প্রাচীন ভারতে নারী/দায়াধিকার

উইকিসংকলন থেকে

দায়াধিকার

 নারীদের পক্ষে একটা মুশকিল এই যে, তাঁহারা পিতৃকুলে জন্মিয়া পরে অন্তর্ভুক্ত হন শ্বশুরকুলে। অনেকে মনে করেন, তাঁহাদের যদি সম্পত্তিভাগ দেওয়া হয় তবে উভয় দিকের অংশ পাইয়া তাঁহাদের প্রাপ্য বেশি হইয়া পড়িবে। আর পিতৃকুলের সম্পত্তিরও বৃথা বহুভাগ হইবে। তাহা ছাড়া পতিগৃহ হইতে নারী পিতৃকুলের সম্পত্তির ব্যবস্থা সংরক্ষণ বা চাষবাস করিতেও পারিবেন না। একদিকে এই কথা সত্য। দুইকুলের সম্পত্তির ভাগ পাইলে তাঁহাদের ভাগ বেশি হইতে পারে। আবার দুই স্থানে তাঁহাদের দাবি হইতে পারে বলিয়া কোনো কুলেরই দাবি যদি তাঁহাদের না থাকে তবে তাহাও অন্যায় হয়। হিন্দিতে একটা কথা আছে, ধোপার যে কুকুর, সে না-ঘাটের না-ঘরের।

 বৈদিক যুগে সম্পত্তির এত জটিলতা ছিল না। ভাগাভাগিরও এত কঠিনতা ছিল না।

 তৈত্তিরীয়-সংহিতায় (৩. ১. ৯. ৪) দেখা যায়, মনু তাঁহার সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে ভাগ করিয়া দিলেন। নাভানেদিষ্ট তাহাতে বাদ পড়ায় মনু তাহাকে শিক্ষা দিলেন কিভাবে আঙ্গিরসদের প্রসন্ন করিয়া গোধন লাভ করা যায়। এই ভাগ-ব্যাপারে দেখা যায়, শুধু গবাদি জঙ্গম সম্পত্তিরই ভাগ হইয়াছিল। ভূমির ভাগ হয় নাই। তখন ভূমির তো টানাটানি ছিল না, তাই ভূভাগের প্রয়োজন উঠে নাই। কিন্তু পরে ভূমির টানাটানি হইলে ভূমি ভাগ করাই সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হইয়া উঠিল।

 এইজন্যই বৈদিক যুগে কন্যাদের গবাদি অস্থাবর সম্পত্তি দিয়া, বসন ভূষণ অলংকারাদি দিয়া পতিগৃহে পাঠানো হইত। ভূভাগ-দেওয়ার প্রয়োজন তখনও হয় নাই। তবে পরবর্তী যুগে (শতপথ-ব্রাহ্মণ প্রভৃতির সময়ে) কথা উঠিল, কন্যারা দায়াধিকার পাইবে না। মৈত্রায়ণী-সংহিতা (৪. ৬. ৪) বলিলেন, ‘পুমান্ দায়াদঃ স্ত্র্যদায়াদথ’ ইত্যাদি, অর্থাৎ পুরুষ দায়াদ, স্ত্রীরা নহে। ঋগ্বেদে কন্যাকে ‘সম্রাজ্ঞী হও’ বলিয়া যে আশীর্বাদ করিত পরবর্তী যুগে তাহা আর বলা চলিল না। বোধায়ন-ধর্মসূত্র (২.২. ৪৫-৪৬) বলিলেন, নারী পিতা স্বামী বা পুত্রের অধীনে থাকিবে, স্বাধীনতা পাইবে না। তাহারা শক্তিহীনা, কাজেই দায়াধিকারী নহে ইহাই শ্রুতির মত (২. ২. ৪৭)—

নিরিস্ত্রিয়া হ্যদায়াশ্চ স্ত্রিয়ো মতা ইতি শ্রুতিঃ।

 উত্তরাধিকারে আপস্তম্ব (১৪. ২-৪) বলিলেন, পুত্রাভাবে সপিণ্ড, সপিণ্ডাভাবে আচার্য, আচার্যাভাবে ছাত্র, অথবা দুহিতা পাইবেন। স্ত্রী শুধু পাইবেন অঙ্গধৃত অলংকার (২. ৯)। তাহা শুধু কাহারও কাহারও মতে স্ত্রীর প্রাপ্য, সর্বসম্মতিতে নহে। গৌতম বসিষ্ট প্রভৃতিরও এই মত।

