বিষয়বস্তুতে চলুন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড)

উইকিসংকলন থেকে

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র অন্য সংস্করণ দেখুন
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

দলিল পত্রঃ নবম খণ্ড

সশস্ত্র সংগ্রাম (১)

সম্পাদক : হাসান হাফিজুর রহমান

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

তথ্য মন্ত্রণালয়

প্রকাশক : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

তথ্য মন্ত্রণালয়-এর পক্ষে-
গোলাম মোস্তফা
হাক্কানী পাবলিশার্স
বাড়ি # ৭, রোড # ৪
ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫
ফোন: ৯৬৬১১৪১, ৯৬৬২২৮২
ফ্যাক্স: (৮৮০২)৯৬৬২৮৪৪
E-mail: info@paramabd.com

কপিরাইট : তথ্য মন্ত্রণালয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রথম প্রকাশ : নভেম্বর, ১৯৮২


অগ্রহায়ণ, ১৩৮৯

পুনর্মুদ্রণ : ডিসেম্বর, ২০০৩

অগ্রহায়ণ, ১৪১০

পুনর্মুদ্রণ : জুন ২০০৯

জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৬

প্রচ্ছদ : বকুল হায়দার
মুদ্রাকর : মোঃ আবুল হাসান

হাক্কানী প্রিণ্টিং এণ্ড প্যাকেজিং
সড়ক # ৯, লেইন # ২, বাড়ি # ১
ব্লক # এ, সেকশন # ১১, মিরপুর, ঢাকা-১২১৫


HISTORY OF BANGLADESH WAR OF INDEPENDENCE
DOCUMENTS, VOL-1

Published by: Golam Mustafa
Hakkani Publishers
House # 7, Road # 4, Dhanmondi, Dhaka-1205
Tel: 9661141, 9662282, Fax: (8802)9662844
E-mail: info@paramabd.com

On behalf of Ministry of Information
Government of the People's Republic of Bangladesh

Copyright: Ministry of Information
Government of the People's Republic of Bangladesh

Printed by: Md. Abul Hasan
Hakkani Printing & Packaging
Road # 9, Lane # 2, House # 1
Block # A, Sec # 11, Mirpur, Dhaka-1216

First Published: November, 1982
Reprint: December, 2003
Reprint: June, 2009

ISBN: ISBN 984-433-091-2 (set)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

দলিলপত্র: নবম খণ্ড

সচিব
তথ্য মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
ঢাকা, বাংলাদেশ
পুনর্মুদ্রণ প্রসঙ্গে

 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্প গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে এই প্রকল্প স্বাধীনতা যুদ্ধ সংক্রান্ত দলিল ও তথ্যসমূহ প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করা ও বিকৃতির আশংকা এড়িয়ে যাবার জন্যই ইতিহাস রচনার পরিবর্তে দলিল ও তথ্য প্রকাশকেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়েছে। আর সে প্রকল্পের ফসলই “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র”। প্রায় ১৫,০০০ পৃষ্ঠায় ১৫ খণ্ডে এসব দলিলপত্র প্রণয়ন করে ১৯৮২ সালে তা প্রকাশ করা হয়। এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত গবেষক ও সম্পাদকবৃন্দের আক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই দলিলপত্র গ্রন্থমালা।

 প্রথম প্রকাশের পরপরই বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতায় “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালা সর্ব মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।

 এই গ্রন্থমালা প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই এর সমুদয় কপি বিক্রি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংক্রান্ত সকল গবেষণায় এই গ্রন্থমালা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

 “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালার চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বিভিন্ন মহল থেকে তথ্য মন্ত্রণালযে গ্রন্থমালার চাহিদাপত্র আসতে থাকায় মন্ত্রণালয় “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালা সীমিত সংখ্যায় পুনর্মুদ্রণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুনর্মুদ্রণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় দেশের প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘হাক্কানী পাবলিশার্স’কে। পুনর্মুদ্রণের ক্ষেত্রে তথ্যের কোন ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। গত দুই দশকে প্রকাশনা প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফলে পুনর্মুদ্রিত দলিলপত্রের অঙ্গসৌষ্ঠব আরও সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।

 আমার দৃঢ় বিশ্বাস, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালার সংস্করণটি বরাবরের মতই পাঠক ও গবেষকদের কাছে আদৃত হবে।

ঢাকা
ডিসেম্বর ২০০৩
(নাজমুল আলম সিদ্দিকী)
ভারপ্রাপ্ত সচিব

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তথ্য মন্ত্রণালয়
প্রেস-১ শাখা
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

 নং-তম/প্রেস-১/২এফ-২/৯৭/বিবিধ-১/৯৬৯ তারিখঃ ৩০ অক্টোবর ২০০৩

প্রেরক অঞ্জলী রানী চক্রবর্তী
সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রেস-১)
প্রাপক জনাব গােলাম মােস্তফা

স্বত্বাধিকারী
মেসার্স হাক্কানী পাবলিশার্স
মমতাজ প্লাজা (৪র্থ তলা)
ধানমণ্ডি, ঢাকা।

বিষয়: “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ; দলিলপত্র (১৫ খণ্ড)” পুনর্মুদ্রণের নিমিত্তে প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জার নমুনা অনুমােদন।

সূত্র: তাঁর ০৮ অক্টোবর ২০০৩ তারিখের আবেদন।

মহােদয়,  উপযুক্ত বিষয়ে সূত্রোক্ত আবেদনের সাথে প্রাপ্ত নমুনা অনুযায়ী প্রচ্ছদ, প্রিণ্টার্স লাইন ও অঙ্গসজ্জা মােতাবেক বিষয়ােক্ত গ্রন্থাবলী চূড়ান্ত মুদ্রণের অনুমােদন প্রদান করা হলাে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবার্চিত অনুমােদিত প্রচ্ছদ নির্দেশক্রমে এতন্সাথ ফেরত প্রদান করা হলাে।

সংযুক্তি: বর্ণনা মতােবেক।

আপনার বিশ্বস্ত,
(অঞ্জলী রানী চক্রবর্তী)
সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রেস-১)

প্রকাশকের কথা

 প্রতিটি দেশ বা জাতির জন্য তার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস একটি অমূল্য সম্পদ। সে আলোকে বালাদেশের ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং তৎপূর্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের কাছে এক গৌরবময় সম্পদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস প্রণয়নের জন্য ১৯৭৭ সনে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের স্বাধীতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্প গ্রহণ করে। নিরপেক্ষতা ও যথার্থতা বজায় রাখার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলাদি সংগ্রহ ও যাচাইপূর্বক তা সংকলন করা হয়। তারই ফলশ্রুতি ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ গ্রন্থাবলী। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ১৯৮২ সনে ১৫ খণ্ডে এই গ্রন্থাবলী প্রকাশ করে। এ উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির সম্মানিত সদস্যগণের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই গ্রন্থাবলী।

 এই গ্রন্থাবলী প্রকাশ হওয়ার অল্প দিনের মধ্যে তার পুরো স্টক ফুরিয়ে যায়। এই গ্রন্থাবলী স্বাধীনতা যুদ্ধ-বিষয়ক সকল গবেষণা কর্মের গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু ষ্টক না থাকায় বাংলাদেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানা থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত রয়েছে এবং এর দুষ্প্রাপ্যতা অনেক গবেষণা কর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

 এমতাবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র গ্রন্থাবলী পুনর্মুদ্রণের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে আমরা মনে করি।

 বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ রকম একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব আমাদেরকে অর্পণ করায় আমরা গৌরবান্বিত। এরই ভিত্তিতে গ্রন্থাবলীর বিষয়সূচি সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রেখে নতুন আঙ্গিকে নির্ভুলভাবে পুনর্মুদ্রণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আশা করি, পুনর্মুদ্রিত গ্রন্থাবলী পাঠক-গবেষকদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।

বিশাল এই কর্মকাণ্ডে যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, আমরা তাঁদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

০৭ ডিসেম্বর ২০০৩

(গোলাম মোস্তফা)
স্বত্বাধিকারী
হাক্কানী পাবলিশার্স

মুখবন্ধ

 বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের নয় সদস্যবিশিষ্ট প্রামাণ্যকরণ কমিটির তরফ থেকে এই দলিল সংগ্রহের প্রকাশনা সম্পর্কে দুটি কথা নিবেদন করছি। এ প্রকল্পের উৎপত্তি ও গঠন, এর মূল উদ্দেশ্য ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব হাসান হাফিজুল রহমান বিস্তারিত বলবেন।

