সিরাজদ্দৌলা (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়)/কলিকাতা-আক্রমণ

উইকিসংকলন থেকে

চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ।

কলিকাতা আক্রমণ।

৭ই জুন প্রাতঃকালে কলিকাতার ইংরাজসওদাগরেরা সংবাদ পাইলেন যে,কাশিমবাজার নবাবের হস্তগত হইয়াছে; স্বয়ং সিরাজদ্দৌলা সসৈন্যে কলিকাতা আক্রমণ করিবার জন্য যুদ্ধযাত্রা করিতেছেন! সেই দিনই ঢাকা, বলেশ্বর, জগদীয়া, প্রভৃতি মফঃস্বল কুঠীর ইংরাজ-কর্মচারী দিগকে তহবিলপত্র কুক্ষিগত করিয়া নিরাপদ স্থানে সরিয়া পড়িবার জন্য তাড়াতাড়ি পত্র লেখা হইল।[১] মজার ড্রেক তখন কলিকাতার গভর্ণর। তিনি বাহুবলে নগররক্ষা করিবেন বলিয়া, সেনাদল সংগ্রহ করিবার জন্য নগরের মধ্যে ঢোল পিটিয়া দিয়া, সবিশেষ উৎসাহের সঙ্গে কলিকাতাবাসী ইংরাজ, ফিরিঙ্গী, আরমানী, পর্ত্তূগীজ,—সকলকেই পরম সমাদরে সম্মিলিত করিয়া, রীতিমত সমর-কৌশল শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন।

 ইংরাজ ইতিহাস-লেখক জেমস্ মিল লিখিয়া গিয়াছেন যে,—ইংরাজদরবার কোন দিনই নবাবের নিকট কাকুতি মিনতি জানাইতে ত্রুটি করেন নাই; সুতরাং তাঁহারা স্বভাবতই ভাবিয়া রাখিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলা আর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা মারিবেন না,—কেবল সেই ভরসায় নিশ্চিন্ত হইয়াই ইংরাজেরা সময় থাকিতে নগররক্ষার জন্য কোন রূপ আয়োজন করিবার চেষ্টা করেন নাই।[২]

 স্বদেশীয় বণিক সমিতির পরাজয়কলঙ্ক অপসারণ করিবার পক্ষে ইহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট কৈফিয়ৎ ইংরাজের ইতিহাসে অল্পই দেখিতে পাওয়া যায়। এই কৈফিয়ৎ অত্যন্ত মুখরোচক; সিরাজদ্দৌলার অমানুষিক নির্দ্দয় স্বভাবের অভ্রান্ত নিদর্শন; এবং পরবর্ত্তী লেখকসম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক গবেষণার উৎকৃষ্ট পথ-প্রদর্শক। কিন্তু ইহা যেমন সুন্দর সুকৌশলপূর্ণ, সেইরূপ সরল সত্যসংযুক্ত বলিয়া গৃহীত হইতে পারে না।

 ইংরাজেরা যে যথোপযুক্তভাবে নগররক্ষার সুব্যবস্থা করিতে ত্রুটি করিয়াছিলেন, সে কথা সত্য হইলেও, ইংরাজের অপরিণামদর্শিত্বই তাহার প্রধান কারণ। তাঁহারা যে কায়মনোবাক্যে সিরাজদ্দৌলাকে যৎপরোনাস্তি উত্ত্যক্ত করিয়া তুলিয়াছিলেন, তাহা কাহারও অগোচর ছিল না। তাহার পর যখন সংবাদ পাইলেন যে, মর্ম্মাহত সিরাজদ্দৌলা কাশিমবাজার অবরোধ করিয়া, ইংরাজ রাজকর্ম্মচারী ওয়াট্‌স্‌ সাহেবকে কারারুদ্ধ করিয়া মুচলিকা-পত্র স্বাক্ষরিত করাইয়া লইয়া, স্বয়ং সসৈন্যে যুদ্ধ যাত্রা করিতেছেন, তখন আর নিশ্চিন্ত থাকিবার অবসর কোথায়? তথাপি ইংরাজেরা নগর-রক্ষার জন্য যথোপযুক্ত আয়োজন করিলেন না কেন? সিরাজদ্দৌলার বিচিত্র ইতিহাসের আদ্যোপান্ত যেরূপ রহস্যপরি- পূর্ণ, ইংরাজবণিকের এরূপ বিমূঢ় ব্যবহারের মূলেও সেইরূপ নিগূঢ় রহস্য বর্ত্তমান।

