হিতদীপ/ক্ষমা

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
ক্ষমা।

ক্ষমাগুণ জগতের অতি হিতকর
এ গুণের গুণে হয় বশীভূত নর।
ক্ষমাগুণে নরে করে ত্রিভুবন জয়,
ক্ষমী ইহ পরলোকে লভে সুখচয়।
সুখময়ী ক্ষমা! তুমি বর দাও যারে
ক্রোধের শকতি কিবা পরশে তাহারে,
সে জন বিপুল-অরি সঙ্কুল সংসারে,
হইয়া অজাত-শত্রু সুখে বাস করে।
কি আশ্চর্য্য একি বীর্য্য দেখি ক্ষমা তব,
নিন্দায় বিতর তুমি সন্তোষ বিভব।
যদি কোন জন নিন্দে ক্ষমাশীল জনে,
তবে সেই লভে তোষ ভাবি ইহা মনে,
“নিন্দিয়া আমায় লভে সন্তোষ এজন
এ হতে সুখের কিবা আছে হে কারণ?
পরের সন্তোষ তরে অসুলভ ধন
বিতরে নিয়ত মরি সাধু নরগণ।”
শুনি ক্ষমী অপরের পরুষ বচন,
ক্ষমার ভবনে পশি লভে তোষ-ধন,
কিন্তু শোকাকুল হয় ভাবি ইহা মনে
শীলতা রহিত হল এ মোর কারণে।

হায়রে, এ গুণ মরি কত গুণ ধরে,
বর্ণিতে কে পারে তাহা ভুবন ভিতরে?
প্রতি-অপকারে হয় পারক যে জন
ক্ষমা গুণ হয় তার পরম ভূষণ,
কিন্তু যেই অপারক প্রতি-অপকারে,
ক্ষমাশীল বলি সেও আদৃত সংসারে।
নিত্যক্ষমী মহা যোগী ইহ পর কালে
সুখের সাগরে ভাসে, না বাধে জঞ্জালে।
যদিচ নিয়ত ক্ষমা যোগী সমাদরে
তথাপি গৌরব তার সবে নাহি করে,
যেহেতু, নিয়ত-ক্ষমী সহে অপমান
হায়রে, মরণাধিক যার পরিমাণ।
নাহি মানে দাস, দাসী, অরি, পরিজন
জীবনে তাহার ঘটে সতত মরণ।
গ্রহণ করিতে তার রতন-নিচয়
নিয়ত নিরত কত দাসগণ হয়,
আসন, বসন, যান, বাহন, ভূষণ,
অথবা, ভোজন-পান-ভজন, ভবন,
সকলি হরিয়া লয়, অধিকৃত জনে
আদেশ না পালে তার অনুচরগণে।
একারণ নিত্য ক্ষমা ত্যজে বহু জন
ক্ষমা কাল হেন রূপ করি নিরূপণ—

পূর্ব্ব-উপকারী জনে ক্ষমিবে সতত,
ঘটিলেও গুরুতর অপরাধ শত।
অজ্ঞানতা-বশে দোষী ক্ষমার আধার,
অভিজ্ঞতা-চয় নয় সুলভ সবার।
জ্ঞানবশে দোষী যদি বলে এ বচন—
‘না বুঝে করেছি দোষ, ক্ষম মহাজন,’
তেমন কপটাচারী নরাপম জনে
লঘু দোষে গুরু দণ্ড কর অনুক্ষণে।
ক্ষমিবে নিখিল জীবে দোষে একবার,
দ্বিতীয়ে দণ্ডিবে, হৌক লঘু অপকার।
হেন রূপ বিচারিয়া সদা মনে মনে,
হৃদয় ভূষিত কর ক্ষমা-বিভূষণে।