 মৈত্রায়ণী-সংহিতা (৪. ৬. ৪) বলিলেন, কন্যা জন্মিলে সবাই তুচ্ছ করে, সে ফেল্‌না; পুত্র তো ফেল্‌না নহে তাই কন্যা উত্তরাধিকার পায় না, পুত্র পায়। কন্যা পরের ঘরে যায়, তাই সে তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর— তস্মাৎ স্ত্রিয়ং জাতাং পরাস্যন্তি ন পুমাংসমথ স্ত্রিয় এবাতিরিচ্যন্তে।  বেদের প্রথম দিকে সংসারে পিতাই ছিলেন কর্তা। জ্ঞাতি-বৃদ্ধেরাই সমাজকৃত্য নির্ণয় করিতেন। অর্থাৎ পুরুষদের হাতেই সব ব্যবস্থা। তাহার পর এ দেশে ভূসম্পত্তি রক্ষার জন্যও ক্রমে লড়াই প্রভৃতি করিতে হইত। তাই কি সম্পত্তি রক্ষার্থ যুদ্ধে অসমর্থ কন্যাদের আদর ক্রমে কমিল? পুত্রই তো শক্তিশালী, কন্যা নহে। তাহা ছাড়া শূদ্রাদের বিবাহ করায় নারীও সুলভ হইয়া গেল। এই ভাবটা বেদের শেষ ভাগেই দেখা যায়। মোট কথা, ক্রমেই কন্যাদের গৌরব কমিতে কমিতে চলিল। তাহার পর সমাজব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে-সঙ্গে আবার কন্যাদেরও স্থান ক্রমে একটু ভালো হইতে লাগিল। যাস্কের ‘নিরুক্ত’ দেখিলেই তাহা বুঝা যায়। তৈত্তিরীয়-সংহিতায় (৬. ৫. ৮. ২৭) আছে—

সোমো নাতিষ্ঠত স্ত্রীভ্যো গৃহ্যমানস্তং যুক্তং বজ্রং
কৃত্বা অঘ্নন্ তং নিরিন্দ্রিয়ং ভূতম্ অগৃহ্লন।
তস্মাৎ স্ত্রিয়ঃ নিরিন্দ্রিয়া অদায়াদীঃ অপীতি
পাপাৎ পুংসঃ উপস্থিতরম্ বদন্তি।

ভালো বুঝিবার জন্য সংহিতা-বচনটি সন্ধিবিচ্ছেদ করিয়া লিখিত হইল। ইহার অর্থ হইল, নারীদের দ্বারা গৃহ্যমান হইতেছে ইহা সোম সহ্য করিতে পারিল না। তাই ধৃতকে বজ্র করিয়া মারিল। যখন তাহা শক্তিহীন হইল তখন তাহারা গ্রহণ করিল। তাই নারীগণ ‘নিরিন্দ্রিয়’ অর্থাৎ শক্তিহীনা, তাহারা নীচ পুরুষ হইতেও নীচু হইয়া কথা বলে, এইজন্যই তাহারা ‘অদায়াদী’ অর্থাৎ দায়প্রাপ্তির অযোগ্য।

 এই কথাই আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ব্যাখ্যায় হরদত্ত (২.১৩.১) উদ্ধৃত করিয়াছেন। এবং তৎসমর্থনে মনুরও (৯.১৮) শ্লোক দেখাইয়াছেন—

নিরিন্দ্রিয়া অদায়াদীঃ স্ত্রিয়োনিত্যমিতি স্থিতিঃ।

বঙ্গবাসী সংস্করণে মনুর সেই শ্লোকার্দ্ধ—‘নিরিন্দ্রিয়া হ্যমস্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োঽনৃতমিতি স্থিতিঃ’ (৯-১৮)।

 ‘নিরিন্দ্রিয়’ কথাটি পারিভাষিক। তাহার আসল অর্থটা কি? এখানে নিরিন্দ্রিয় অর্থে ‘যাহার সোমপান অধিকার নাই’ ইহাই বুঝাইবে। কাজেই শ্রুতির নিরিন্দ্রিয় বলিয়া অদায়াদী কথার অর্থ অন্যরূপ হইবে। এই বিচারটি বরদরাজ তাঁহার ব্যবহারনির্ণয়ে (পৃ ৪৫৯) উত্তম রূপে দেখাইয়াছেন। পরে ব্যবহারনির্ণয় আলোচনা প্রসঙ্গে তাহা বলা যাইবে।

 ঋগ্বেদের তৃতীয় মণ্ডলের, ৩১ সূক্তের প্রথম ঋক্‌—

শাসদ্ বহ্নির্দুহিতুর্নণ্ড্যং গাৎ।

ইহার ভাষ্যে সায়ণ বলেন, প্রসঙ্গক্রমে ঋষি কুশিক একজনকে শাস্ত্রার্থ বলিতেছেন, অপুত্র পিতার পুত্রীই পুত্রিকারূপে দায়াধিকারিণী—

অপুত্রস্য পিতুঃ পুত্রী দায়াদা পুত্রিকা সতী।

এই ঋকেরও মোট কথা এই যে, পুত্রহীন পিতার কন্যা থাকিলে সেই কন্যার গর্ভজাত নাতিই পৌত্রের স্থান অধিকার করে।