 বিপুলায়তন ও সংগৃহীত উপাত্ত থেকে প্রকাশিতব্য দলিলসমূহ নির্বাচন কমিটির সদস্যবৃন্দ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দলিলাদির পাণ্ডুলিপি ধৈর্য ধরে পরীক্ষা করেছেন, বিস্তারিত আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে সংযোজন ও সংশোধনের জন্য মূল্যবান উপদেশ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন। আমাদের কোন মন্তব্য ছাড়াই দলিলগুলো সরাসরি পাঠক ও গবেষকদের কাছে উপস্থিত হচ্ছে। দলিলপত্র যথাসম্ভব মূলসূত্র থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকাশিত দলিলগুলো প্রামার্ণকরণ কমিটি অনুমোদন করে দিয়েছেন।

 প্রায় সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠাব্যাপী দলিল থেকে প্রাথমিক নির্বাচনের পর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন প্রকল্পে নিয়োজিত বিভিন্ন গবেষকবৃন্দ। তাঁরা জনাব হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ দায়িত্ব যথাযথ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সংগে পালন করেছেন।

 প্রামাণ্যকরণ কমিটির সকল সদস্যকে এবং প্রকল্পের গবেষকবৃন্ধকে তাঁদের প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য আমি অশেষ ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে প্রয়াত বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক জনাব হাসান হাফিজুর রহমানকে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

 বিভিন্ন সূত্রে সংগৃহীত ও সবিবেচনার সাথে নির্বাচিত দলিলগুলো থেকে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি সার্বিক, প্রামাণ্য ও নিরপেক্ষ চিত্র বেরিয়ে আসবে, আমরা এ আশা পোষণ করছি। সংগৃহীত সমূদয় দলিল একটি স্থায়ী আর্কাইভস্ গঠনে সহায়তা করবে। অনুদঘাটিত ও অনাবিস্কৃত দলিলগুলো ভবিষ্যতে সংগৃহীত হলে পরিশিষ্টের মাধ্যমে সেগুলো মূল দলিলের সংগে সংযোজিত হতে পারে।

 প্রকাশিত দলিলগুলো পাঠক সমাজ ও গবেষকদের কাছে সমাদৃত হলে আমাদের শ্রম সার্থক বলে মনে করব।

২৫ জুন,
১৯৮৪

মফিজুল্লাহ কবীর
চেয়ারম্যান,
প্রামাণ্যকরণ কমিটি,
বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প।

ভূমিকা

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়সীমা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগে সম্পর্কিত সারা বিশ্বে যা কিছু ঘটেছে তার তথ্য ও দলিলপত্র সংগ্রহ এবং সেসবের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস রচনা ও মুদ্রণের দায়িত্ব অর্পিত হয় মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের ওপর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর কাজ শুরু হয় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারী থেকে (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)।

 ইতিহাস রচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও এই প্রকল্প স্বাধীনতা যুদ্ধসংক্রান্ত দলিল ও তথ্যসমূহ প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর কারণ, সমকালীন কোন ঘটনার বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো একটি যুগান্তকারী ঘটনার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও বস্তনিষ্ঠতা রক্ষা করা এবং বিকৃতির সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া বস্তুত অত্যন্ত দুরূহ। এ জন্যই আমরা ইতিহাস রচনার পরিবর্তে দলিল ও তথ্য প্রকাশকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। এর ফলে দলিল ও তথ্যাদিই কথা বলবে, ঘটনার বিকাশ ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে, ঘটনা পরম্পরার সংগতি রক্ষা করবে।

 এই লক্ষ্য সামনে রেখেই কয়েকটি খণ্ডে সংগৃহীত দলিলসমূহ প্রকাশের সিদ্ধান্ত প্রকল্প গ্রহণ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের সামনে একটি বিশেষ বিবেচ্য বিষয় দেখা দেয় এই যে, দলিলপত্র সংগ্রহের সময়সীমা স্বাধীনতা যুদ্ধকেন্দ্রিক হওয়া সত্ত্বেও এ সত্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পশ্চাতে বিরাট পটভূমি রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকে এই পটভূমি থেকে বিচ্ছন্ন করে দেখা যায় না। এই পটভূমির ঘটনাবলী- যাকে মুক্তিসংগ্রাম বলে অভিহিত করা যায়- তার অনিবার্য পরিণতিই স্বাধীনতা যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। তাই মুক্তিসংগ্রামের স্বরূপ জানা ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধকে তুলে ধরা সম্ভবই নয়। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল প্রকাশের সংগে এর পটভূমি সংক্রান্ত দুখণ্ড দলিলসংগ্রহ প্রকাশের সিদ্ধান্তও প্রকল্প গ্রহণ করে। এর ফলে প্রকল্পের দলিল প্রকাশের পরিকল্পনা নিম্নরূপে দাঁড়ায়:

প্রথম খণ্ড   পটভূমি (১৯০৫-১৯৫৮)
দ্বিতীয় খণ্ড   পটভূমি (১৯৫৮-১৯৭১)
তৃতীয় খণ্ড   মুজিবনগর : প্রশাসন
চতুর্থ খণ্ড   মুজিবনগর : প্রবাসী বাঙালীদের তৎপরতা
পঞ্চম খণ্ড   মুজিবনগর : বেতারমাধ্যম
ষষ্ঠ খণ্ড   মুজিবনগর : গণমাধ্যম
সপ্তম খণ্ড   পাকিস্তানী দলিলপত্র : সরকারী ও বেসরকারী
অষ্টম খণ্ড   গণহত্যা, শরণার্থী শিবির ও প্রাসংগিক ঘটনা
নবম খণ্ড   সশস্ত্র সংগ্রাম (১)
দশম খণ্ড   সশস্ত্র সংগ্রাম (২)
একাদশ খণ্ড   সশস্ত্র সংগ্রাম (৩)
দ্বাদশ খণ্ড   বিদেশী প্রতিক্রিয়া : ভারত
ক্রয়োদশ খণ্ড   বিদেশী প্রতিক্রিয়া : জাতিসংঘ ও বিভিন্ন রাষ্ট্র
চর্তুদশ খণ্ড   বিশ্বজনমত
পঞ্চদশ খণ্ড   সাক্ষাৎকার
ষোড়শ খণ্ড   কালপঞ্জী, গ্রন্থপঞ্জী ও নির্ঘণ্ট
চার

 মূল পরিকল্পনায় ৭২০০ পৃষ্ঠা মুদ্রণের পরিকল্পনা থাকলেও সংগ্রহের পরিমাণ বিপুল হয়ে যাওয়ায় আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি খণ্ড প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠা, সর্বমোট ১৫০০০ পৃষ্ঠার মধ্যে সংগ্রহগুলির মুদ্রণ সম্পন্ন করার বাজেট বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এই ভিত্তিতে আমাদের কাজ এগিয়ে যায়।

 দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহের ব্যাপারে নীতিমালা আমরা ব্যাপক ও খোলামেলা রেখেছি। তবে পটভূমি সম্বন্ধে দলিল ও তথ্যাদি গ্রহণে কিছুটা সংযত দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করি। আমরা শুধু সেইসব তথ্য ও দলিলই পটভূমি খণ্ডে সন্নিবেশিত করার সিদ্ধান্ত নিই, যা বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডের বৈশিষ্ট্য ও এখানে বসবাসকারী জনগণের আশা আকাংখার সংগে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অর্থাৎ যেসব ঘটনা, আন্দোলন ও কার্যকারণ, এই ভূখণ্ডের জনগণকে মুক্তিসংগ্রামের দিকে উদ্বুদ্ধ ও পরিচালিত করেছে, প্রধানত সেসব সংক্রান্ত দলিল ও তথ্যই এই খণ্ডে কালানুক্রমিকভাবে সাজানো হয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বাংলাদেশের অতীত ঘাঁটতে বহু দূর-অতীতে প্রত্যাবর্তন করিনি। ১৯০৫ সালের বংগভংগ থেকেই পটভূমি সংক্রান্ত দলিল-তথ্যাদি সন্নিবেশন শুরু করি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ব্যাখ্যায় এই শুরুর সীমাটি বাহুল্যবর্জিত, প্রত্যক্ষ ও যুক্তিগ্রাহ্য।

