বিষয়বস্তুতে চলুন

মার্কাস্‌ অরিলিয়সের আত্মচিন্তা

উইকিসংকলন থেকে

মার্কাস্‌ অরিলিয়সের আত্মচিন্তা


মার্কাস্ অরিলিয়সের আত্মচিন্তা।

শ্রীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্ত্তৃক

সঙ্কলিত।

শ্রীলালবিহারী বড়াল কর্ত্তৃক

প্রকাশিত।

বড়াল পাড়া, হুগলী।

৬ নং সিমলা ষ্ট্রীট্, কলিকাতা,

এমারেল্ড্‌ প্রিণ্টিং ওয়ার্কস্ হইতে

শ্রীবিহারিলাল নাথ কর্ত্তৃক মুদ্রিত।

১৩১৮ সাল।

মূল্য ১৲ টাকা।

Who noble ends by noble means obtains,
Or failing, smiles in exile or in chains,
Like good Aurelius let him reign or bleed,
Like Socrates, that man is great indeed.

Pope’s Essay on Man.

সতত সুমহৎ কার্য্য সাধি, যে লভে সুমহৎ ফল
ভগ্ন মনোরথ হোলেও সহাস্য বদন নির্জ্জন বাসে
হোক্ রাজ্যভোগ বসি রাজসিংহাসনে অরলিয় সম
কিম্বা সক্রেটিস্ ন্যায় উৎসর্গি জীবন সত্যের লাগি
তিনিই যথার্থ মহৎলোক ভুবনে জানিও নিশ্চয়।

শ্রীলালবিহারী বড়াল।

সূচনা পত্র।

 আমার অন্তরতম প্রিয়সুহৃদ্‌ শ্রীমান্ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের টিণ্ডেরিয়ায় অবস্থানকালে তাঁহাকে নিম্নলিখিত পুস্তকগুলি পাঠ করিতে দি—

 1. Hervey’s Meditations and Contemplations.

 2. Meditations of Marcus Aurelius.

 3. Consolations of Philosophy.

 4. Sturm’s Reflections on the works of God.

 5. Diary of golden thoughts.

 6. Fenelon's Ancient Philosophers.

 তিনি এই সকল পুস্তক পাঠ করিয়া Marcus Aureliusএর আত্মচিন্তার উচ্চভাবে বিমোহিত হইয়া একেবারে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ইহার বঙ্গানুবাদ লোকহিতার্থে প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারিলেন না। তদনুসারে বিগত ১৮২৯ শকের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার ফাল্গুন মাসে ইহা প্রথম প্রকাশিত হয়।

 আমি তাহা পাঠ করিয়া অত্যন্ত আনন্দিত হই, এবং পুনরায় কবে প্রকাশিত হইবে, তজ্জন্য প্রতীক্ষা করিয়া থাকি। ক্রমে ইহা ১৮৩০ শকের আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও চৈত্রে এবং ১৮৩১ শকের জ্যৈষ্ঠ, শ্রাবণ ও ভাদ্রে প্রকাশিত হইয়া শেষ হয়। আমি বঙ্গভাষায় এমন অত্যুজ্জ্বল রত্ন প্রকাশিত হইল দেখিয়া যৎপরোনাস্তি আনন্দিত হই, এবং সর্ব্বসাধারণে এই সকল অমূল্য উপদেশ প্রচার জন্য তাঁহাকে পত্র লিখি। তিনি তাঁহার স্বাভাবিক মহত্ত্ব ও উদারতাগুণে আমাকে এই পুস্তকের সত্ত্বাধিকার অর্পণ করেন।

 জনহিতকর বহুবিধ কার্য্যে হস্তক্ষেপ প্রযুক্ত, আমি যথা সময়ে ইহা প্রকাশ করিতে পারি নাই। পরমপিতা পরমেশ্বর ইহা প্রকাশের শুভযোগ আমাকে আজ দিলেন। আমিও আনন্দমনে ইহা প্রকাশ করিলাম। ইহাতে যদ্যপি একটিও নরনারীর বিবেক ও বৈরাগ্য জাগ্রত হওত আত্মবোধ সমুদিত হয়, তাহা হইলে আমার পরিশ্রম সার্থক বোধ করিব।