 এই ঋকের মন্ত্রটির আলোচনায় যাস্কের নিরুক্তে (৩, ৪) দেখা যায়, পুত্র কন্যা দুইই প্রজনন যজ্ঞের ফল, দুইই সর্বদেহ ও হৃদয় হইতে উৎপন্ন—

প্রজনন-যজ্ঞস্য রেতসো বাঙ্গাদঙ্গাৎসংভূতস্য হৃদয়াদধিজাতস্য।

কাজেই উভয়েই দায়াদ। তাহাই এই দুইটি ঋক্‌শ্লোকেও উক্ত। আত্মাই তো পুত্র হইয়া জন্মায়। তবে কোনো কোনো আচার্য বলেন, পুরুষই দায়াদ, স্ত্রীলোক দায়াদ নহে। তাই মেয়ে জন্মাইলে লোক অবজ্ঞা করে, ছেলেকে তুচ্ছ করে না। কন্যাকে দান-বিক্রয়-ত্যাগ করা চলে, পুত্রকে দান-বিক্রয়-ত্যাগ করা চলে না। কিন্তু আর-একদল আচার্য বলেন, ছেলেকেও দান-বিক্রয়-ত্যাগ চলে, শৌনঃশেপে তাহা দেখা গিয়াছে। শুনঃশেপের উপাখ্যান ঐতরেয়-ব্রাহ্মণে (৭. ১৩-১৮) বর্ণিত।

ন দুহিতর ইত্যেকে তস্মাৎ পুমান্ দায়াদোঽদায়াদা স্ত্রীতি বিজ্ঞায়তে তস্মাৎ
স্ত্রিয়ং জাতাং পরাস্যন্তি ন পুমাংসমিতি চ স্ত্রীণাং দানবিক্রয়াতিসর্গা বিদ্যন্তে
ন পুংসঃ পুংরোঽপীত্যেকে শৌনঃশেপে দর্শনাৎ। নিরুক্ত ৩. ৪

যাস্কের বৃত্তিতে দুর্গাচার্য দেখাইয়াছেন যে, দুহিতাও দায়াধিকারী, এতদর্থে ঋক্‌ও দেখাইয়াছেন। তাহার নিষ্কর্ষ আনন্দাশ্রম সংস্করণ হইতে দেওয়া যাইতেছে, ‘দুহিতা দায়াদ্যর্মহতীত্যর্থে ঋক্’ (পৃ ২০৮)। পুত্রগণ কন্যাগণ সকলেই দায়াদ ইহা এই ঋক্‌শ্লোকদ্বয়ে বলা হইল—

পুত্রা দুহিতরশ্চোভয়েঽপি দায়াদা ইত্যৃক্‌শ্লোকাভ্যামুচ্যতে। ঐ ২০৯

লোকব্যবহারেও দেখা যায়—  লোকব্যবহারোঽপি মন্ত্রাণাং বিষয়ে ভবতি। ঐ ‘অঙ্গাদঙ্গাৎ' এই মন্ত্রে স্পষ্টই দুহিতারও পুত্রত্ব দেখা যায়—

অঙ্গাদঙ্গাদিত্যনেন দুহিতুঃ পুত্রত্বং স্পষ্টীক্রিয়তে। পৃ: ২১০

মনুবচনও সর্ব অপত্যেরই অধিকারত্ব সূচিত করে (ঐ ২১০)। তবে ব্রাহ্মণবচনে দুহিতাদের অধিকার স্বীকৃত হয় নাই (ঐ ২১০)। কারণ কন্যার দান বিক্রয় ত্যাগ চলে (ঐ ২১১)। মহাভারতে কন্যাবিক্রয় নিষিদ্ধ (ঐ)। আর ছেলেরও তো দান বিক্রয় ত্যাগ করা দেখা যায় (ঐ)। শৌনঃশেপ উপাখ্যানেই তাহার প্রমাণ।

 যাস্কেই দেখা গেল, স্বায়ম্ভুব মনু সৃষ্টির আদিতেই বলিয়াছেন, ছেলেমেয়ের মধ্যে দায়াধিকারে ধর্মতঃ কোনো প্রভেদ নাই—

অবিশেষেণ পুত্রাণাং দায়ো ভবতি ধর্মতঃ।
মিথুনানাং বিসর্গাদৌ মনুঃ স্বায়ম্ভুবোাঽব্রবীৎ। নিরুক্ত ৩.৪

যাস্ক এই বিবাদ মিটাইতে গিয়া বলিলেন, পুত্র না থাকিলে কন্যারই এইরূপ অধিকার। পুত্রিকা বলিয়া এই দাবি। ‘সপিণ্ড ধনাধিকার পাইবে’ এই পুরাতন কথাটা লইয়া গোল বাধিল। পিণ্ড শব্দে দেহ। সেই অর্থে জ্ঞাতিরা বিত্ত পায়। আর শ্রাদ্ধে দেয় পিণ্ড অর্থ ধরিলে কন্যাও শ্রাদ্ধে অধিকারিণী। পুত্রাভাবে শ্রাদ্ধের অধিকারী বলিয়া কন্যার গৌরব পরে ক্রমে বাড়িতে লাগিল। তখনকার দিনে দত্তকপুত্রের স্থান খুবই নীচে ছিল।