 ১৯০৫-এর বংগভংগ এবং তা রদ-এর পর ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মধ্যবর্তী এ দীর্ঘ সময়ের আর কোন দলিল এ খণ্ডে সন্নিবেশ করা হয়নি। কারণ ১৯১১ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত এই ভূখণ্ডে অনুষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক আন্দোলন সর্বভারতীয় বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৪০ সালে গৃহীত লাহোর প্রস্তাবে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয় সত্তারূপে বাংলার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিহিত ছিল। আর তা উত্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশেরই সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর অবিসংবাদিত নেতা এ, কে, ফজলুল হক। ১৯৪৬ সালে নিতান্ত অবৈধভাবে দিল্লী কনভেনশনে লাহোর প্রস্তাবের যে সংশোধনী করা হয়, তাতে বাংলার স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয়রূপের প্রশ্নকে পরিহার করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ সম্পর্কে মাউণ্টব্যাটেন পরিকল্পনা ঘোষণার পর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হয়, কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং যেভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয়। এরই পরিণতিতে পরবর্তীকালে বাংলাদেশের জনগণের সম্মুখে স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা ঐতিহাসিক প্রয়োজন হয়ে দেখা দেয়। এই ঐতিহাসিক প্রয়োজনকে মূর্ত করে তুলেছে এমন সমস্ত দলিলই এ খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে।

 পটভূমি সংক্রান্ত দলিলপত্র দুটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডটি শেষ হয়েছে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের সময়সীমায়। এখানে কাল বিভাজন করা হয়েছে একান্তই খণ্ড পরিকল্পনার পৃষ্ঠাসংখ্যার সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে- কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়।

 পটভূমির বেলায় যে ধরনের দলিল ও তথ্যাদি আমরা গ্রহণ করেছি সেগুলি হলো গেজেট বিজ্ঞপ্তি, পার্লামেণ্টের কার্যবিবরণী, কোর্টের মামলা সম্পর্কিত রিপোর্ট ও রায়, কমিশন রিপোর্ট, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী ও প্রস্তাব, জনসভার প্রস্তাব, আন্দোলনের রিপোর্ট, ছাত্রদলের প্রস্তাব ও আন্দোলন, গণপ্রতিক্রিয়া, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রামাণ্য সমীক্ষা ও প্রবন্ধ, রাজনৈতিক পত্র, সরকারী নির্দেশ ও পদক্ষেপ ইত্যাদি। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল ও তথ্যাদির বেলায় সংগ্রহের ধরন বিস্তৃততর হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। কারণ এই যুদ্ধের সংগে সারা বিশ্ব জড়িত হয়ে পড়েছিল। ফলে কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয়, সারা বিশ্বের বিষয়াদি জোগাড় করা অপরিহার্য হয়ে দেখা দেয় এবং প্রকল্প সেভাবেই অগ্রসর হয়। এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত ডায়েরী, চিঠিপত্র, সাক্ষাৎকার, স্মৃতিকথা, সরকারী নথিপত্র, রণকৌশল ও যুদ্ধসংক্রান্ত লিপিবদ্ধ তথ্যাদি, মুক্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক তৎপরতা, জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, কমিটি গঠন, বিবৃতি, বিশ্বজনমত, বিভিন্ন দেশের পার্লামেণ্টের কার্যবিবরণী প্রভৃতি নানা ধরনের তথ্য ও দলিল এই সংগ্রহের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশেষভাবে নজর রেখেছি যাতে সর্বসাধারণের মনোভাব প্রতিফলনে কোন ফাঁক না থাকে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে গণসহযোগিতার প্রতিস্তরের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিটি খণ্ডে যতদূর সম্ভব মূল দলিল সন্নিবেশিত করার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তবে যেসব দলিল ঐতিহাসিক গুরুত্ব অর্জন করেছে এবং যেগুলি বাদ দিলে ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় না সেগুলি আমরা প্রকাশিত সূত্র থেকে গ্রহণ করেছি।

 এ কাজে একটিই আমাদের প্রধান বিবেচ্য ছিল, সঠিক ঘটনার সঠিক দলিল যেন সঠিক পরিমাণে বিন্যস্ত হয়। আমাদের কোন মন্তব্য নেই, অঙ্গুলি সংকেত নেই, নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও নেই। আমরা বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ মনোভাব আগাগোড়া বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। এই মূল লক্ষ্য সামনে রেখেই দলিল-তথ্যাদি বাছাই, সম্পাদনা এবং বিন্যাস করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শুধু এইটুকু সতর্কতা অটুট রেখেছি যাতে কারো প্রতিনিধিত্ব ক্ষুগ্ন না হয়। দলিলের যথার্থতাই যার যা ভূমিকা ও গুরুত্ব তা যথাযথভাবে তুলে ধরবে। বস্তুত জনসাধারণই এ ধরনের ঘটনার প্রকৃত মহানায়ক। জনসাধারণের মধ্যে অবস্থা পরিবর্তনের ইচ্ছা যখন পরিণত ও অপ্রতিরোধ হয়ে ওঠে, কেবল তখনই জনগনের মধ্য থেকে যোগ্যতম নেতৃত্বের অত্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের বেলাতেও তাই ঘটেছে। আর তাই এমন সব দল বা সংগঠনের দলিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যে দল বা সংগঠন আমাদের জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে হয়তো মুখ্য ভূমিকা বা নেতৃত্ব গ্রহণ করেনি। তবু একাত্তরের অনেক আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চিন্তা একটা দেশের একটা জাতির নিদিষ্ট লক্ষ্যাভিসারী অন্তঃস্রোতকেই সামনে তুলে ধরে। আসলে মহীরুহের চারপাশে জেগে ওঠা অজস্র গাছপালা নিয়েই বনের গঠন-কাঠামো। বনকে জানতে হলে এর সবটাই জানা দরকার।

 তবে ব্যাপক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে সবটুকু হয়তো প্রতিফলিত নাও হয়ে থাকতে পারে। এর দুটো কারণ, প্রথমত গ্রন্থের সীমিত পরিসরে স্থান সঙ্কুলানের প্রশ্ন, দ্বিতীয়ত অনেক তথ্য ও দলিল হাতে না আসা যা বহুক্ষেত্রে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি, কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগেরও সুযোগ ঘটেনি। সবাইকে আমরা জায়গা দিতে চেয়েছি এবং ভূমিকা অনুযায়ী গুরুত্ব বিধানের দিকেও লক্ষ্য রেখেছি- এইটেই মূল কথা। এই নীতি পটভূমি ও অন্যান্য খণ্ডে একইভাবে অনুসৃত হয়েছে।

 সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার মতো দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহসংখ্যার দিক থেকে বিপুল বলতে হবে। তবু আমাদের ধারণা এই যে, বহু দলিল ও তথ্য এখনো সংগ্রহের বাইরে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি লোকই কোন না কোন ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগে জড়িত ছিলেন। গ্রামে গ্রামে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বহু ঘটনার উদ্ভব হয়েছে, বহু বীরত্বগাথা, বহু ত্যাগ, বিশ্বাসঘাতকতা, অত্যাচার, নিপীড়নের কাহিনী স্তরে স্তরে গড়ে উঠেছে। এর পরিমাণ অনুধাবন করা কঠিন। তাছাড়া সারা বিশ্ব জুড়েও ছিল এ সম্পর্কে সমর্থন ও প্রতিক্রিয়া এবং প্রবাসী বাঙালীদের ব্যাপক তৎপরতা। তাই সংগ্রহের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে তা বলা যায় না। দেশ ও বিদেশের তথ্য সংগ্রহের কাজ তাই কেবল বাড়তে পারে, শেষ সীমায় পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়া এখনই সম্ভব নয়। এর জন্য দীর্ঘ পরিক্রমা ও সক্রিয়তার প্রয়োজন।

 সীমিত সময়ের জন্য আমাদের প্রকল্পের আয়ু; তদুপরি আমাদের লোকবলও মাত্র চারজন। এই অবস্থায় এই বিশাল কাজের কতখানি বাস্তবায়ন সম্ভব তা ভাববার বিষয়। তবু আমরা অসাধ্য সাধনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম এবং যতদূর সফল হয়েছি তাতে স্বাধীনতা যুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য ও দলিলের ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছে, নির্দ্ধিধায় এ কথা বলা যায়। এখন এর বিকাশ ও উন্নয়নের অপেক্ষা রাখে মাত্র। তথ্য ও দলিল সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে এ কথা বলা য়ায়।

 দলিলপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল ব্যাপক এবং খোলামেলা। ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছাড়াও এ উদ্দেশ্যে আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পত্রপত্রিকার দপ্তর, গ্রন্থাগার এবং ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের কাছে প্রেরণ করেছি কয়েক হাজার প্রশ্নমালা কিন্তু দুঃখজনকভাবে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। প্রতিটি রাজনৈতিক, ছাত্র, শ্রমিক এবং কৃষক সংগঠনের সাথেই যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু দলগতভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ দিয়ে গেছেন নিজস্ব সংগ্রহের দলিলপত্র। আবেদনের জবাবে আশানুরূপ সাড়া না পাবার কারণ হিসেবে আমরা দুটি বিষয় লক্ষ্য করেছি; প্রথমত, ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে অসচেতনতা, যার ফলে খুব কমসংখ্যক মানুষই দলিলপত্র সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করে থাকেন এবং দ্বিতীয়ত, ভিত্তিহীন সংশয়- বিশেষ করে কারো কারো প্রতিক্রিয়ার আমাদের মনে হয়েছে যে, ইতিহাস প্রণয়নের প্রচেষ্টাটি সরকারী হওয়ায় এর সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে তাঁরা যথেষ্ট সন্দিহান এবং ফলে দলিলপত্র প্রদানের মাধ্যমে পরিকল্পিত ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে অপূর্ণাংগতার সম্ভাবনাকেই যেন তাঁরা মেনে নিয়েছেন। ব্যাপক ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে এই সমস্যা আমরা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। সরকারী উদ্যোগের কারণে ইতিহাসের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে যে আশঙ্কা, তা আমাদের দলিল খগুলি নিরসন করবে বলে আমরা মনে করি।

 এছাড়াও আমরা লক্ষ্য করেছি, এমন অনেকের কাছেই দলিল ও তথ্যাদি রয়েছে যা তাঁরা হাতছাড়া করতে রাজী নন। অনেকেই কিছু ছেড়েছেন, কিছু হাতে রেখে দিয়েছেন। আবার কারো কারো প্রত্যাশা, দলিলাদি পুরানো হলে সেগুলি অনেক বেশী লাভের উৎস হয়ে উঠতে পারে। আমরা মূল দলিলের ফটোকপি রেখে অনেককেই তাঁর মূল কপি ফেরত দিয়েছি। এ ক্ষেত্রেও অনেকেই ফটোকপি রাখারও সুযোগ দিতে রাজী হননি—অর্থাৎ তাঁর হাতের দলিলটি তিনি বেরই করেননি ভবিষ্যতের আশায়। সরকার দলিল সংগ্রহের ব্যাপারে কোন অর্ডিন্যান্স পাস করেননি। ফলে দলিল পাওয়ার জন্য আমরা ব্যক্তিগত অনুরোধ ও প্রয়াস চালাতে পারি, আইনগত চাপ সৃষ্টি করতে পারি না। অথচ এ কথাও সত্যি যে, স্বাধীনতাসংক্রান্ত দলিল মাত্রই জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, তাকে ব্যক্তিগতভাবে বা প্রতিষ্ঠানগতভাবে কুক্ষিগত করে রাখা উচিত নয়।

 এই সংগে আমরা দুঃখের সংগে উল্লেখ করি যে, এই প্রকল্প শুরু হবার আগেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিশিষ্ট নেতাদের অনেককে আমরা হারিয়েছি। ফলে তাঁদের কাছে রক্ষিত দলিলপত্র পাওয়ার কিংবা তাঁদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।

 এইসব বাধাবিঘ্নের মধ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ফলে আমাদের এতদসংক্রান্ত যে বুনিয়াদ তৈরী হয়েছে তা অতীতের রুটি সংশোধনে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রস্তুত করতে সহায়ক হতে পারে। যে তথ্যগত ফাঁক থেকে যাচ্ছে তা পূরণ হওয়া দরকার। সম্ভব হলে অপ্রকাশিত দলিলপত্র থেকে কিংবা ভবিষ্যতে আরো দলিলপত্র সংগৃহীত হলে তা থেকে নির্বাচন করে অতিরিক্ত খণ্ড প্রকাশ করে এই ফাঁক পূরণের চেষ্টা করা যাবে। দেশে-বিদেশের দুষ্প্রাপ্য দলিল সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রাখা একান্ত জরুরী বলেই আমরা মনে করি। এ ধারা ক্ষুন্ন হলে এ কাজ দুরূহতর হবে, এমনকি এটা সম্পূর্ণ করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পার। এ ব্যাপারে স্থায়ী কর্মসূচী সুফলদায়ক হবে সন্দেহ নেই।

 দলিল এবং তথ্য প্রামাণ্যকরণের জন্য সরকার নয়-সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রামাণ্যকরণ কমিটি গঠন করেন। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর মফিজুল্লাহ কবীর এই প্রামাণ্যকরণ কমিটির চেয়ারম্যান।

 কমিটির সদস্যরা হলেন:

ডঃ সালাহউদ্দীন আহমদ, প্রফেসর, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ডঃ আনিসুজ্জামান, প্রফেসর, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ডঃ সফর আলী আকন্দ, পরিচালক, ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী।
ডঃ এনামুল হক, পরিচালক, ঢাকা যাদুঘর।
ডঃ কে, এম, করিম, পরিচালক, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার।
ডঃ কে, এম, মহসীন, সহযোগী প্রফেসর, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ডঃ শামসুল হুদা হারুন, সহযোগী প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জনাব হাসান হাফিজুল রহমান, সদস্য-সচিব।

 প্রকল্পের কর্মীবৃন্দ নির্দিষ্ট গ্রন্থের জন্য দলিলাদি বাছাই করে প্রামাণ্যকরণ কমিটির সামনে পেশ করেন। প্রামাণ্যকরণ কমিটি সেগুলি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কি না তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই করেন। কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তানুযায়ী যে সকল দলিল ও তথ্য প্রামাণ্য বলে গৃহীত হয়, কেবলমাত্র সেগুলিই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রন্থের জন্য পেশকৃত দলিলাদির কিছু কিছু কমিটি নাকচ করেন; কিছু নতুন দলিল ও তথ্য যা গ্রন্থের উৎকর্ষের জন্য নেহাৎ জরুরী তা সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দেন। প্রকল্পের পক্ষ থেকে তাঁদের এই নির্দেশ যথাসাধ্য পালন করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রকল্পকে বেশ দুরূহ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একেই লোকবল নগণ্য, তার ওপর স্বাভাবিক কাজ সেরে নিতান্ত দুষ্প্রাপ্য দলিলের সন্ধানে প্রকল্পের কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়েছে। তবুও কর্মীরা লেগে থেকেছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলও হয়েছেন। তবে সংগ্রহ যথাসময়ে হয়তো হয়নি, অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। ফলে খণ্ডবিশেষে সংযোজন অধ্যায় যোগ করতে হয়েছে। বিশেষভাবে পটভূমি খণ্ড সংকলনে এই পরিস্থিতি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ১৯০৫ সালের মূল গেজেট বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাচ্ছিল না। পটভূমি খণ্ডের জন্য আমরা প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে এই বিজ্ঞপ্তিটি উদ্ধৃত করি। কিন্তু প্রামাণ্যকরণ কমিটি যতদূর সম্ভব মূল দলিল সংকলনের পক্ষপাতী। তাই মূল দলিল সংগ্রহের চেষ্টা নতুনভাবে নেয়া হয়। ঢাকা গেজেটে এই বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়নি। কোলকাতা গেজেটেও নয়। ইতিমধ্যে পটভূমি খণ্ডটি প্রেসে চলে যায়। এই গেজেটের ফাইল লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল, হঠাৎ অন্য কাগজের স্তুপের ভেতর ধূলিধূসরিত অবস্থায় পাওয়া যায়। তমিজুদ্দিন খানের রীট আবেদনের মূল দলিল খুঁজতে গিয়ে অপরিসীম পরিশ্রমের পরও তা পাওয়া যায়নি। এর মূল কপি সিন্ধু হাইকোর্টে রয়েছে। আনা সম্ভব হয়নি। সুতরাং তা উদ্ধৃতির আকারেই গিয়েছে। এ থেকে প্রামাণ্যকরণ কমিটির সংকলনের কাজ নিখুঁত ও সুষ্ঠু করার জন্য অটল আগ্রহ ও আন্তরিকতাই ব্যক্ত হয়। প্রকল্পের কর্মীরাও তাঁদের এই অনুভূতির যথাসাধ্য মর্যাদা দিয়েছেন; তাঁদের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নে কসুর করেননি, প্রায় ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন। পটভূমি খণ্ডে দলিলসমূহ কালানুক্রম অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। অন্যান্য খণ্ডের দলিলের বেলাতেও কমবেশী এই নীতি অনুসৃত হয়েছে। প্রতিটি খণ্ডেই নির্ঘণ্ট ও কালপঞ্জী দেয়া হয়েছে। শেষ খণ্ডে গ্রথিত হচ্ছে সকল খণ্ডের নির্ঘণ্ট এবং কালপঞ্জী; ফলে পাঠকদের পক্ষে কোন খণ্ডে কী আছে তা একনজরে জানা সম্ভব হবে।