বড়াল পাড়া,
হুগলী।
শুভ ১৩ই আষাঢ়,
১৩১৮ সাল।
দীনহীন
শ্রীলালবিহারী বড়াল।

মার্কাস্‌ অরিলিয়সের

জীবন-বৃত্তান্ত।

 মার্কাস্‌ অরিলিয়স্‌ অ্যাণ্টনাইনস্‌ দেব-পূজকদিগের মধ্যে একটি অত্যুজ্জ্বল রত্ন। তিনি রোম নগরিতে ১২১ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার জন্মদিন কেহ ২১শে কেহ ২৬শে এপ্রিল বলিয়া থাকেন। তাঁহার পিতা Annius Verus, তাঁহার মাতার নাম Domicia Calvilla কিম্বা Lucilla. তাঁহার উভয় মাতৃ ও পিতৃকুল মহৎ বংশসম্ভূত। মাতা উচ্চপদস্থ রাজকর্ম্মচারীসম্ভূতা এবং পিতা Numa Pompelius হইতে অধস্তন। মার্কাসের বাল্যাবস্থায় পিতৃ বিয়োগ হইয়াছিল। তাঁহাকে তাঁহার পিতামহ Annius Verus পোষ্য পুত্ররূপে গ্রহণ করেন।

 তাঁহার বিদ্যাশিক্ষা ও নীতিশিক্ষা সার্থক ও সম্পূর্ণ হইয়াছিল। তাঁহার মহৎগুণসকল প্রস্ফুটিত হইলে সম্রাট Hadrianএর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। Hadrianএর মৃত্যুর পর Antonius Pius রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইলে, মার্কাসের ভাগ্যলক্ষ্মী সুপ্রসন্ন হন। তাঁহার ১৫ বৎসর বয়সে, মনোহারিণী, প্রফুল্লহৃদয়া ও তীক্ষবুদ্ধি কন্যা Fastiniaর সহিত বিবাহ হয়। যৌবনে অরিলিয়সের বিদ্যাশিক্ষা কিরূপ সম্পূর্ণভাবে হইয়াছিল তাহার বিশেষ বিবরণ তিনি লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন।

 Professor Laing বলেন—"Such a body of teachers distinguished by their acquirements and their character will hardly be collected again, and as to the pupil we have not had one like him since."

বাল্যে তাঁহার মাতা ও পিতামহ দ্বারা যে শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন তদ্বিষয়ে তিনি তাঁহার “Meditations”এ বলিয়াছেন—

 “To the gods I am indebted for having good grandfathers, good parents, a good sister, good teachers, good associates, good kinsmen and friends, nearly everything good.”

 রোমীয় সাধারণ বিদ্যালয়ে তিনি কখনও যান নাই। Rusticus তাঁহার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ গুরু ছিলেন, তিনি সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হইলে তাঁহার গুরুকে রাজকর্ম্মচারিদিগের মধ্যে সর্ব্বপ্রধান পদে অভিষিক্ত করেন। ইহাতে তাঁহার গুরুভক্তির নিদর্শন পাওয়া যায়। তৎকালে রোমীয় প্রথানুসারে তিনি কবিতা ও অলঙ্কার শাস্ত্র Heriods Atticus এবং M. Cornelieus Frontoর নিকট শিক্ষা করেন। পরন্তু একাদশ বৎসর বয়সে আইন ও দর্শনশাস্ত্র আলোচনা আরম্ভ করেন; এই পথেই তিনি আজীবন চলিয়াছিলেন। এক্ষণে তিনি বৈরাগী Diogenitusএর সহিত পরিচিত হয়েন ও তাঁহার শিক্ষায় বিমুগ্ধ হওতঃ তাঁহাদের দলের পরিচ্ছদ পরিধান করেন, এবং দুইজন প্রসিদ্ধ ধর্ম্মশাস্ত্রজ্ঞকে শিক্ষকরূপে বরণ করেন; যথা, ১ Sextus of Chaeronea, ২ Volacianus Marcianus। তিনি সর্ব্বান্তকরণে তাঁহাদের শিক্ষা অনুশীলন করিয়াছিলেন এবং এরূপ কঠোর নিয়ম প্রতিপালন করিতেন, যে তদ্দ্বারা তাঁহার সম্পূর্ণরূপে স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়। গুরু সকাশে নিম্নলিখিত উপদেশগুলি লাভ করিয়া আজীবন প্রতিপালন করিয়াছিলেন;—যথা, ১। কঠিন পরিশ্রম। ২। ভোগবিলাস বর্জ্জন। ৩। নিন্দাবাদে ঘৃণা। ৪। বিপত্তিতে ধৈর্য্যাবলম্বন। ৫। সঙ্কল্পে দৃঢ়তা সংস্থাপন। ৬। অকপট গাম্ভীর্য্য। ৭। কোমলভাবে অন্যের দোষ সংশোধন। ৮। স্বকীয় অবকাশাভাব অথবা বিশেষ কার্য্য নিবন্ধন সময়াভাবের আপত্তি প্রচার না করা।