 ইংরাজেরা জানিতেন যে, সিরাজদ্দৌলার রাজসিংহাসন “নলিনী দলগতজলমির তরলং,”—কখন্ কোন্ ফুৎকারে উড়িয়া যাইবে, তাহার কিছুমাত্র নিশ্চয়তা নাই। তাঁহার সেনানায়কদিগের মধ্যে অনেকেই অর্থগৃধ্নু; যাঁহারা মন্ত্রণাদাতা পাত্রমিত্র, তাঁহারাও অনেকেই মন্ত্রৌষধির ক্রীতদাস; সিংহাসন কাহার,—সিরাজের না শওকতজঙ্গের,—এ সকল গুরুতর প্রশ্নের এখনও মীমাংসা হইতে বিলম্ব রহিয়াছে; এমন অব- স্থায় ইংরাজেরা মনে করিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলার কথায় দুর্গ- প্রাকার চূর্ণ করিবেন কেন? তিনি কি শক্রসঙ্কুল রাজসিংহাসন পশ্চাতে ফেলিয়া স্বয়ং সসৈন্যে এত দুর অগ্রসর হইতে সাহস পাইবেন? এ যুদ্ধসজ্জা কেবল বাহ্যাড়ম্বর ভিন্ন আর কি হইতে পারে? ইহার জন্য আবার প্রাণপণ করিয়া নগররক্ষার আয়োজন করিয়া কি হইবে? বাহ্যাড়ম্বর বিস্তার করিবার জন্য নবাব-সেনা সত্য সত্যই কলিকাতা পর্য্যন্ত অগ্রসর হইলেই বা আতঙ্কিত হইবার কারণ কি? বাণিজ্য রক্ষার জন্য কত সময়ে কত অর্থ অনর্থক অপব্যয় করিতে হয়;—না হয় এতদুপলক্ষে নবাবসেনানায়কদিগের মনস্তুষ্টিসাধনার্থ কিঞ্চিৎ অপব্যয় হইয়া যাইবে! আর যদি সিরাজদ্দৌলাই সশরীরে শুভাগমন করেন, তাহাতেই বা ভীত হইবার প্রয়োজন কি? তিনি ত সেই মাতামহস্নেহ- পালিত অপরিণতবয়স্ক অসংযতচিত্ত দুর্ব্বল বালক;—সময়োচিত সরল তোষামোদে এবং পদোচিত কয়েক সহস্র রজতখণ্ড প্রয়োগ করিতে পারিলেই, অর্থলোলুপ নবীন নরপতি বিনা বাক্যব্যয়ে তাড়াতাড়ি মুর্শিদাবাদে প্রত্যাগমন করিতে কিছুমাত্র ইতস্ততঃ করিবেন না।

 এই সিদ্ধান্ত একেবারে ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত নহে। কলিকাতায় বসিয়া নবাব-দরবারের প্রতিদিবসের তর্ক বিতর্কের যে সকল গুপ্ত সমাচার শুনিতে পাওয়া যাইত, তাহাতে ইংরাজদিগের মনে এইরূপ সিদ্ধান্তই সুদৃঢ় হইয়া উঠিয়াছিল। সিরাজদ্দৌলা যখন কলিকাতা আক্রমণের গুপ্তসঙ্কল্প পাত্রমিত্রদিগের নিকট দন্তস্ফুট করিলেন, তখন উৎকোচ- গ্রাহী ইংরাজহিতৈষী রাজকর্ম্মচারিমাত্রেই চারি দিক হইতে প্রবল প্রতিবাদ আরম্ভ করিলেন। তাহাদের প্রতিবাদের স্থুল মর্ম্ম সেই এক কথা;—“এখনও সুসময় উপনীত হয় নাই; এখনও সিংহাসন নিরাপদ হয় নাই; এখনও শওকতজঙ্গ পদানত হয় নাই; ইংরাজেরা নিতান্ত নিরীহ-স্বভাব বণিক্‌জাতি, তাহাদের দ্বারা এ দেশের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হইতেছে; ইত্যাদি ইত্যাদি।”[৩] সিরাজদ্দৌলা বুঝিলেন যে, এই সকল স্বার্থান্ধ মন্ত্রিদল, আপনারা অন্তরালে থাকিয়া, প্রকারান্তরে ইংরাজদিগের স্পর্ধাবৃদ্ধির সহায়তা করিতেছেন! সুতরাং তিনি আর কাহারও কথায় কর্ণপাত না করিয়া, সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রা করিবার আদেশ প্রদান করিলেন। খোজা বাজিদ এই সময়ে হুগলীতে অবস্থান করিতেছিলেন; ইংরাজদিগের প্ররোচনায় তিনিও নবাবকে নিবৃত্ত হইবার জন্য অনুরোধ করিতে অগ্রসর হইয়াছিলেন। কিন্তু সিরাজদ্দৌলা বলিলেন যে, “ড্রেক সাহেব তাঁহাকে বড়ই অপমান করিয়াছেন;— নবাব মুর্শিদকুলীখাঁর আমলে ইংরাজেরা যেরূপভাবে বাণিজ্য লইয়াই সন্তুষ্ট ছিলেন, এখনও যদি তাঁহারা সেইরূপভাবে বাস করিতে সম্মত থাকেন, তবেই ইংরাজদিগকে আশ্রয়দান করা কর্ত্তব্য; নচেৎ ইহাদিগকে আর কোন কারণে এ দেশে বাস করিবার প্রশ্রয় দেওয়া যাইবে না!”[৪]