 প্রামাণ্যকরণ কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল দলিলসমূহ মূল যে ভাষায় আছে তাতেই ছাপা হবে; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এতে বিশেষ অসুবিধে দেখা দেয়। বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় মূল দলিলগুলি আমরা সংকলনে স্থান দিয়েছি। তাছাড়া উর্দু, হিন্দী, আরবী ও রুশ ভাষার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল অনুবাদসহ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্কান্দেনেভীয়, ফরাসী, জার্মান, জাপানী ও ইন্দোনেশীয় প্রভৃতি ভাষায় বেশ কিছু দলিল ও তথ্য থাকা সত্ত্বেও তার অনুবাদ করা এবং গ্রন্থে সেসবের স্থান দেয়া এখনও সম্ভবপর হয়নি। এগুলি ভবিষ্যতের জন্যে জমা রইল। প্রাসঙ্গিকতা ও পরিসরের কথা বিবেচনা করে কোন কোন দলিল সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, তবে সে ক্ষেত্রে আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখেছি যাতে মূলের বিকৃতি না ঘটে।

 বর্তমানে আমাদের সংগ্রহে প্রায় সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার দলিল ও তথ্যাদি জমা হয়েছে। এর ভেতর ১৫ হাজার পৃষ্ঠা ছাপা হচ্ছে। বাকি দলিল ও তথ্যাদি ছাপার বাইরে রয়ে যাবে। এছাড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় আরও দলিলপত্র সংগৃহীত হবে। এগুলির গুরুত্বও কম নয়। অর্থাৎ এগুলির ওপর গবেষণা করা এবং তার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প-প্রকাশিত খণ্ডগুলির বাইরেও নতুন তথ্য সংবলিত মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধ সংক্রান্ত গ্রন্থ প্রকাশের সম্ভাবনা অবারিত থেকে যাবে। এ সুযোগ সম্প্রসারিত করা দেশ ও জাতির স্বার্থেই একান্ত অপরিহার্য। কারণ এ সম্পর্কে যত বেশী বস্তুনিষ্ঠ তথ্যাদি জাতি জানতে পারবে আমাদের অগ্রযাত্রা তত বেশী নির্ভূল ও সচ্ছল হবে। তাছাড়া এ আমাদের অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস। তাই এ সম্পর্কিত প্রতিটি ছত্র পরম যত্ন, দায়িত্ব ও আগ্রহে সংরক্ষিত করা দেশ ও সরকারের নৈতিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত প্রায় প্রতিটি আত্মসচেতন দেশই তাদের অত্যুদয়ের সঙ্গে জড়িত ঘটনাবলী সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য স্থায়ী আর্কাইভস প্রতিষ্ঠা করে থাকেন এবং এ সংগ্রহের কাজ ও এর ওপর গবেষণার কর্মসূচী অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যাপারে এ সম্ভাবনার বাস্তবায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি সমানভাবে দরকার- বিশেষভাবে এ কারণে যে, এ সংগ্রামে এ দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেছিলেন, যত দিন যাবে তাদের সংগে যোগাযোগ তত বৃদ্ধি পাবে, নতুন নতুন তথ্য আর্কাইভস-এর সংগ্রহ সমৃদ্ধতর করতে থাকবে। এ সুযোগ বিনষ্ট করা দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না।

 প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহের কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়ে যাঁরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এ পর্যায়ে কিছু প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ব্যক্তি ও কর্মীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঢাকা যাদুঘর, বাংলা একাডেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী, বাংলাদেশ অবজারভার লাইব্রেরী, দৈনিক বাংলা লাইব্রেরী, জাতীয় সংসদ লাইব্রেরী এবং  জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সাহায্য করেছেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘর এবং দিনাজপুর কালেকটরেট হতেও আমরা কিছু দলিল ও তথ্যাদি পেয়েছি। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় গ্রন্থাগার এবং সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডি, এম, আই)-এর সৌজন্যে বহুসংখ্যক দলিল-দস্তাবেজ আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। তাঁদের সক্রিয় সহযোগিতার জন্য আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

 ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে অনেকে দলিলপত্র দিয়ে প্রকল্পকে সাহায্য করেছেন। তাঁদের মধ্যে কিছু নাম এখানে উল্লেখ করা খুবই সংগত মনে করছি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী কিছুসংখ্যক মূল্যবান দলিল প্রকল্পকে দিয়েছেন। বিদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মার্কিন কংগ্রেসের বহুসংখ্যক দলিল এ, এম, এ, মুহিতের সৌজন্যে আমরা পেয়েছি। প্রবাসে বাংলাদেশ আন্দোলনের সংগে জড়িত অনেকে তাঁদের দলিলপত্র প্রকল্পকে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মরহুমা রাশীদা রউফ, আজিজুল হক ভূইয়া, ডঃ এনামুল হক, আমীর আলী, সাখাওয়াত হোসেন ও জহির উদ্দীন আহমদের নাম উল্লেখযোগ্য। বিদেশ হতে কিছু মূল্যবান দলিল পাঠিয়েছেন মাহমুদুল হক এবং খোন্দকার ইব্রাহিম মোহাম্মদ। মুজিবনগর সরকার এবং স্বাধীন বাংলা বেতারের দলিলপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে যাদের সাহায্য-সহযোগিতার কথা আমরা বিস্মৃত হব না তাঁরা হলেন হাসান তৌফিক ইমাম, মওদুদ আহমদ, মাঈদুল হাসান, আবদুস সামাদ, দেবব্রত দত্তগুপ্ত, শামসুল হুদা চৌধুরী ও আলমগীর কবীর। পটভূমি পর্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল দিয়ে সাহায্য করেছেন বদরুদ্দীন উমর, কাজী জাফর আহমদ, অজয় রায়, ইসমাইল মোহাম্মদ, যতীন সরকার, শেখ আবদুল জলিল, ডঃ সাঈদ-উররহমান এবং আমিনুল হক। ইসমত কাদির গামা, শামসুজ্জামান মিলন, উৎপল কান্তি ধর, স্বপন চৌধুরী ও রেজা মোস্তাক স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল ও তথ্যাদি দিয়েছেন। উল্লিখিত সকলকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া আমাদের বিপুল সংগ্রহের বিরাট কর্মকাণ্ডের সংগে জড়িত রয়েছেন আরও অনেকে। এই স্বল্প পরিসরে তাঁদের প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আমাদের আর্কাইভস-এর দলিল সংরক্ষণ খাতায় তাঁদের সকলের নাম দলিলাদির উৎস হিসেবে লিখিত রয়েছে। তাঁদেরকেও ধন্যবাদ।

 দলিল ও তথ্যাদি সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রামাণ্যকরণ কমিটির অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। কমিটির সদস্যগণ পরম ধৈর্য, যত্ন ও আগ্রহ সহকারে দলিলাদির প্রাসঙ্গিকতা ও মূল্য বিচার করেছেন। তাঁরা শুধু দলিলাদির সত্যতা যাচাই করেননি, প্রকল্পের উন্নয়ন এবং বিশেষ করে খণ্ডসমূহের তথ্যসমৃদ্ধি ও সৌকর্য বৃদ্ধির জন্য মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশেষভাবে কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর মফিজুল্লাহ কবীরের কথা আন্তরিকতার সংগে স্মরণ করছি।

 দলিল সংগ্রহ খণ্ডগুলির প্রকাশনার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। এই সংগে বাংলাদেশ সরকারের মুদ্রণ বিভাগ এবং দি প্রিণ্টার্স-এর প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