 তাহার পর আসিল কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্রের যুগ। অর্থশাস্ত্র (Jolly) বলিলেন, পুত্র থাকিলে পুত্র অথবা ধর্মবিবাহে জাতা কন্যা উত্তরাধিকারী—

পুত্রবতঃ পুত্রা দুহিতরো বা ধর্মিষ্ঠেষু বিবাহেষু জাতাঃ। ৩. ৫.৬০, দায়াক্রমঃ, ৯

 ধর্মবিবাহে জাত না হইলেও কন্যা অধিকারিণী হয়, তবে তখন ভাই ও সহজীবীরা পাইবে দ্রব্য এবং সেই কন্যা পাইবে রিক্‌থ (ঐ ৮)।[১]

 আমরা প্রধানতঃ এখানে দেখিতেছি সামাজিক ইতিহাসের দৃষ্টিতে ব্যবস্থাপকদের পক্ষে তাহা জানা প্রয়োজন হইলেও আরও নানাদিকে তাঁহাদিগকে বিচার করিতে হয়।

 মনুর (৯-১১৮) সিদ্ধান্ত অনুসারে পুত্রেরা যাহা পাইবে তাহার চারিভাগের একভাগ প্রত্যেক ভাই কন্যাদের দিবে। মূলে আছে কন্যা। কুল্লুক অর্থ করিলেন, অনূঢ়া ভগিনী। অনূঢ়া ভগিনী না হইলেও যে অধিকারিণী হওয়া যায়, তাহা বুঝা যায় মনুর আর-একটি শ্লোকে— সম্পত্তি বিভাগকালে ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ বা কনিষ্ঠ যে ভাই মৃত বা সন্ন্যাসী হইবে তাহার অংশ লুপ্ত হইবে না। সহোদর ভ্রাতারা এবং সৌদর্যা ভগিনীরাও ঐ অংশ হইতে সমান ভাগ পাইবে—

ভ্রাতরো যে চ সংসৃষ্টা ভগিন্যশ্চ মনাভয়ঃ। ৯. ২১২

যাজ্ঞবল্ক্য (ব্যবহার, ৮. ১১৫) বলেন, স্বামিদত্ত বা শ্বশুরদত্ত স্ত্রীধন না থাকিলে সম্পত্তি ভাগ করিবার সময় পত্নীদেরও সমান অংশ থাকা উচিত। পুত্রদের একচতুর্থাংশ কন্যা পাইবে ইহা যাজ্ঞবল্ক্যেরও মত। যাজ্ঞবল্ক্য বলেন—

পিতুরূর্দ্ধং বিভজতাং মাতাপ্যংশং সমং হরেৎ। ব্যবহারাধ্যায়, দায়বিভাগ প্রকরণ, ৮. ১২৩

এখানে মাতারও সমানাংশ দাবির কথা স্বীকৃত। বৃহস্পতি বলেন, মায়েরা সমান অংশ, কন্যারা চারিভাগের একভাগ পাইবে—

সমাংসা মাতরস্তেষাং তুরীয়াংশশ্চ কন্যকাঃ।

 বীর-মিত্রোদয় ব্যবহার প্রকাশের প্রমেয়নিরূপণ প্রকরণে দায়ভাগে সমবিভাগে পত্নীর অংশও স্বীকৃত হইয়াছে।[২]

 মনু প্রভৃতি স্মৃতিকারদের সময়ে হয়তো পিণ্ডদিবার অধিকারিণী বলিয়া ক্রমে কন্যাদের একটু গৌরব বাড়িতে লাগিল। তাই মনু (৯. ১৩০) বলিলেন, আত্মার সমান পুত্র, পুত্রের সমান কন্যা। সেই আত্মা থাকিতে কেন অন্যে ধন হরণ করিবে?

 পূর্বে নিয়ম ছিল, পুত্রহীন লোক কন্যাকে বিবাহ দিবার সময় এই নিয়মে নিয়ত করিয়া বিবাহ দিত যে এই কন্যার পুত্র তাহার মাতামহের বংশরক্ষা করিবে। মনু এই ভেদ তুলিয়া দিলেন। তিনি বলিলেন, দৌহিত্র ও পৌত্রে কোনো ভেদ নাই—

পৌত্রদৌহিত্রয়োর্লোকে বিশেষো নোপপদ্যতে। মনু, ৯. ১৩৯

কাজেই তখন হইতে নিয়ত ও অনিয়ত পুত্রিকাপুত্রভেদ আর রহিল না। মনু (৯.১৩১) বলেন, অপুত্রের সমস্ত বিষয় দৌহিত্র পাইবে।

