর্ব্বকার সকল ব্যবস্থাই কোন্ একটা দৈব দুর্ব্বিপাকবশতঃ একেবারেই আগাগোড়া কাঁচিয়া যায়, যে নিরাপদ নীড়ে সে বাসা বাঁধিবার কল্পনা বহুদিন হইতেই তাহার সমস্ত অন্তকরণ দিয়া করিয়া আসিয়াছে, আকস্মিক একটা কালবৈশাখীর ঝড়ের ঝাপটা আসিয়া তাহার সেই আশাতরীখানাকে হঠাৎ মাঝদরিয়ার মাঝখানেই বানচাল করিয়া দেয়, তারপর এই নিরালম্ব জীবন লইয়া সে আকুল-সাগরের ঢেউ খাইয়া খাইয়া ভাসিয়া বেড়াইতেছিল, কুল কোথাও পায় নাই। গ্রামের তাহারা নূতন বাসিন্দা, পুরাতন সুবাদ কাহারও সহিত ছিল না, আর থাকিলেও হিন্দুঘরের আইবুড় ধাড়ী মেয়ে যে কোন ভদ্রলোকে গলায় ঝুলাইবে, ততটা উদারতা পল্লীগ্রামে যখন ছিল সে অতীত যুগের কথা। কাজেই পরিমল স্রোতের ফুলের মত কেবলই ভাসিয়া বেড়াইতেই ছিল, কোথাও কুল পায় নাই। পূর্ব্বাশ্রয় যখন খসিয়া পড়িল ঘর বাড়ী ধন দৌলত সব কিছুই বেদখল যারা লইল, তারা শুধু তাহাকে বাদ দিয়া গেল, এই খবর শুনিয়া একজন প্রতিবেশী তাহাকে ঘরে স্থান দিলেন, সে সময়ে তাঁহার গৃহিণীটী সুতিকাগারে আবদ্ধ থাকায় নিজে হাত পোড়াইয়া রাঁধিয়া খাইতে ও খাওয়াইতে হইতেছিল, গৃহিণী এই অসহায় মেয়েটার খবরও নিয়া কর্ত্তাকে জানাইলে তিনি সহজেই সম্মত হইলেন; কিন্তু মেয়েটি কয়েকদিনের মধ্যেই একটা মধ্যরাত্রে কাঁদো কাঁদো হইয়া অস্পৃশ্য সুতিকাগৃহের আগড় ঠেলিয়া ব্যাধ-বিতাড়িতা হরিণীর মতই ছুটিয়া আসিল এবং গৃহিণীর