 সবশেষে আরও কয়েকজনের কথা বলতে হয়- স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলসংগ্রহ খণ্ডগুলির পেছনে রয়েছে যাঁদের অক্লান্ত শ্রম ও নিরলস সাধনা, তাঁরা এই প্রকল্পের চারজন গবেষক- সৈয়দ আল ঈমামুর রশীদ, আফসান চৌধুরী, শাহ আহমদ রেজা এবং ওয়াহিদুল হক। শুধুমাত্র চাকরির দায়িত্বে নয়- গবেষণার স্পৃহা ও প্রকল্পের কাজের সংগে একাত্মতায় তাঁরা দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহের কাজ হতে শুরু করে দলিলসমূহের সংগ্রহ, বাছাই, সম্পাদনায় সহায়তা, প্রেসকপি তৈরীকরণ, মুদ্রণ তত্ত্বাবধান-সর্ববিধ কাজ সীমিত ও সংকীর্ণ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করেন। এছাড়া সুকুমার বিশ্বাস ও রতনলাল চক্রবর্তীর শ্রম ও নিষ্ঠার কথা উল্লেখযোগ্য। প্রশাসনিক দিক থেকে আবদুল হামিদের গভীর দায়িত্ববোধ এবং নিরলস তৎপরতা প্রকল্পের স্বাভাবিক কাজকর্ম অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে।

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যাঁরা আত্মহুতি দিয়েছেন, যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, যাঁরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সর্বব্যাপী প্রতিকূল পরিবেশে যাঁরা দেশপ্রেমের দীপশিখা অমলিন রেখেছেন, যাঁরা আমাদের কর্মের পথে প্রতি মুহূর্তের প্রেরণস্বরূপ তাঁদের সকলের উদ্দেশে গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের এই সংগ্রহ আমরা দেশের মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছি।

হাসান হাফিজুর রহমান

সংযোজন

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের সাবেক পরিচালক জনাব হাসান হাফিজুর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুর পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের দু'জন উপসচিব কিছুকাল প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন এবং এরপর পরিচালকের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করা হয়। হাসান হাফিজুর রহমানের জীবদ্দশায় প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলছিল তবে তিনি চার খণ্ডের মুদ্রিত রূপ দেখে যেতে পেরেছিলেন আর ছয় খণ্ড মুদ্রণের জন্য প্রেসে পাঠানো হয়েছিল। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তাঁর আন্তরিক উৎসাহ ও নিরলস পরিশ্রমের কথা আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরন করছি।

 স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের দলিলপত্র সংকলন ও মুদ্রণের গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলে সচেতন ছিলেন। ফলে হাসান হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রকল্পের কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়নি। প্রামাণ্যকরণ কমিটির গঠন পূর্বানুরুপ থাকে এবং এই কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত কোন বিষয় পরিবর্তন করা হয়নি। পূর্বে গৃহীত নীতির ভিত্তিতে এবং কর্মরত গবেষক ও অফিস কর্মচারীদের নিয়ে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ চলতে থাকে। তবে প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সময়ের সীমাবদ্ধতার জন্য দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহ এবং সেগুলোর সম্পাদনা যুগপৎভাবে করতে হয়েছে বলে দলিল খণ্ডসমূহের ক্রম অনুযায়ী মুদ্রণের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। কোন কোন খণ্ডের বিষয় সম্পর্কিত পর্যাপ্ত দলিল ও তথ্যপ্রাপ্তির বিলম্বই তার একমাত্র কারণ।

 প্রামাণ্যকরণ কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ভুমিকাটি পরবর্তী খণ্ডগুলিতেও অপরিবর্তিতভাবে সন্নিবেশ করা হয়েছে। আমাদেও মূল লক্ষ্য ছিল সবগুলো দলিলখণ্ডের মধ্যে গুণগত ও পদ্ধতিগত সামঞ্জস্য অক্ষুন্ন রাখা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল খণ্ডের মুদ্রণ ও প্রকাশনা সম্পন্ন করা। এ কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারলেই দায়িত্ব পালনে আমরা সমর্থ হয়েছি বলে ভাবতে পারব।

কে এম মোহসীন

দলিল প্রসঙ্গঃ সশস্ত্র সংগ্রাম (১)

 সশস্ত্র সংগ্রামের দলিলপত্র তিন খণ্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস স্থায়ী এই যুদ্ধের প্রকৃতি বিচার করে বিভাজনগুলি করা হয়েছে।

 প্রথশ ভাগে এসেছে প্রতিরোধ যুদ্ধের বিবরণ, যেহেতু মার্চ থেকে মে-জুন পর্যন্ত এর ধরন ছিল প্রতিরোধমূলক। দ্বিতীয় ভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় কমাণ্ডের অধীনে সংঘটিত যুদ্ধের ঘটনাবলী (মধ্য ডিসেম্বরে হানাদার বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ পর্যন্ত)। তৃতীয় ভাগে রয়েছে সরকারী দলিলপত্রের সংকলন।

 বর্তমান খণ্ড সশস্ত্র সংগ্রাম (১) প্রাণীত হয়েছে প্রাথমিক প্রতিরোধ যুদ্ধে ঘটনাবলী নিয়ে। প্রতিরোধ যুদ্ধ যেহেতু ছিল সারাদেশে বিস্তৃত, সেহেতু এ সংক্রান্ত যাবতীয় বিবরণ জেলাওয়ারীভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

 মার্চ মাসের ব্যাপক গণ-অসহযোগের মূল কেন্দ্র ঢাকায় হানাদার বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণ এবং সশস্ত্র বাঙালী সেনা ইউনিটগুলিকে নিরস্ত্রকরণ ও বাঙালী সেনা নিধন, ছাত্রাবাস আক্রমণ, বুদ্ধিজীবী ও নিরস্ত্র জনগণকে অবাধে হত্যার (পৃঃ ৫-৬, ৬-৭, ১১-১৩, ১৪-১৯, ৩২-৪১) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশের সর্বত্র সশস্ত্র বাঙালী ইউনিটসমূহ- ইস্ট বেংগল রেজিমেণ্ট, ই-পি-আর (বর্তমানে বি-ডি-আর), পুলিশ প্রভৃতি রুখে দাঁড়ায়। যেসব স্থানে এসব সশস্ত্র ইউনিট অবস্থান করছিল সেসব স্থানে ব্যাপক গণ-অসহযোগের পটভূমিতে তাদের এই তাৎপরতা জনগণের স্বতোৎসারিত দৃঢ় সক্রিয় সমর্থনে প্রবল প্রতিরোধ যুদ্ধে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে তা বিজয় অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে।

 প্রাথমিকভাবে এ যুদ্ধ ছিল অসংগঠিত, উপস্থিত স্থানীয় নেতৃত্বনির্ভর এবং অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত একটি প্রবল শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় নিরস্ত্র জনতার আত্মরক্ষার মরিয়া প্রয়াস-সঞ্জাত এক অসম লড়াই। অনিবার্যরূপে এ ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের এক খণ্ডিত পর্যায়। এ যুদ্ধে প্রতিরোধী শক্তির প্রাথমিক পরাজয় ঘটা সত্ত্বেও তাদের ত্যাগ, বীরত্ব ও অসমসাহসিকতার অত্যুজ্জ্বল নিদর্শনাবলী গভীর প্রেরণার উৎস ছিল। এ সংক্রান্ত গটনাবলীর বিন্যাস দেশর তৎকালীন প্রশাসনিক-রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডের মূল কেন্দ্র ঢাকা থেকে শুরু করা হয়েছে এবং পরে পৃথক পৃথক শিরোনামে প্রত্যেক জেলার ঘটনা পরপর তুলে ধরা হয়েছে। এ বিন্যাসে দেশর তৎকালীন ক্যাণ্টনমেণ্টগুলিতে অবস্থানরত ইস্ট বেংগল রেজিমেণ্টগুলির বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন, যেমন ১ম বেংগল, ২য় বেংগল, ৩য় বেংগল, ৪র্থ বেংগল ও ৮ম বেংগলের ভূমিকা এবং তাদের অফিসারদের দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার কথা যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে আধাসামরিক বাহিনী ই-পি-আর উইংগুলির সময়োচিত নেতৃবৃন্দ, ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে একীভূত বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের বিবরণ। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ যুদ্ধকে সুসংহত করার লক্ষ্যে মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং তৎকালীন কর্নেল (অবঃ) এম. এ. জি. ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক করে মুক্তিবাহিনী গঠনের বিষয়ও বিবরণে এসেছে (পৃঃ ১২৪, ২৪৫-২৪৭, ২৫৮-২৬১)।