 তৎকালে কলিকাতায় যে অল্প কয়েক সহস্র ইংরাজ বণিকের বসতি ছিল, তাঁহারা যেমন সংখ্যায় নগণ্য, সেইরূপ সমরকৌশলে নিতান্ত অশিক্ষিত। তাঁহাদিগকে পরাজয় করিতে সবিশেষ আড়ম্বর করা নিষ্প্রয়োজন। সিরাজদ্দৌলা তাহা জানিতেন। কিন্তু পাছে তাঁহার অনুপস্থিতিকালের অবসর পাইয়া কুচক্রিদল শওকতজঙ্গকে সিংহাসনে বসাইয়া দিয়া সর্ব্বনাশসাধন করে, এই ভয়ে যাঁহার যাঁহার প্রতি সন্দেহ সমধিক প্রবল, তাঁহাদের সকলকেই সঙ্গে লইয়া যুদ্ধযাত্রা করিলেন;— নিতান্ত অনুগত কয়েক জন সেনানায়ক রাজধানীরক্ষার জন্য মুর্শিদাবাদে অবস্থান করিতে লাগিলেন। ইচ্ছা না থাকিলেও, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর, মাণিকচাঁদ,—সকলকেই সসৈন্যে নবাবের অনুগমন করিতে হইল।

 সিরাজদ্দৌলা যে এইরূপ সুকৌশলে রাজধানীর আপদাশঙ্কা নিবারণ করিয়া, মহাসমারোহে নিশ্চিন্তহৃদয়ে সসৈন্যে কলিকাতার দিকে অগ্রসর হইতে সক্ষম হইবেন, ইংরাজদিগের তত দূর ধারণা ছিল না। ৭ই জুন প্রাতঃকালে এই সংবাদ কলিকাতার ইংরাজমহলে সবিশেষ হুলস্থূল বাধাইয়া দিল। আর সময় নাই, যাহা কিছু করিবার এখনই তাহা সম্পন্ন করা আবশ্যক; কিন্তু রণকুশল সেনাপতির অভাবে কোন কার্য্যেরই শৃঙ্খলা হইতে পারিল না। তথাপি যত দূর সম্ভব, ইংরাজরা প্রাণপণে আত্মরক্ষার আয়োজন করিতে আরম্ভ করিলেন। বাগ্‌বাজারে পেরিং নামক যে নূতন দুর্গ প্রাকার নির্ম্মিত হইয়াছিল, সেখানে রাশি রাশি আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জীভূত হইল; জলপথে নগরাক্রমণ করিবার আশঙ্কা আছে। তজ্জন্য বাগ্‌বাজারের খালের ধারে ভাগীরথীগর্ভে যুদ্ধজাহাজ সুরক্ষিত হইল; পোনের শত ঠিকা সিপাহী নিযুক্ত করিয়া মহারাষ্ট্র খাতের ধারে ধারে স্থানে স্থানে সমাবেশ করা হইল; দুর্গপ্রাচীরের যথাসাধ্য সংস্কারকার্য্য সুসম্পন্ন করিয়া তন্মধ্যে অন্নপান সঞ্চয় করা হইল; মাদ্রাজে সাহায্যভিক্ষার জন্য পত্র লেখা হইল; এবং নগররক্ষার জন্য ওলন্দাজ ও ফরাসীদিগের সহায়তালাভের প্রার্থনায় তাঁহাদের নিকট দুত প্রেরিত হইল।

 ওলন্দাজেরা কর্ত্তব্যনিষ্ঠ সরলস্বভাব নিরীহ বণিক; তাঁহারা গায়ে পড়িয়া নবাবের সঙ্গে কলহসৃষ্টি করিতে সম্মত হইলেন না। ফরাসীরা চিরদিনই কৌতুকপ্রিয়। তাঁহারা বলিয়া পাঠাইলেন যে, বৃটিশসিংহ যদি প্রাণভয়ে নিতান্তই জড়সড় হইয়া থাকেন, তবে তিনি অবলীলাক্রমে চন্দননগরের ফরাসীদুর্গে পলায়ন করিতে পারেন; সেখানে আশ্রয়গ্রহণ করিলে আশ্রিতের প্রাণরক্ষার জন্য ফরাসীবীরগণ জীবনবিসর্জ্জন করিতে কাতর হইবে না![৫] এই নিদারুণ বিপৎসময়ে চিরশত্রু ফরাসীবণিকের এরূপ মর্ম্মভেদী পরিহাসবাক্যে ইংরাজেরা নিতান্ত নিরুপায় হইয়া বাহুবলে আত্মরক্ষার জন্য দলে দলে সমর-শিক্ষায় নিযুক্ত হইলেন।

