হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা/বঙ্গ দেশীয়দিগের স্বস্ব পত্নীগণের প্রতি ব্যবহার

উইকিসংকলন থেকে

বঙ্গ দেশীয়দিগের স্বস্ব পত্নীগণের প্রতি ব্যবহার।

 বাল্যবিবাহোপলক্ষে পূর্ব্বেই কথিত হইয়াছে, যে নারীগণ সম্পূর্ণরূপে শ্রেষ্ঠ হইতে না পারিলে কখনই স্বামিসন্নিধানে সমাদর প্রাপ্ত হইতে পারে না। সে কথা, সপ্রমাণও বটে, কিন্তু তাহারা কি প্রকারে যে সেই পরম পদ প্রাপ্ত হইবে, এবং সেই পদ প্রভাবে পতি-অনুকম্পারূপ মোক্ষ পদ প্রাপ্ত হইয়া পরম সুখে সংসার যাত্রা নির্ব্বাহ করিতে সমর্থ হইবে, তাহার কোন সদুপায় দেখিতে পাওয়া যায় না। কারণ তাহারা পিত্রালয়ে কিছুমাত্র উপদেশ প্রাপ্ত হয় না, আর শ্বশুরালয়ে আগমন করিয়াও তত্রস্থ জনগণের নিকট কোন প্রকার শিক্ষা পায় না, তবে তাহারা কি প্রকারে প্রধানত্ব লাভ করিবে। তাহারা অন্ধকুপ সদৃশ অন্তঃপুরে অবস্থিতি করিয়া হাঁড়ী কলসি ঘটী বাটী প্রভৃতি দর্শন করিয়া কি জ্ঞানোপার্জ্জন করিবে? না বৃক্ষাদির ন্যায় তাহারা নৈসর্গিক গুণ প্রাপ্ত হইবে। তাহার উপদেশাভাবে সকল বিষয়েই অতি অজ্ঞ থাকে, এবং সেই অজ্ঞানতা বশতঃ যাহা দর্শন বা শ্রবণ করে, তদ্বিষয়ে কোন প্রকার বিবেচনা করিতে সক্ষম না হইয়া অতি অসম্ভব বিষয়কেও সম্ভব বোধে বিশ্বাস করে, ও সকলের নিকট উপহাসাস্পদ হয়।

 কোন স্থলে নির্ব্বোধের উপমা দর্শাইতে হইলে, লোকে গর্দ্দভ ও স্ত্রী-জাতির উপমাই দর্শাইয়া থাকেন, আর ইহাদিগকে স্বভাবতঃ নির্ব্বোধ ও মুখ বলিয়া কত প্রকার ব্যঙ্গ করেন, এবং নারীগণকে সর্ব্ব দোষের আধার জ্ঞান করিয়া কত প্রকার গুণই বর্ণনা করিয়া থাকেন। ইহাঁরা সকল বিষয়েই বিপরীত ভাব গ্রহণ করেন;―যথা, ‘‘নারীগণ অবলা নামে বিখ্যাত হইল কেন? কেবল পশুগণের ন্যায় কিছুই বলিতে পারে না; এবং আমরা পশুগণের উপর যেরূপ আধিপত্য করিতে পারি, এই নারীগণের উপরও সেই রূপ করিয়া থাকি, সুতরাং নারীতে আর পশুতে কিছুই বিভিন্নতা নাই। আর উহারা বামা নামে বিখ্যাত হইল কেন?—তাহাও কেবল বুদ্ধি বাম বশতঃ”। হায়! দুঃখের কথা কি বলিব, এই বর্তমান কাল বলিয়া নহে, অতি প্রাচীন কালেও নারীগণের এইরূপ সমাদর ছিল, তৎকালীন গ্রন্থ কর্ত্তারাও আমাদিগের বহুতর প্রশংসা করিয়া গিয়াছেন। যথা, “ভোজনে দ্বিগুণ, বুদ্ধিতে চতুর্গুণ, ব্যবসায়ে ছয় গুণ, কামে অষ্টগুণ ইত্যাদি।’’