 প্রতিরোধ যুদ্ধের বিবরণ সংবলিত দলিলপত্র সংগ্রহ ও সন্নিবেশ করা মোটেও সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের শিকার হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার বিবরণ রাখতে সমর্থ হননি। এ বিষয়ে তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তরকালে এ যুদ্ধের সাথে জড়িত বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক নেতৃবৃন্দ্রে সাক্ষাৎকারসমূহের উপরই নির্ভর করতে হয়েছে মুখ্যভাবে। এছাড়া সমসময়ে প্রণীত ‘প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ’ এ ব্যাপারে মূল্যবান আকর গ্রন্থ রূপে কাজ করেছে। পরবর্তীতে রচিত আরও কিছু গ্রন্থ, যেমন ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস' প্রভৃতি তথ্যে ও সত্যে প্রতিরোধ যুদ্ধকে উজ্জ্বলতর করে তুলেছে (পৃঃ ৪৬-৪৯, ৫৭-৮৯, ২৬১)। পত্র-পত্রিকার বিবরণও সশস্ত্র প্রতিরোধের পরিস্থিতিকে তুলে ধরতে অনেকখানি সাহায্য করেছে (পৃঃ ৩৮৬-৪৪৮)। সমগ্র দেশ দখলদার বাহিনী কবলিত থাকায় এ ব্যাপারে পার্শ্ববর্তী মিত্ররাষ্ট্র ভারতে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা থেকেই সাহায্য নেওয়া হয়েছে বেশী। মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত দু’একটি পত্রিকার খবরও নেওয়া হয়েছে (পৃঃ ৩৮৬, ৪৩১, ৪৩৪, ৪৪৬, ৪৪৮)। তবে বেংগল রেজিমেণ্ট, ই-পি-আর-এর অধিনায়ক পর্যায়ের মূল ব্যক্তিবর্গের প্রদত্ত সাক্ষাৎকারগুলিই এ খণ্ডের সারবস্তুরূপে কাজ করেছে।

 সাক্ষাৎকারগুলির অধিকাংশ গৃহীত হয়েছিল বাংলা একাডেমীর অঙ্গীভূত জাতীয় স্বাধীনতার ইতিহাস পরিষদের উদ্যোগে। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, মেজর জেনারেল (অবঃ) কে. এম শফিউল্লাহর সাক্ষাৎকার দু’টিসহ (পৃৎ ৯৬-১২৮, ১৬০-১৮৪) বেশ কয়েকটি মূল্যবান সাক্ষাৎকার বাংলা একাডেমীর গবেষক সুকুমার বিশ্বাস ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করেছিলেন।

 সংগৃহীত সাক্ষাৎকারগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিরোধের বিবরণপূর্ণ প্রথমাংশ সশস্ত্র সংগ্রাম (১)-এ এবং প্রতিরোধের পর কেন্দ্রীয় কমাণ্ডের অধীনে বিভিন্ন সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধের বিবরণ সাধারণতঃ সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয়াংশে এসেছে। যেখান থেকে প্রতিরোধ পরবর্তী সংগঠিত যুদ্ধের কথা শুরু হয়েছে, সেখানকার অংশগুলি ষশস্ত্র সংগ্রাম (২)-এ সন্নিবেশিত হয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিরোধ ও সংগঠিত প্রত্যাঘাত পর্বের যুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

 গ্রন্থের সবশেষে স্বতন্ত্র অধ্যায়ে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কতিপয় গেরিলা বা গণবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বিবরণ (পৃঃ ৪৫০-৪৯৫)। প্রাথমিক পর্বে প্রতিপক্ষের উন্নততর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের মুখে প্রাথাগত পদ্ধতির সম্মুখযুদ্ধমূলক প্রতিরোধ ভেঙে পড়লে যুদ্ধ ক্রমশঃ গেরিলা রণকৌশলের দিকে মোড় নেয়। এই অবস্থায় নিয়মিত বাহিনীর যুদ্ধের কৌশল হিসাবে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক গেরিলা বাহিনী গড়ে ওঠে। অনেক স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্থানীয় অবস্থার ওপর ভিত্তি করেও অনেক গেরিলা দলের সৃষ্টি হয়। তাদের ক্ষিপ্র তৎপরতা, সাহস ও আত্মত্যাগ স্বাধীনতা যুদ্ধকে সাফল্যজনক যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছাতে বিপুলভাবে সহায়তা করেছিল। গেরিলা বাহিনীগুলির কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গোটা রণাংগন জুড়ে এতই ব্যাপক ও বিচিত্র ছিল যে, তা স্বতন্ত্র খণ্ডে সন্নিবেশিত হওয়ার দাবী রাখে। কিন্তু এ ব্যাপারে তথ্যের নিদারুন স্বল্পতার কারণে (যেহেতু গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের দৈনন্দিন তৎপরতার লিখিত বিবরণ বেশি পাওয়া যায়নি) তাদের মাত্র কয়েকটি বাহিনীর তৎপরতাসমূহের প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র এখানে তুলে ধরা সম্ভবপর হয়েছে।


পরিশিষ্ট
[এক]
The Bangladesh Gazette, Part II September 1. 1977, Page 503
Ministry of Information & Broadcasting.

*** *** ***

বিজ্ঞপ্তি

ঢাকা, ২৩শে আগস্ট ১৯৭৭

 নং- তথ্য/৪ই-২৫/৭৭/৪১৪৮১- স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্যে দৈনিক বাংলার প্রাক্তন সম্পাদক জনাব হাফিজুর রহমানকে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত অফিসার পদে ১৯৭৭ সনের ১লা জুলাই হইতে জনস্বার্থে এক বৎসরের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ করা হইল।

 ২। চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি তাঁহার বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি পাইবেন।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে-
আবদুস সোবহান
উপ-সচিব

পরিশিষ্ট
[দুই]

GOVERNMENT OF THE PEOPLE'S REPUBLIC OF BANGLADESH
MINISTRY OF INFORMATION & BROADCASTING
DACCA

No.51/2/78-Dev/231 Dated 18-7-1978

RESOLUTION

 In connection with the Writing and Printing of the History of Bangladesh War of Liberation the Government have been pleased to constitute an Authentication Committee for the Project “Writing and Printing of a History of Bangladesh War of Liberation" with the following members:

1. Dr. Mafizullah Kabir Pro-Vice Chancellor, Dacca University.
2. Professor salahuddin Ahmed Chairman, Department of History, Jahangirnagar University
3. Dr Safar Ali Akanda Director, Institute of Bangladesh Studies, Rajshahi.
4. Dr. Enamul Huq Director, Dacca Museum.
5. Dr. K. M. Mohsin Associate Professor, Deptt. of History, Dacca University.
6. Dr. Shamsul Huda Harun Associate Professor, Deptt. of Political Science. Dacca University.
7. Dr. Ahmed Sharif Professor and Chairman, Deptt. of Bengali. Dacca University.
8. Dr. Anisuzzaman Professor, Deptt. of Bengali, Chittagong University.
9. Mr. Hasan Hafizur Rahman O.S.D., Ilistory of Bangladesh War of Liberation Project.


The following shall be terms of reference of the Committee:

(a) To verify, endorse and authenticate the collected data and documents to be included in the History of Bangladesh War of Liberation.
(b) To determine validity and price of documents are required for the purpose.
Syed Asgar Ali
Section Officer

GOVERNMENT OF THE PEOPLE'S REPUBLIC OF BANGLADESH
MINISTRY OF INFORMATION & BROADCASTING
DACCA

No.51/2/78-Dev/10493/(25) Dated 13-2-1979

RESOLUTION

 In partial modification of Resolution issued under No. 51/2/78-Dev/231, dated 18.7.78 Govt. have been pleased to reconstitute an Authentication Committee for the Project “Writing and Printing of a History of Bangladesh war of Liberation" with the following members:

1. Dr. Mafizullah Kabir
Pro-vice Chancellor, Dacca University.
Chairman
2. Prof. Salahuddin Ahmed
Chairman, Deptt. of History, Jahangirnagar University.
Member
3. Dr. Anisuzzaman
Prof. Deptt. of Bengali, Chittagong University.
Member
4. Dr. Safar Ali Akanda
Director, Institute of Bangladesh Studies, Rajshahi
Member
5. Dr. Enamul Huq
Director, Dacca Museum.
Member
6. Dr. K. M. Mohsin
Associate Professor, Deptt. of History, Dacca University.
Member
7. Dr. Shamsul Huda Harun
Associate Professor, Deptt. of Political Science, Dacca University.
Member
8. Mr. Hasan Hafizur Rahman
O.S.D., History of Bangladesh War of Liberation Project.
Member-Secratary
2. The following shall be the terms of reference of the Committee:

To verify, endorse and authenticate the collected data and documents to be included in the History of Bangladesh War of Liberation.