 নগররক্ষার আয়োজন শেষ হইবামাত্র ইংরাজেরা নিতান্ত অসহিষ্ণু হইয়া উঠিলেন। সিরাজদ্দৌলার অভিপ্রায় কি;—তিনি কাশিমবাজারের ন্যায় বিনা রক্তপাতে সমুদয় তর্কের মীমাংসা করিবেন, কিম্বা অসিহস্তে কলিকাতার পল্লীতে পল্লীতে রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করিবেন;—সে কথা কেহই বিচার করিবার চেষ্টা করিলেন না! সিরাজদ্দৌলা যখন অর্দ্ধপথে অগ্রসর, সেই সময়ে ইংরাজেরা কথঞ্চিৎ আত্মবলের পরিচয় দিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন।

 জলপথে বহিঃশত্রুর আক্রমণনিবারণের জন্য কলিকাতার আড়াই ক্রোশ দক্ষিণে, ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে, টানা নামক স্থানে, নবাবী আমলে একটি ক্ষুদ্র দুর্গ সংস্থাপিত হইয়াছিল।[৬] সে দুর্গে ১৩টি কামান লইয়া ৫০ জন সিপাহী নদীমুখ রক্ষা করিত, এবং বহুদিন শত্রুসেনার সন্ধান না পাইয়া সকলেই নিরুদ্বেগে বিশ্রামসুখ উপভোগ করিত। ইংরাজেরা ১৩ই জুন প্রাতঃকালে চারিখানি যুদ্ধজাহাজ লইয়া সহসা এই ক্ষুদ্র দুর্গ আক্রমণ করিয়া, প্রচণ্ডপ্রতাপে গোলাবর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন। অকস্মাৎ বজ্রনিনাদে হতবুদ্ধি হইয়া, সিপাহী-সেনা হুগলী অভিমুখে পলায়ন করিল; টানার ক্ষুদ্র দুর্গপ্রাচীরে বৃটিশ-বিজয়-বৈজয়ন্তী সগৌরবে অঙ্গবিস্তার করিবামাত্র বৃটিশবাহিনী দুর্গপ্রাচীরের আগ্নেয়াস্ত্র গুলি অকর্ম্মণ্য করিয়া একে একে ভাগীরথীগর্ভে নিক্ষেপ করিতে আরম্ভ করিল।

 এই সংবাদে হুগলীর ফৌজদার স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন যে, এত দিনে ইংরাজের সর্ব্বনাশ হইল! একে সিরাজদ্দৌলা ইংরাজবিদ্বেষী, তাহাতে বারম্বার অবমানিত হইয়াছেন; অতঃপর ইংরাজের এই ধৃষ্টতার পরিচয় পাইবামাত্র আর কাহারও কথায় কর্ণপাত করিতে সম্মত হই- বেন না। ফৌজদার তাড়াতাড়ি দুর্গ উদ্ধারকল্পে সিপাহীসেনা প্রেরণ করিতে বাধ্য হইলেন।

 ১৪ই জুন টানার দুর্গদ্বারে ইংরাজ বাঙ্গালীর শক্তিপরীক্ষা আরম্ভ হইল। দুই সহস্ৰ সিপাহী-সেনা মুহুর্মুহু কামান-ধ্বনিতে দিঙ্মণ্ডল মেঘাচ্ছন্ন করিয়া দৃঢ়পদে দুর্গদ্বারে সমবেত হইবামাত্র, ইংরাজ বীরপুরুষেরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিতে কিছুমাত্র লজ্জাবোধ করিলেন না! কিন্তু পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিয়াও অনেকে নিস্তার পাইলেন না; সিপাহীরা জাহাজের উপর মুষলধারায় গুলি বর্ষণ করিয়া ইংরাজ- সেনাদলকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিল। তাঁহারা গোলা বারুদের যথেষ্ট অপব্যয় করিয়াও সিপাহীদিগকে দুর্গ হইতে তাড়িত করিতে সক্ষম হইলেন না! কলিকাতা হইতে কতকগুলি নূতন বীরপুরুষ, আসিয়া ছত্রভঙ্গ ইংরাজ-সেনাকে উৎসাহিত করিয়া, বীরকীর্ত্তি সংস্থাপনের জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিয়া দেখিলেন; যখন তাহাতেও সিপাহী-সেনা হটিল না, তখন ইংরাজেরা নিতান্ত ভগ্নমনোরথে, নোঙ্গর তুলিয়া, জাহাজ খুলিয়া, ধীরে ধীরে কলিকাতাভিমুখে প্রত্যাগমন কৱিতে বাধ্য হইলেন।[৭]