 তাঁহার শিক্ষার মধ্যে তিনি সতত তাঁহার মধুর কোমল সরল প্রকৃতি রক্ষা করিয়া জনসাধারণের নিকট আজীবন আদরণীয় ও প্রতিভাজন হইয়াছিলেন।

 তাঁহার সুন্দরী পত্নী Fastinia উপর্য্যুপরি ১১টা অপত্য উৎপাদন করত Taurus পর্ব্বতের পাদমূলে মানবলীলা সম্বরণ করেন। তাঁহার স্বামী তাঁহার স্মৃতি সযতনে রক্ষা করিয়াছিলেন। Fastinia দেবীরূপে পরিগণিতা হইয়াছিলেন, তাঁহার নামাঙ্কিত মোহর বাহির হইয়াছিল যাহাতে এই কথাটী লেখা আছে Pudicitia অর্থাৎ পতিব্রতা।

 এক্ষণে অরিলিয়স্‌ জার্ম্মান্‌ জাতির (Marcomanni, Quadi এবং Hormunduri) বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন, এবং বৃদ্ধাবস্থায় শ্রান্ত দেহভার ও নিঃশেষ রাজকোষ লইয়া এই গুরুতর কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়েন। ইতিপূর্ব্বে মারীভয়ে অনেক লোক বিনষ্ট হইয়াছিল এবং যাঁহারা জীবিত ছিলেন তাঁহারা নিরাশায় কালাতিপাত করিতেছিলেন। এই সকল দুৰ্বিপাক সত্ত্বেও অরিলিয়স্‌ তিন বৎসর অকুতোভয়ে ও বীরদর্পে এই যুদ্ধকার্য্যে প্রবৃত্ত হয়েন, ইহাতে শক্র দমনও হইয়া আইসে, পরন্তু জার্ম্মান্‌ সৈন্যদিগকে বিতাড়িত করিবার পূর্ব্বে তাঁহার স্বাস্থ্যভঙ্গ হয়। কেহ বলেন ৬০ বৎসর, কেহ বলেন ৭৩ বৎসর বয়ঃক্রমকালে Vindobona এক্ষণকার Vienna নগরীতে তিনি মানবলীলা সম্বরণ করেন।

 “His end was like his life–deliberate, unflinching, resolute. Six days of inability to eat or drink, through which the habit of duty struggled against the failing body.”

 রোমীয় ইতিহাসে তাঁহার নাম জ্বলন্ত অক্ষরে বিরাজ করিতেছে। তাঁহার সুখ্যাতি, কেবল মাত্র খৃষ্টান নিগ্রহ কলঙ্ক ব্যতীত অটুট রহিয়াছে।

 “Marcus, my father! Marcus, my brother! Marcus, my son!” cried the bereaved citizens.

 At his funeral the ordinary lamentations were omitted, and men said to one another “He whom the gods lent us, has rejoined the gods”.

 His ashes were deposited in the tomb of Hadrian. His death was lamented throughout the empire. The sculptured pillar erected by M. Aurelius and the senate to his memory “the Antonine Colum” is still one grand ornament of Rome. He was ranked amongst the gods and almost every person had a statue of him in their houses.

 একজন খ্যাতনামা ইয়োরোপীও পণ্ডিত বলিয়াছেন—

 “Aurelius regarded himself as being, in fact, the servant of all. It was his duty, like that, of the bull in the herd, or the ram among the flocks; to confront every peril in his own person, to be foremost in all the hardships of war; and most deeply immersed in all the toils of peace. What gives the sentences of Marcus Aurelius their enduring value and fascination is that they are the gospel of his life. His practice was in accordance with his precepts, or rather his precepts are simply the records of his practice.—To the saintliness of the cloister he added the wisdom of the man of the world.”

 “In the whole range of Greek literature no work (excepting the New Testament) has wider vogue and currency, than these untutored meditations of the Imperial moralist. Their spell lies in their sincerity; in them through endurance, through isolation, and through self-restraint, soul speaks to soul; sombre though they be, subdued and passionless, yet the words “have hands and feet”; and they become, as has been said, a sort of “high-water mark of unassisted virtue.” They are not congenial to all moods or temperaments—but in their own province they possess a singular power of dignifying duty, of shaming weakness, and of rebuking discontent. In the words of Matthew Arnold, “He remains the especial friend and comforter of all clear-headed and scrupulous, yet pure-hearted, and upward-striving men, in those ages most especially that walk by sight, not by faith, but yet have no open vision. He cannot give such souls, perhaps, all they yearn for, but he gives them much; and what he gives them they can receive.”

দীনহীন

শ্রীলালবিহারী বড়াল।

পরিচ্ছেদসমূহ (মূল গ্রন্থে নেই)

সূচীপত্র