 বিবাহকালে বরকন্যা একত্র বসিয়া যে ধন আশীর্বাদরূপে পায় তাহাই যৌতক।

 মনু (৯.১৯৪) যে ছয় প্রকার স্ত্রীধন বলিয়াছেন তাহা অধ্যগ্নি, অধ্যাবাহনিক, প্রীতিকর্মে দত্ত, ভ্রাতৃদত্ত, মাতৃদত্ত, পিতৃদত্ত; ইহার মধ্যে তো যৌতক নাই। অথচ মনুই (৯.১৩১) বলেন, মায়ের যাহা যৌতক তাহা কুমারী কন্যারই প্রাপ্য—

মাতুস্তু যৌতকং যৎ স্যাৎ কুমারীভাগ এব সঃ।

 এই যৌতক তবে কি? বীরমিত্র বলেন, বিবাহকালে বরকন্যা একত্র বসিলে বন্ধুদের কাছে উপহারস্বরূপে প্রাপ্ত ধন, তাহাই যৌতক।[৩]

 জীমূতবাহনের দায়ভাগ শ্রীকৃষ্ণতর্কালংকার-কৃত টীকা সহিত ভরতশিরোমণি মহোদয় ১৯০৭ সালে সংস্কৃত যন্ত্র হইতে প্রকাশ করেন। তাহাতে দেখি, পুত্রহীন মৃতের পত্নী তাহার ভাগহারিণী হইবে। সনাভি সহোদররাও। এইরূপ সহোদর ভাই থাকিতেও পত্নীর অধিকার আছে বুঝা যায়—

তেষু সত্‌স্বপি পত্ন্যা ধনসম্বন্ধং বোধয়তি। পৃ ১৯০

ছেলের পুত্র না থাকিলে মাতা দায় পাইবেন। ইহাতে বৃহস্পতিরও সম্মতি আছে (ঐ পৃ ২০৫-২০৬)। বিষ্ণুশ্রুতি অনুসারে, পিতার অভাবে মায়ের অধিকার (ঐ পৃ ২০৭)।

 পুত্র না থাকিলে কন্যা অধিকারী এই কথা মনু নারদ উভয়েরই সম্মত (ঐ পৃ ১৯৪)। দুহিতাদের মধ্যে প্রথমে কুমারীরই দাবি, কুমারী কন্যা না থাকিলে বিবাহিত কন্যাও পাইবে (ঐ পৃ ১৯৫)। এ বিষয়ে পরাশরই মত দিয়াছেন[৪]—কলিতে পরাশরমতই সকলের উপরে— ‘কলৌ পারাশরঃ স্বতঃ’। তবু বিজ্ঞানেশ্বর কন্যাদের অধিকার সমর্থন করিতে গিয়া পরাশরের এই বচন উল্লেখ করেন নাই, অথচ কাত্যায়ন ও বৃহস্পতির বচনের উপর নির্ভর করিয়াছেন।

 বৈদিক যুগের শেষভাগে কন্যাদের দায়াধিকার যে যাইতে বসিয়াছিল তাহার ক্রমে একটু উন্নতি দেখা গেল যাস্কের যুগে। তিনি কন্যাদের অধিকারবিরোধী, এবং অধিকার-সমর্থক, উভয়দলের কথা লইয়া বিচার করিয়া অপুত্রের ধনের অধিকার কন্যাতে দিয়া সমস্যার মীমাংসা করিতে চাহিলেন। কৌটলীয় অর্থশাস্ত্রে দেখা যায়, নারীদের দায়াধিকার আর-একটু ভালো হইয়াছে। মনু প্রভৃতি স্মৃতিকর্তাদের সময়েও নারীদের দায়ের অধিকার অনেকটা স্বীকৃত হইল। কিন্তু বৈদিক যুগ হইতে ভারতে নারীদের সামাজিক স্থান যে সংকীর্ণ হইয়া আসিতেছিল তাহার আর উন্নতি হইল না। মনু নারীদের সম্বন্ধে ‘স্ত্রিয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু বিশেষোনাস্তি কশ্চন’ (৯. ২৬) বলিলেন। মনু বলিলেন, যে গৃহে নারীরা সুখী সে গৃহে দেবতারা প্রসন্ন,; স্ত্রীদের তিনি ‘রত্ন’ ও বলিলেন (২.২৩৮), স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রীতি থাকিলেই কল্যাণ (৩, ৬০)। তথাপি তিনি সামাজিকভাবে (২. ২৩৮) স্বামী ও স্ত্রীর অধিকারে সমতা দিতে রাজি ছিলেন না (৫. ১৪৭-১৪৯; ৯. ৩ ইত্যাদি)।