 একমাত্র অর্ম্মি-লিখিত ইতিহাস ভিন্ন ইংরাজ-লিখিত আর কোন ইতিহাসে এই অপকীর্ত্তির কথা দেখিতে পাওয়া যায় না। ইহার সহিত কলিকাতা-ধ্বংসের কিরূপ নিগূঢ় সম্বন্ধ, তাহার সমালোচনা না করিয়া, মিল এবং থরন্‌টন্ সিরাজদ্দৌলাকে শোণিতলোলুপ উৎপীড়নপরায়ণ নৃশংস নবাব বলিয়া পরিচিত করিবার চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন। মিল এবং থরন্‌টন্ যে বিশেষ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মরূপে অর্ম্মিলিখিত আদিম ইতিহাসখানি সযত্নে অধ্যয়ন করিয়াছিলেন, তাহা তাঁহাদের স্বপ্রণীত ইতিহাসের প্রায় প্রত্যেক পৃষ্ঠায় টীকাচ্ছলে অভিব্যক্ত রহিয়াছে। তাঁহারা অনেক কথাই অর্ম্মি-লিখিত ইতিহাস হইতে উদ্ধৃত করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু আশ্চর্য্যের কথা এই যে, কি মিল, কি থরন্‌টন্, কেহই টানার দুর্গাক্রমণ-কাহিনীর কোনরূপ আভাষ প্রদান করেন নাই।

 আর একজন ইংরাজ-লেখক আবার লিপিকৌশলে মিল এবং থরন্‌টন্কেও পরাজয় করিয়া, লিখিয়া গিয়াছেন যে, “কি সিরাজদ্দৌলা, কি পাত্রমিত্রগণ, কেহই ইংরাজদিগের সকরুণ আবেদনে কর্ণপাত করিলেন না; অসহায় ইংরাজদিগের সর্ব্বনাশসাধনের জন্য সকলেই সসৈন্যে অগ্রসর হইতে লাগিলেন; ন্যায় ও ধর্ম্মানুমোদিত সুবিচার লাভের পথ একেবারেই অবরুদ্ধ হইয়া গেল।”[৮] আমরা কিন্তু ইংরাজলিখিত ইতিহাস পড়িয়া দেখিতে পাইতেছি যে, সকরুণ আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে ইংরাজ সেনার সগর্ব্ব আস্ফালন এবং কামানমুখে অনলবর্ষণ!

 কলিকাতার কালা বাঙ্গালীদিগের উপর সিরাজদ্দৌলার কিরূপ স্নেহদৃষ্টি ছিল, তাহার পরিচয় ক্রমশঃ প্রকাশিত হইতে লাগিল। সকলেই বুঝিতে পারিলেন যে, কেবলমাত্র ইংরাজ-বণিকের উদ্ধতব্যবহারের সমুচিত শিক্ষাদানের জন্যই সিরাজদ্দৌলা সসৈন্যে শুভাগমন করিতেছেন। তখন ইংরাজদিগের অন্তরাত্মা কাঁপিয়া উঠিল। তাঁহারা এতদিন ঘসেটি বেগমের শুভদৃষ্টিলাভের জন্য রাজবল্লভের পুত্র পলায়িত কৃষ্ণবল্লভকে পরম-সমাদরে কলিকাতায় আশ্রয়দান করিয়া, সিরাজদ্দৌলাকে নানাপ্রকারে অপমান করিতে কিছুমাত্র ত্রুটি করেন নাই। কিন্তু এখন সকলেই শুনিলেন যে, সিরাজদ্দৌলা রাজবল্লভের সঙ্গে সন্ধি সংস্থাপন করায়, তিনিও নবাব-সেনার সহিত কলিকাতায় শুভাগমন করিতেছেন। ইংরাজদিগের মনে হইল যে, নবাবসেনা নগরোপকণ্ঠে পদার্পণ করিতে না করিতে কৃষ্ণবল্লভও পিতার ন্যায় সিরাজদ্দৌলার অনুগত হইয়া পড়িবেন, এবং হয় ত, নবাব-শিবিরে পলায়ন করিয়া, ইংরাজদিগের গৃহছিদ্রের সন্ধান প্রদান করিয়া, নগরাক্রমণের সহায়তা সম্পাদন করিতে ইতস্ততঃ করিবেন না। অতএব সকলে মিলিয়া কৃষ্ণবল্লভকে রাজবিদ্রোহী অপরাধীর ন্যায় ইংরাজদুর্গে কারারুদ্ধ করিয়া ফেলিলেন। ইংরাজদিগের এইরূপ নিষ্ঠুর ব্যবহারে দেশের লোক শিহরিয়া উঠিল।

 দেশীয় বণিকদিগের মধ্যে অনেকেই কলিকাতায় বাসস্থান নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। নগরাক্রমণকালে পাছে তাঁহাদের কোন রূপ অনিষ্ট হয়, সেই জন্য চরাধিপতি রাজা রামরামসিংহ গোপনে উমিচাঁদকে একখানি গুপ্তলিপি পাঠাইয়া দূর স্থানে সরিয়া পড়িবার জন্য উপদেশ করিয়া পাঠাইলেন। ইংরাজদিগের তীব্র তাড়নায় গুপ্তচরের নিকট হইতে সেই পত্রখানি ইংরাজদিগেরই হস্তগত হইল। তখন সকলেই তর্জ্জন গর্জ্জন করিয়া উমিচাঁদকে কারারুদ্ধ করিবার জন্য লোকলস্কর প্রেরণ করিতে লাগিলেন। উমিচাঁদ ইহার বিন্দুবিসর্গ কিছুই জানিতে পারেন নাই; তাঁহাকে সহসা ইংরাজসেনা বন্দিবেশে রাজপথ দিয়া টানিয়া লইয়া চলিল; দেশের লোক হাহাকার করিয়া উঠিল।

