পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৬৭

বাহ্য জগতের এই স্তব্ধ আত্ম-সমাহিতভাব নিরঞ্জনের মনের ভিতরে প্রবেশ করিয়া তাহার নিয়ত অশান্তি ও নিরানন্দে ভরপূর চিত্তটিকে শুদ্ধ যেন তাহার সেই শান্তির মাধুর্য্যে পরিপূরিত করিয়া তুলিয়াছিল। সে যেন ইহাদের হইতে একটা অনির্ব্বচনীয় প্রশান্তি লাভ করিয়া তাহার ভিতরেই মগ্ন হইয়া গিয়াছিল। অহোরাত্র, জাগ্রতে এবং নিদ্রাতেও যে সান্ত্বনাবিহীন শান্তিহীন দুশ্চিন্তা বা দুষ্ট স্মৃতির তাড়নায় তাহার প্রত্যেক দণ্ড পলটুকু পর্য্যন্ত দারুণ দুঃখভারাক্রান্ত সে সবই যেন তাহার মনের মধ্য হইতে এই শান্ত মধুর প্রকৃতির শান্তিধারা এই মুহুর্ত্তে ধৌত করিয়া দিয়াছে।

 ঘরের দরজার কাছে খুট করিয়া একটু শব্দ হইল; দোরটা খুলিয়া গেল, পেঁচোর মা মুখ বাড়াইয়া ঘরের মধ্যটা ভাল করিয়া দেখিয়া তারপর ভিতরে প্রবেশ করিল। একপাশে শয়নের নেয়ারবোনা খাট, আর এক ধারে একটি ছোট টেবিল। টেবিলের উপর দোয়াত, কলম, কাগজ আর তারই মধ্যে কয়েকখানা ছোট বড় নোট একখানা লেফাপার মধ্যে খোলাই পড়িয়া আছে। পেঁচোর মা প্রায় নিঃশব্দে সেইখানে আসিয়া উহার মধ্য হইতে একখানা দশ টাকার নোট বাহির করিয়া লইয়া আবার তেমনিভাবে বাহির হইয়া চলিয়া গেল, গৃহাধিকারী ইহার বার্ত্তা কিছুই জানিতে পারিল না। টাকাগুলা তাহাকে নরেশচন্দ্রেরই খাজাঞ্চির বেতন হিসাবে দিয়াছিল।

 বাবুর খানসামা সাতকড়ি আসিয়া ডাকিয়া উঠিল “ম্যাষ্টর মশাই!”

 প্রথম ডাকে নয়, দু তিন ডাকের পর নিরঞ্জন মুখ না ফিরাইয়াই জবাব দিল, “উঁ?”

 —“বলি মাইনে পেলেন, তা আমরা যে আপনার অসুখে বিসুখে এতটাই করলুম, বলি আমাদের বকশিষ কই?”