 তার পর আসিল নিবন্ধকারদের যুগ। অর্থাৎ বিজ্ঞানেশ্বর, রঘুনন্দন প্রভৃতি সব আচার্যগণ নানা স্মৃতি তুলনা ও বিচার করিয়া দেশ ও কালধর্ম আলোচনা করিয়া যেসব ব্যবস্থাগ্রন্থ লিখিয়া গেলেন তাহাই নিবন্ধ। মাধবের লেখা ‘পরাশর’ টীকাগ্রন্থ হইলেও তাহা নিবন্ধের মতই বৃহৎ এবং সেইরূপ বিচার ও আলোচনায় পূর্ণ এবং তাহা নিবন্ধেরই মত সর্বত্রমান্য। ইহা চতুর্দশ শতাব্দীতে লেখা।

 বঙ্গদেশে দায়বিষয়ে চলে জীমূতবাহনের দায়ভাগ, আর অন্যত্র প্রায় সর্বত্রই দায়বিষয়ে মিতাক্ষরাই মান্য। মিতাক্ষরা রক্তের সম্বন্ধ দিয়াই দারাধিকারের ক্রম-ব্যবস্থা করিয়াছেন। দায়ভাগে পিণ্ডাধিকার দিয়াই বিচার। অর্থাৎ মিতাক্ষরার মতে রক্তসম্বন্ধে যেই যত ঘনিষ্ঠ তাহারই তত বেশি দায়াধিকার। আর দায়ভাগে জীমূতবাহন দেখিয়াছেন, শ্রাদ্ধে এবং পিণ্ডে কাহার দাবি বেশি। ‘সপিণ্ড’ কথাতে দুইই সূচিত হয়। পিণ্ডের অর্থ দেহও হয়।

 আসলে বৈদিক যুগের পর নারীগণের অধিকার যে ক্রমে একটু ভালো হইল তাহার কারণ এই পিণ্ড দিবার অধিকার।

 যুক্তির দিকেও দেখা যায়, নারীদের যদি স্বাধীনতা না-ই দেওয়া হয়, আর অভিভাবকের মৃত্যুর পর তাহারা যদি তাহার ধনাধিকারও না পায় তবে তাহাদের ভরণপোষণের হইবে কি? স্বাধীন উপার্জন অসম্ভব, কারণ স্বাধীনতা নাই। জ্ঞাতিরা পোষণ করিবেন এইরূপ শাস্ত্রীয় বিধান থাকিলেও হয়তো প্রত্যক্ষ দেখা গেল জ্ঞাতিরা পোষণ করেন না। তাহাতে পেটের জন্য নারীদের নানা নৈতিক অধোগতি স্বীকার করিতেই হয়। কখনও যাহাকে স্বাধীনতা দেওয়া হয় নাই, সাধু স্বাধীন অর্জনের কোনো পথই যাহার পক্ষে উন্মুক্ত নাই, তাহার পক্ষে হঠাৎ বিষম দশায় পড়িলে খুবই হীনবৃত্তি স্বীকার ছাড়া গতি কি? এমন করিয়াই অনেক ক্ষেত্রে পতিতাদের দলবৃদ্ধি হয়। বাল্যকালে কাশীতে দেখিয়াছি বহু বহু অভিজাতা নারী জ্ঞাতিদের ও পিতৃকুলের লোকের দ্বারা বৃত্তিবঞ্চিত হইয়া কাশীতে দাসী বা পাচিকার বৃত্তি গ্রহণ করিয়া জীবন কাটাইয়াছেন। কেহ কেহ ভিক্ষা করিতে বাধ্য হইয়াছেন। দুরবস্থায় পড়িয়া অনেকে পতিতা হইতেও বাধ্য হইয়াছেন। ইঁহাদের অনেকেরই নাম ধাম ও ইতিহাস সেখানে অনেকে জানিতেন। এইসব কারণেই হয়তো নিবন্ধকারগণের অনেকেই নারীদের দায়াধিকার অল্পবিস্তর সমর্থন করিলেন। অবশ্য সেক্ষেত্রেও পুরুষদেরই প্রাধান্য সর্বাগ্রে দেওয়া হইল।

 এখন তো প্রাচীন যুগের একান্নবর্তী-পরিবার-প্রথা ভাঙিয়াই গিয়াছে। চাকুরির জন্য ভদ্রলোকেরা সবাই এখন ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই। এখন যদি চাকুরির স্থলে কেহ মারা যান তবে একমুহূর্তে পরিবার নিরাশ্রয়। একান্নবর্তীপরিবার প্রথা-লোপের সঙ্গেসঙ্গে এই এক মহাসমস্যা দাঁড়াইয়াছে। ইহাতে যে দায়ে পড়িয়া কতস্থানে কত দুর্গতি ও দুর্নীতি বাড়িয়া চলিয়াছে তাহা বলা যায় না। অবস্থা দেখিয়া ব্যবস্থা না করিলে আর গতি নাই। এখনও যদি নারীদের দায়াধিকার সম্বন্ধে ভালো কোনো ব্যবস্থা না হয় তবে ভবিষ্যতে আরও কত দুর্গতি আছে, তাহা কে জানে?