 উমিচাঁদের সংসারে তাঁহার কুটুম্ব হাজারিমল কার্য্যাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি এইরূপ উৎপীড়নে আতঙ্কযুক্ত হইয়া, ধনরত্ন ও পরিবারবর্গ লইয়া অন্য স্থানে পলায়ন করিবার আয়োজন করিতে লাগিলেন। ইহা ইংরাজদিগের সহ্য হইল না। কাতারে কাতারে ইংরাজসেনা বীরদর্পে উমিচাঁদের বাটী অবরোধ করিবার জন্য ধাবিত হইতে লাগিল। উমিচাঁদের প্রভুভক্ত বিশ্বাসী বৃদ্ধ জমাদার জগন্নাথ[৯] সদ্বংশজাত ক্ষত্রিয় সন্তান। তিনি উমিচাঁদের বেতনভোগী বরকন্দাজ ও ভৃত্যবর্গ সমবেত করিয়া পুরীরক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর হইলেন। ফিরিঙ্গীরা আসিয়া সিংহদ্বারে হাতাহাতি আরম্ভ করিল; উভয়পক্ষেই শোণিত-স্রোত প্রবাহিত হইল; অবশেষে উমিচাঁদের বরকন্দাজগণ আর পারিয়া উঠিল না;—একে একে অনেকেই ধরাশায়ী হইতে লাগিল। মানুষের যাহা সাধ্য ছিল, তাহা শেষ হইয়া গেল! ফিরিঙ্গীসেনা মহাকলরবে অন্তঃপুরের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল। তখন জগন্নাথের ক্ষত্রিয়শোণিত উত্তপ্ত হইয়া উঠিল। যে আর্য্য-মহিলার অন্তঃপুরদ্বারে ভগবান্ সহস্ররশ্মিও নিতান্ত সসম্ভ্রমে করসঞ্চালন করিতে বাধ্য হইয়াছেন, সেখানে ম্লেচ্ছসেনার পদস্পর্শ হইবে? যে প্রভুপরিবারের নিষ্কলঙ্ক কুলের অবগুণ্ঠনবতী কুলরমণীগণ কখনও পরপুরুষের ছায়াস্পর্শ করেন নাই, তাঁহাদের পবিত্রদেহ ম্লেচ্ছ করম্পর্শে কলঙ্কিত হইবে?—ইহা অপেক্ষা হিন্দুমহিলার পক্ষে মৃত্যু ক্রোড়ই যে সুকোমল পুষ্পশয্যা, মুহূর্ত্তের মধ্যে সেই ঐতিহাসিক হিন্দু গৌরব-নীতি বিদ্যুদ্‌বেগে জগন্নাথের শিরায় শিরায় সঞ্চারিত হইয়া উঠিল! হতভাগা আর অগ্র পশ্চাৎ বিচার করিতে পারিল না; ক্ষিপ্রহস্তে অন্তঃপুরদ্বারে চিতাকুণ্ড প্রজ্বলিত করিয়া দিল; তাহার পর,—তাহার পর,— স্বহস্তে একে একে প্রভু-পরিবারের ত্রয়োদশটি মহিলামস্তক দেহবিচ্যুত করিয়া, সতী-শোণিত-পরিপ্লুত শাণিত খরসান আত্মবক্ষে বিদ্ধ করিয়া দিয়া রুধিরকর্দ্দমে লুটাইয়া পড়িল। অনুকূল পবনসঞ্চরণে ধূমজ্যোতিঃ বিকিরণ করিয়া চিতাকুণ্ডের দীপ্ত-শিখা চারি দিকে লোলজিহ্বা বিস্তার করিতে করিতে প্রাসাদে, প্রাঙ্গণে, কক্ষতলে, সিংহদ্বারে তীব্রতেজে গর্জ্জন করিয়া উঠিল! ফিরিঙ্গীসেনা জমাদারকে ধরাধরি করিয়া বাহিরে লইয়া আসিল; কিন্তু আর পুরপ্রবেশ করিবার অবসর পাইল না; উমিচাঁদের ইন্দ্রভবন এইরূপে শ্মশানভম্মে সমাচ্ছন্ন হইয়া পড়িল! কেবল সেই শোকসমাচার আমরণ কীর্ত্তন করিবার জন্য হতভাগ্য বৃদ্ধ জমাদারের জীবনবায়ু দেহবহির্গত হইল![১০]

