বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ

হাওয়ার মধ্যে ছিলাম যে অহরহ উৎসাহে যেন আমরা উড়িয়া চলিতাম। লজ্জা ভয় সংকোচ আমাদের কিছুই ছিল না। এই সভায় আমাদের প্রধান কাজ উত্তেজনার আগুন পোহানো। বীরত্ব জিনিসটা কোথাও বা অসুবিধাকর হইতে পারে, কিন্তু ওটার প্রতি মানুষের একটা গভীর শ্রদ্ধা আছে। সেই শ্রদ্ধাকে জাগাইয়া রাখিবার জন্য সকল দেশের সাহিত্যেই প্রচুর আয়োজন দেখিতে পাই। কাজেই যে অবস্থাতেই মানুষ থাক্ না, মনের মধ্যে ইহার ধাক্কা না লাগিয়া তো নিষ্কৃতি নাই। আমরা সভা করিয়া, কল্পনা করিয়া, বাক্যালাপ করিয়া, গান গাহিয়া সেই ধাক্কাটা সামলাইবার চেষ্টা করিয়াছি।”

 এই সভার কোন সুনির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী ছিল না। দল বাঁধিয়া শিকারে যাওয়া, বাগান-বাড়িতে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে চড়ুইভাতি করা, ঝড়ের মধ্যে গঙ্গার ধারে দাঁড়াইয়া সকলে মিলিয়া চীৎকার করিয়া জাতীয় সংগীত গান করা প্রভৃতি যখন যাহা খেয়াল হইত, তাহাই সদস্যেরা করিতেন। স্বদেশী দেশলাইয়ের কারখানা, কাপড়ের কল তৈয়ারি প্রভৃতিও তাঁহাদের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সভার সভাপতি রাজনারায়ণবাবু সদস্যদের পিতামহের বয়সী হইলেও, তাঁহার মনটা শিশুর মতই সরল ছিল, আনন্দে ও উৎসাহে তিনি কিশোর সদস্যদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ তাঁহার ‘জীবন-স্মৃতি’তে অমর তুলিকায় রাজনারায়ণ বসুর যে চিত্র অঙ্কিত করিয়া গিয়াছেন, তাহা চিরদিন উজ্জ্বল