 নিবন্ধকারেরাও বোধ হয় এইসব কারণেই পরবর্তী শ্রুতিতে ‘স্ত্রিয়ঃ অদায়াদীঃ’ বলা সত্ত্বেও নারীদের দায়াধিকারসমর্থনে যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন। এই বিষয়ে বিজ্ঞানেশ্বরের মিতাক্ষরা হইতে জীমূতবাহনের দায়ভাগ ভালো। দায়ভাগে নারীদের অধিকার একটু বেশি দেওয়া হইয়াছে। কাশ্মীরের ‘অপরার্ক’ (দ্বাদশ শতাব্দী) তো স্পষ্টই বলিলেন, শ্রুতির অভিপ্রায় পুত্র থাকিলে কন্যারা পাইবে না। তবে পুত্র না থাকিলে কন্যারা পাইবে না কেন? স্মৃতি-চন্দ্রিকায় বলা হইল, কুমারী এবং সধবারা দায়াধিকার পাইতে পারেন। এই কথাতে বিধবাদের বাদ দেওয়া হইল। যদিও ইহাতে বিধবার প্রতি সুবিচার করা হইল না তবু দেবণ্ণভট্ট শ্রুতির অন্যায় ব্যবস্থাকে যতদূর সরাইয়া রাখা যায় তাহার চেষ্টা করিয়াছেন। নিবন্ধকারেরা যতটা পারেন করিয়াছেন কিন্তু এখন অবস্থাগতিকে এই বিষয়ে আরও সুবিচার ও সংস্কারের প্রয়োজন। শুধু সামাজিক স্বাধীনতা হইলেই তো হইবে না, আইনের বাধাও দূর করিতে হইবে। বোম্বাই প্রদেশে মিতাক্ষরা চলে। সে দেশে নারীদের অবরোধ নাই, কিন্তু মিতাক্ষরাতে নারীদের দায়াধিকার সংকুচিত। বাংলাদেশে নারীদের অবরোধ আছে। অথচ বাংলাদেশেই নারীদের দায়াধিকার অপেক্ষাকৃত ভালো।

 ধর্মব্যবহারে বেদ ও স্মৃতি মান্য হইলেও সারা ভারতবর্ষে এখন লোকে সাধারণতঃ চলে নিবন্ধকারদের নির্দেশ অনুসারে। বিচারালয়ে সাধারণত বাংলাদেশে জীমূতবাহনের দায়ভাগ (একাদশ শতাব্দী), রঘুনন্দনের দায়তত্ত্ব বা দায়ভাগতত্ত্ব (ষোড়শ শতাব্দী) চলে। রঘুনন্দন অনেকটা জীমূতবাহনেরই অনুসরণ করিয়াছেন। জীমূতবাহন আসাম এবং নেপালেও চলে। আসামের প্রামাণ্য নিবন্ধকার পীতাম্বর সিদ্ধান্তবাগীশও (ষোড়শ শতাব্দী) জীমূতবাহনের অনুসরণ করিয়াছেন। তাঁহার দায়-কৌমুদী বিবাদকৌমুদীর অন্তর্গত। তাহা ছাড়া ভবদেব ভট্ট, শ্রীকৃষ্ণ তর্কালংকার, শ্রীনাথ তর্কচূড়ামণি, রামভদ্র, অচ্যুতানন্দ, মহেশ্বর প্রভৃতির মতামতও বঙ্গদেশে সমাদৃত। মিথিলাতে বিজ্ঞানেশ্বর-কৃত মিতাক্ষরা (একাদশ শতাব্দী) খুবই সমাদৃত। মিতাক্ষরা বঙ্গ আসাম ও পূর্বনেপাল ছাড়া ভারতের প্রায় সর্বত্র প্রচলিত। উড়িষ্যা কাশী বিহার দক্ষিণভারত ও উত্তরভারতে ইহা অতিশয় সমাদৃত। মিথিলাতে মিতাক্ষরা ছাড়া চণ্ডেশ্বরের বিবাদরত্নাকর (চতুর্দশ শতাব্দী), বিবাদ-চন্দ্র (পঞ্চদশ শতাব্দী), বাচস্পতিমিশ্রের বিবাদ-চিন্তামণি (ঐ) ব্যবহার-চিন্তামণি (ঐ), কমলাকর ভট্টের বিবাদ-তাণ্ডব (সপ্তদশ শতাব্দী) প্রভৃতিও খুব চলে। চণ্ডেশ্বরের কিছু স্বাধীন মত ছিল, আর বাকি সকলেই মিতাক্ষরার পথবর্তী। কাশী প্রদেশে মিত্রমিশ্রের (সপ্তদশ শতাব্দী) বীর-মিত্রোদয় সমাদৃত। মিতাক্ষরা তো আছেই। নির্ণয়সিন্ধুও কাশী প্রদেশে চলে। পঞ্জাবে মিতাক্ষরা ও বীরমিত্রোদয় চলে। কাশ্মীরে চলে অপরার্ক।