 সিরাজদ্দৌলা মহাসমারোহে সসৈন্যে হুগলীতে আসিয়া পদার্পণ করিবামাত্র চারি দিকে সে সংবাদ বিদ্যুৎদ্বেগে প্রচারিত হইয়া পড়িল। ভাগীরথীবক্ষ বিতাড়িত করিয়া মুর্শিদাবাদ হইতে যে শত শত সুসজ্জিত রণতরণী হুগলীতে আসিয়া অপেক্ষা করিতেছিল, তাহার সহিত হুগলীর ফৌজদার আরও অনেকগুলি তরণী সংযোগ করিয়া দিয়া সিপাহী-সেনার পক্ষে অপর পারে উপনীত হইবার সুব্যবস্থা করিতে লাগিলেন। সিরাজদ্দৌলার আদেশে ওলন্দাজ এবং ফরাসীবণিক রাজসন্দর্শনে সমবেত হইলেন; ইউরোপে ইংরাজদিগের সহিত সন্ধি হইয়াছে বলিয়া তাঁহারা কলিকাতা আক্রমণে সহায়তা করিতে সম্মত হইলেন না। সিরাজদ্দৌলা তজ্জন্য কোনরূপ পীড়াপীড়ি না করিয়া ফরাসীদিগের নিকট বারুদ চাহিয়া লইয়া কলিকাতাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিলেন।

 কলিকাতার লোকে সংবাদ পাইয়া একেবারে জড়সড় হইয়া উঠিল; —এত কলকৌশল, এত সগর্ব্ব আস্ফালন, এত রণকৌশল-শিক্ষাপ্রণালী, সকলই যেন সিরাজদ্দৌলার নামে সহসা অবসন্ন হইয়া পড়িল। নগরের মধ্যে তুমুল কোলাহল উপস্থিত হইল। ইংরাজ অধিবাসিগণ যিনি যেখানে ছিলেন,—মুহূর্ত্তের মধ্যে আপন আপন সুসজ্জিত বাসভবনের দিকে সাশ্রুনয়নে একবারমাত্র দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া স্ত্রী পুত্র লইয়া দুর্গাভ্যন্তরে পলায়ন করিতে লাগিলেন; দেশীয় বণিকগণ যিনি যে পথে সুবিধা পাইলেন, নগর হইতে বহিষ্কৃত হইয়া পড়িতে লাগিলেন; পথে, ঘাটে, নদীসৈকতে, বনান্তরালে, সকল স্থানেই মহাকলরবে নরনারী, বালক বালিকা, শত্রু মিত্র কাতারে কাতারে পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল। সকলেই পলায়ন করিল, কিন্তু হায়! ফিরিঙ্গীদল বড়ই বিপন্ন হইয়া পড়িল। ইংরাজের অনুকরণ করিয়া সাহেব সাজিয়া, দেশের লোকের সঙ্গে প্রণয়বন্ধন বিচ্ছিন্ন করিয়া, এতদিন ফিরিঙ্গীদিগকে সবিশেষ ক্লেশভোগ করিতে হয় নাই। কিন্তু আজ বিপদের দিনে তাহাদের মসীমলিন মুক্তির উপর তুষারধবল সাহেবী পরিচ্ছদ বড়ই বিড়ম্বনার কারণ হইয়া উঠিল! সকলেই বুঝিল যে, ফিরিঙ্গীরাই যথার্থ “ন মাতা ন পিতা নচ বন্ধু;”—তাহারা কি বাঙ্গালীদলে, কি সাহেবমণ্ডলীতে, কোন স্থানেই আশ্রয়লাভ করিবার অবসর পাইল না। তখন সকলে মিলিয়া দুর্গদ্বারে সমবেত হইয়া দুর্গমধ্যে আশ্রয়লাভ করিবার জন্য করুণক্রন্দনে পাষাণহৃদয় বিগলিত করিতে লাগিল। অবশেষে নিতান্ত নিরুপায় হইয়া তাহাদিগকেও দুর্গমধ্যে আশ্রয়দান করিতে হইল। ইংরাজদুর্গ স্বেচ্ছাচারের লীলাভূমি হইয়া উঠিল;—কেবল কোলাহল, কেবল আর্ত্তনাদ, কেবল স্বার্থচিন্তা;—সকলেই বুঝিল যে, নগর রক্ষা করা ক্রমেই অসম্ভব হইয়া উঠিতেছে।

