পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/পতঙ্গ/পতঙ্গের দেহের ভিতরকার কথা
দেহের ভিতরকার কথা
পতঙ্গের দেহের উপরকার অনেক কথা বলা হইল; এখন ইহাদের পাকাশয় ইত্যাদি ভিতরকার খবর মোটামুটি বলিব। এখানে একটা ছবি দিলাম, ইহাতে পতঙ্গের শরীরের ভিতরকার নাড়িভুঁড়ি আঁকা আছে।
চিত্র ৩০।
আমাদের মুখের ভিতরটা সর্ব্বদাই ভিজে থাকে। ইহার উপরে যদি খাদ্য মুখে পড়ে, তবে লালা বাহির হইয়া মুখের খাদ্যকে ভিজাইয়া ফেলে। এই লালা কোথা হইতে আসিয়া মুখে জমা হয়, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। আমাদের মুখের মধ্যে চারি পাঁচ জায়গায় ছোট রসুন বা পেঁয়াজের কোষের মত মাংসগ্রন্থি আছে। লালা সঞ্চয় করিবার জন্যই এগুলির সৃষ্টি। তাই গ্রন্থিগুলিতে আপনা হইতেই লালা জমা হয় এবং তাহা প্রয়োজন-অনুসারে সরু নল দিয়া মুখের সর্ব্বত্র ছড়াইয়া পড়ে। একটু তেঁতুল বা লেবুর টুক্রা মুখে রাখিয়া তোমরা পরীক্ষা করিয়ো; স্পষ্ট বুঝিতে পারিবে জিভের গোড়া এবং নীচেকার চোয়ালের কাছ হইতে লালা আসিয়া মুখে জমিতেছে। মুখের ঐ-সব জায়গাতে লালার গ্রন্থি আছে। এইগুলি মাংসের মধ্যে বসানো থাকে; সুতরাং মুখে আঙুল দিয়া বা আয়নায় মুখের ছবি দেখিয়া সেগুলিকে দেখিতে পাইবে না। কেবল মানুষেরই মুখে যে লালা-গ্রন্থি আছে, তাহা নয়; পতঙ্গদের মুখেও উহা দেখা যায়। ফড়িং-জাতীয় পতঙ্গের মুখে ঐ-রকম গ্রন্থি দুই তিন জায়গায় আছে। খাইবার সময়ে ইহারা ঘাস পাতা বা অপর খাদ্য লালা দিয়া ভিজাইয়া গিলিয়া ফেলে।
ছবিতে প্রথমেই পতঙ্গের মাথা ও শুঁয়ো রহিয়াছে দেখিবে। তার পরেই গলার নল; এই নল দিয়া খাদ্য নামিয়া পল-কাটা থলিতে পৌঁছে। এখানে খাদ্য পরিপাক হয় না,—জমা থাকে মাত্র। ইচ্ছা করিলে অনেক পতঙ্গ ঐ থলি হইতে খাবার উগ্লাইয়া বাহির করিতে পারে। পিঁপ্ড়েরা খাদ্য এই রকমে উগ্লাইয়া নিজেদের বাচ্চাকে খাইতে দেয়; পাখীরাও তাহা করে। ইহার পরে যে থলিটি দেখিতেছ; তাহা বড় মজার। ইহার মধ্যে হাড়ের মত শক্ত জিনিসে প্রস্তুত অনেক দাঁত সাজানো আছে। পতঙ্গেরা ভালো করিয়া খাদ্য চিবাইয়া খায় না; কিন্তু খাদ্য না চিবাইলে হজমও হয় না। পেটের ভিতরে গিয়া খাদ্য যাহাতে চিবানো হয় তাহার জন্যই এই থলিতে দাঁত বসানো আছে। খাদ্য এখানে পৌঁছিলেই দাঁতের ধারে লম্বা লম্বা পাতা ও ঘাস ছোট ছোট টুক্রাতে বিভক্ত হইয়া যায়।
যাহা হউক ছবিতে এই দাঁত-ওয়ালা থলির পরেই যে মোটা থলিটি রহিয়াছে, তাহাই পতঙ্গদের পেট বা উদর। এখানে খাদ্য হজম হয়। ইহার সঙ্গে যে নল লাগানো আছে তাহা দিয়া সেই হজম-করা খাদ্য দেহের শেষ পর্য্যন্ত পৌঁছায়, এবং যাহা অনাবশ্যক তাহা বিষ্ঠার আকারে চিত্রের তলাকার অংশ দিয়া বাহির হইয়া যায়।
ছবির দুই পাশে যে সূতার মত সরু নল জটলা করিয়া রহিয়াছে, তাহা হইতে নানা রকম রস বাহির হয়, এবং সেই রসে খাদ্য হজম হয়। ছবির শেষে দুই পাশে যে, আরো দুটি থলি ও ফুলের মত অংশ দেখিতেছ, এগুলি হইতেও কয়েক রকম রস বাহির হয়। কিন্তু ইহা হজমের কাজে লাগে না। মৌমাছি, পিঁপ্ড়ে এবং কাঁক্ড়া বিছের হুলে বিষ থাকে ইহা তোমরা জান। এই বিষ-রস ঐ-সকল যন্ত্রে উৎপন্ন হয়।