 মহারাষ্ট্র, উত্তরকর্ণাট, গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশে চলে মিতাক্ষরা, বিশ্বেশ্বরভট্টের মদন-পারিজাত (চতুর্দশ শতাব্দী), নীলকণ্ঠ ভট্টের ব্যবহার-ময়ূখ (সপ্তদশ শতাব্দী)। নীলকণ্ঠ দেবণ্ণভট্টের রীতি অনেকটা অনুসরণ করিয়াছেন।

 মান্দ্রাজ প্রদেশে প্রচলিত দেবণ্ণভট্টের স্মৃতি-চন্দ্রিকা (দ্বাদশ শতাব্দী)। বরদরাজকৃত ব্যবহারনির্ণয়-রচনার যে কাল অধ্যাপক কানে নির্দেশ করিয়াছেন তাহা ঠিক নহে। মাধবের পরাশর-টীকাও এই অঞ্চলে অতিশয় সম্মানিত। মহারাজ প্রতাপরুদ্রের সরস্বতী-বিলাস (ষোড়শ শতাব্দী) উড়িষ্যায় রচিত হইলেও দক্ষিণভারতে বিলক্ষণ সম্মানিত।

 এই সব গ্রন্থ ও আদালতের নজির দেখিয়া এখন বিচার চলে। সঙ্গে সঙ্গে মেন সাহেবের রচিত Hindu Law, কোলব্রক রচিত Digest, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত Marriage and Stridhana, মোল্লা রচিত Hindu Law প্রভৃতি এখন মান্য গ্রন্থ।

 সেই যুগেও নিবন্ধকারদের মধ্যে যাঁহারা নারীদের এই দুর্গতির বিষয় লক্ষ্য করিয়া বেদপ্রমাণ লইয়া বিচার করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে দুইটি নাম উল্লেখযোগ্য। একজন হইলেন দক্ষিণভারতের বরদরাজ; তাঁহার ব্যবহারনির্ণয় ১২৫০ খ্রীস্টাব্দের পরে হইতে পারে না। তাহার পরেই উল্লেখযোগ্য সেই দেশেরই মাধবাচার্য লিখিত দায়-বিভাগ (চতুর্দশ শতাব্দী)।

 শ্রুতির ‘নিরিন্দ্রিয়’ বলিয়া স্ত্রীলোকেরা যে দায়াধিকারী হইবে না তাহার অর্থ যে একেবারে ভিন্ন, তাহা প্রথম দেখাইলেন ব্যবহার নির্ণয়। মাধব তাঁহাকেই অনুসরণ করিলেন।

 নারীদের বিবাহ প্রভৃতি সব বিষয়েই ব্যবহারনির্ণয়ের বিচার দেখা উচিত। তাই ব্যবহারনির্ণয়ের একটু বিশদ পরিচয় পরবর্তী প্রকরণে দেওয়া যাইতেছে। তাই পরবর্তী প্রকরণে আগাগোড়া বরদরাজের বিচারপদ্ধতিই আলোচনা করা যাইতেছে।

 ব্যবহারনির্ণয় ১২৫০ খ্রীস্টাব্দের পূর্বে লিখিত। তখন ভারতের বড় সাম্রাজ্য সব ধ্বংস হইয়াছে, মুসলমানদের আক্রমণে দেশ ব্যস্ত। বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপিত তখনও হয় নাই, তবে হিন্দুসংস্কৃতির রক্ষার জন্য এক বিরাট চেষ্টা চলিতেছিল। বরদরাজের গ্রন্থে সেই চেষ্টার পরিচয় পাই। যুক্তিযুক্ত ব্যবহারের দ্বারা যাহাতে হিন্দুসমাজ শক্তিশালী হয় সেই প্রয়াসই ছিল বরদরাজের।

  1. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে পণ্ডিত শ্রীনারায়ণচন্দ্র ভট্টাচার্য (যোগেন্দ্র-রিসার্চ প্রাইজ প্রবন্ধ) ‘হিন্দু-স্ত্রীধনাধিকার’ নামে একখানা ভালো পুস্তক বাহির করিয়াছেন। যাঁহারা এই বিষয়ে খুঁটিনাটি সব সিদ্ধান্ত জানিতে চাহেন তাঁহাদের পক্ষে এই গ্রন্থখানি পড়া উচিত। তাঁহার গ্রন্থ আইনব্যবসায়ী ও স্ত্রীধন লইয়া যাহাদের কাজ করিতে হয় তাঁহাদের পক্ষে অতিশয় উপাদেয়।
  2. দায়ভাগে সমবিভাগে পত্নীনামপাংশঃ, Vol. vii, পৃ ৪৪৯
  3. বীরমিত্রোদয় ব্যবহার-প্রকাশের প্রমেয়নিরূপণ প্রকরণে, Vol. vii, পৃ ৫৪৮
  4. অপুত্রস্য মৃতস্য কুমারী রিক্‌থং গৃহ্ণীয়াৎ তদভাবে চোঢ়া। ঐ, ১৯৫