 নবাবের বৃহদায়তন দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র যখন ভীমগর্জ্জনে তাহার আগমনবার্ত্তা ঘোষণা করিতে লাগিল, ইংরাজেরা তখন নিতান্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া নবাবের মনস্তুষ্টিসাধনের জন্য কৌশলজাল বিস্তার করিতে ত্রুটি করিলেন না। অর্থ-প্রলোভনে সিরাজদ্দৌলাকে রাজধানীতে প্রত্যাগত করাইবার জন্য উৎকোচ উপঢৌকন লইয়া নানারূপ কাকুতি মিনতি জানাইতেও কৃপণতা করিলেন না। কিন্তু সিরাজদ্দৌলা কিছুতেই সঙ্কল্পচ্যুত হইলেন না।[১১] যখন সকল চেষ্টা নিষ্ফল হইয়া গেল, তখন বিপদে পড়িয়া ইংরাজ-বীরপুরুষেরা নগররক্ষার জন্য আপন আপন সঙ্কেতভূমিতে সমবেত হইতে লাগিলেন; বাহিরে নবাবশিবিরে ঘন ঘন কামানগর্জ্জন, ভিতরে ইংরাজমণ্ডলীতে ততোধিক তুমুল কোলাহল;—এইরূপে উৎ কণ্ঠায়, উদ্বেগে, প্রতিমুহূর্ত্তের পরাজয় চিন্তায়, ইংরাজ-সেনা বিনিদ্রনয়নে রজনীযাপন করিতে লাগিল।

 যাহারা দুর্গরক্ষার্থ বন্ধপরিকর হইয়াছিল, হলওয়েল তাহাদের সংখ্যানির্দ্দেশ করিতে গিয়া লিখিয়া গিয়াছেন যে, তন্মধ্যে ৬০ জনের অধিক ইউরোপীয় সেনা ও সেনানায়ক ছিল না;—এই ক্ষুদ্র সেনাদল যে ভীতকম্পিতকলেবরে তুমুল কোলাহল তুলিবে, তাহাতে আর আশ্চর্যের কথা কি?[১২]

  1. The 7th. Fune.—Advice early in the morning was received at Calcutta of the loss of Cassimbazar factory, and that the Nabab was upon full march, with all his forces, for Fort William. The same day arders were sent to the Chiefs of Dacca, Jugdea, and Batlasore to withdraw and quit their factories, with what effects they could secure. —Hasting's MSS. vol, 29209.
  2. The Presidency, trusting to the success of their humility and prayers, neglected too long the means of defence.—Mill's History of British India, vol, iii. 147.
  3. Şeat Mootabray (Mahatab Roy) and Roop Chund, the sons of the banker Jaggatseat who had succeeded to the wealth and employments of their father, and derived great advantages from the European trade in the Province, ventured to represent the English as a colony of inoffensive and useful merchants, and earnestly éntreated the Nabob to moderate his resentment against them, but their remonstrances were vain.—Orme, vol. II 58.
  4. Orme, vol. II. 58.
  5. Stewart's History of Bengal.
  6. সেকালে যেখানে টানার দুর্গ সংস্থাপিত হইয়াছিল, এখন সেখানে ‘শিবপুর কোম্পানীর বাগান’ Royal Botanical Gardens.-Revd. Long.
  7. Whilst the Nabob was advancing, it was determined to take possession of tho Fort of Tannah, which lay about 5 miles below Calcutta, on the opposite shore and commanded the narrowest part of the river between Hughly and the Sea with 13 pieces of cannon. Two ships of 300 tons, and two brigantines, anchored before it early in the morning of the 13th June; and as soon as they began to fire, the Moorish garrison which did not exceed 50 men, fled; on which some Europeans and Laskars landed and having disabled part of the cannon, flung the rest into the river. But the next day they were attacked by a detachment of 2000 men, sent from Hughly, who stormed the fort, drove them to their boats, and then began to fire, with their matchlocks and two small fieldpieces on the vessels, which endeavoured in vain with their cannons and musketry to dislodge them. The next day a reinforcement of 30 soldiers were sent from Calcutta; but the cannonade having made no impression, they and the vessels returned to the town.—Orme, vol II. 50-60
  8. No one dared to plead for the unfortunate English and the Subah, surrounded by a thousand greedy minions, and hanging officers, all eager for the plunder of so rich a place, heard nothing but the most servile applauses of his resolution. Thus the avenues to justice and mercy were shut up, and all our submissive offers ineffectual.—Scrafton.
  9. নবাবী আমলের বাঙ্গালার ইতিহাসে এই জমাদার জগমন্ত সিংহ নামে কথিত।
  10. The head of the peon, who was an Indian of a high caste, set fire to the house, and, in order to save the women of the family from the dishonor of being exposed to strangers, entered their apartments, and killed, it is said, thirteen of them with his own hand; after which, he stabbed himself, but contrary to his intention, not mortally, -Orme. vol. II, 60.
  11. The usual method of calming the angry feelings of eastern princes was resorted to. A sum of money was tendered in purchase of the Subahder's absence, but refused.—Thornton's History of the British Empire, vol. 1 189. বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বলেন, “সম্ভবতঃ” রনটনের এই উক্তি ভ্রমাত্মক। কেন ভ্রমাত্মক, তাহার কোন কারণ বা যুক্তি প্রদর্শিত হয় নাই।
  12. The troops in garrison consisted, by the “Muster-rolls laid Before us about the 6th or 8th of June, of 145 in battalion, and 45 of the train officers included, in both only 60 Europeans."—Holwells India Tract's, P. 302.