To determine validity and price of documents are required for the committee.
M.A. Salam Khan
Section Officer.

পরিশিষ্ঠ
তিন
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তথ্য মন্ত্রণালয়
ঢাকা।

নং-তম/২/৮০/ইতিহাস (অংশ) ১২২৮৬ তাং ১১-০৯-৮৩ ইং

বিজ্ঞপ্তি

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডঃ কে, এম, মোহসীনকে তাহার নিজ দ্বায়িত্বের অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসাবে তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ “বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রন প্রকল্পের” প্রকল্প পরিচালক পদে জনস্বার্থে ৬-৯-১৯৮৩ (পূর্বাহ্ন) তারিখ হইতে ৩০-৬-১৯৮৪ পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত শর্তাধীনে নিয়োগ করা হইল।

*** *** ***
স্বাক্ষর-
মোঃ শফিকুর রহমান
উপ-সচিব।



সূচিপত্র

ক্রমিক বিষয় পৃষ্ঠা

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ ঢাকা

-২৭
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ কর্নেল আবু তাহের সালাহউদ্দিন
 সাক্ষাৎকার ঃ এয়ার কমোডর এম, কে বাশার
 সাক্ষাৎকার ঃ আব্দুল করিম খোন্দকার,  সাক্ষাৎকার ঃ ডেপুটি চীফ অব স্টাফ, বাংলাদেশ ফোর্সেসডেপুটি চীফ অব স্টাফ, বাংলাদেশ ফোর্সেস
১০
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর দেলোয়ার হোসেন
১২
 সাক্ষাৎকার ঃ আশরাফ আলী সরদার
১৩
 সাক্ষাৎকার ঃ মোঃ আসমত আলী আকন্দ, এস-আই,পুলিশ
১৪
 সাক্ষাৎকার ঃ আঃ গনি তালুকদার (পুলিশ)
১৫
 সাক্ষাৎকার ঃ শরীফ খান মোহাম্মদ আলী, এস-আই,পুলিশ
১৬
 সাক্ষাৎকার ঃ মোহাম্মদ আঃ সোবহান, এস-আই, রিজার্ভ পুলিশ
১৯
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ (অবঃ) আনোয়ার হোসেন
২১
 প্রতিবেদন  ঃ সত্যেন সেন
২২

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ চট্টগ্রাম

২৮-৯৫
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ কর্নেল জিয়াউর রহমান
২৮
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর এনামুল হক চৌধুরী
৩২
 সাক্ষাৎকার ঃ ক্যাপ্টেন শমসের মুবিন চৌধুরী
৪১
 সাক্ষাৎকার ঃ ব্রিগেডিয়ার হারুন আহমেদ চৌধুরী
৪৪
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর এম, এস, এ, ভূঁইয়া
৪৬
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ কর্নেল মাহফুজুর রহমান
৫১
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর (অবঃ) রফিক-উল-ইসলাম
৫৯
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ জেনারেল (অবঃ) মীর শওকত আলী
৮৮

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ কুমিল্লা- নোয়াখালী- ঢাকা

৯৬-১৫৮
 সাক্ষাৎকার ঃ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ
৯৬
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ কর্নেল শাফায়াত জামিল
১২৮
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর আবদুল গাফফার
১৩৪
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজল আইনউদ্দিন
১৩৭
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর ইমামুজ্জান
১৪১
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার মেজর লুৎফর রহমান
১৪২
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার সৈয়দ গোল আম্বিয়া
১৪৮
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
১৪৯

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ ঢাকা- ময়মনসিংহ- টাঙ্গাইল

১৬০-২১১
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর-জেনারেল (অবঃ) কে, এম, শফিউল্লাহ
১৬০
 সাক্ষাৎকার ঃ ক্যাপ্টেন গোলাম হেলাল মোরশেদ খান
১৯৬
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর এম, এ, মতিন
১৯৯
 সাক্ষাৎকার ঃ সিপাই আবতাব হোসেন
২০১
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর এম, এস, এ, ভূঁইয়া
২০৪
 সাক্ষাৎকার ঃ ব্রিগেডিয়ার মোঃ মতিউর রহমান
২০৬
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
২০৯

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ ময়মনসিংহ

২১২-২২০
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার এ, কে, এম, ফরিদউদ্দিন আহমদ
২১২
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার মেজর জিয়াউল হক
২১৬
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
২১৮


সশস্ত্র প্রতিরোধঃ সিলেট

২২১-২৩৩
 সাক্ষাৎকার ঃ ব্রিগেডিয়ার চিত্তরঞ্জন দত্ত
২২১
 ডায়েরী ঃ লেঃ কর্নেল আবদুর রব
২২৮
 সাক্ষাৎকার ঃ ল্যান্স নায়েক সোনা মিয়া
২৩০
 প্রতিবেদন ঃ সিপাই শফিক আহমেদ
২৩১

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা

২৩৪-২৬২
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ কর্নেল এম, এ, ওসমান চৌধুরী
২৩৪
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর এ, আর, আজম চৌধুরী
২৪৭
 সাক্ষাৎকার ঃ মোহাম্মদ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী
২৫০
 প্রতিবেদন ঃ মেজর (অবঃ) রফিক-উল-ইসলাম
২৬০

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ যশোর

২৬৩-২৭৮
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর আবদুল হালিম
২৬৩
 সাক্ষাৎকার ঃ ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন আহমদ
২৬৫
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
২৬৮

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ রংপুর- দিনাজপুর

২৭৯-২৮৯
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর মোঃ আনোয়ার হোসেন
২৭৯
 সাক্ষাৎকার ঃ লেঃ মোঃ আবদুস সালাম
২৮২
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার মোঃ আবদুল খালেক
২৮৩
 সাক্ষাৎকার ঃ হবিলদার জয়নাল আবেদীন
২৮৭
 সাক্ষাৎকার ঃ মোঃ নুরুজ্জামান
২৮৮
২৯০-৩২০
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দীন
২৯০
 সাক্ষাৎকার ঃ নায়েক সুবেদার মোঃ আনসার আলী
২৯৯
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার আরব আলী
৩০০
 সাক্ষাৎকার ঃ হাবিলদার বাসারতউল্লহ
৩০২
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার আহম্মদ হোসেন
৩০৩
 সাক্ষাৎকার ঃ নায়েক সুবেদার আবু তালেব শিকদার
৩০৬
 সাক্ষাৎকার ঃ খন্দকার আবদুস সামাদ
৩০৭
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
৩০৮
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার মেজর এ, রব (ডি-এ-ডি)
৩০৯

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ রাজশাহী

৩২১-৩৩৫
 সাক্ষাৎকার ঃ ব্রিগেডিয়ার গিয়াসউদ্দীন চৌধুরী
৩২১
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার আলী মোঃ মকিবর রহমান সরকার
৩২৯
 সাক্ষাৎকার ঃ সুবেদার মোঃ মতিউর রহমান
৩৩০
 সাক্ষাৎকার ঃ হাবিলদার মোঃ ফসিউদ্দিন
৩৩২
 প্রতিবেদন ঃ ‘দৈনিক বাংলা’
৩৩৪

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ বগুড়া

৩৩৬-৩৪৭
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
৩৩৬
 সাক্ষাৎকার ঃ গাজীউল হক
৩৩৯

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ পাবনা

৩৪৮-৩৫৬
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
৩৪৮
 সাক্ষাৎকার ঃ মোজাফফর হোসেন
৩৫১
 সাক্ষাৎকার ঃ আবদুর রহমান, এম-পি
৩৫৩
 প্রতিবেদন ঃ মনজুর আহমদ
৩২৫৫

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ বরিশাল-খুলনা- ফরিদপুর

৩৫৭-৩৮৫
 সাক্ষাৎকার ঃ মেজর মেহেদী আলী ইমাম
৩৫৭
 সাক্ষাৎকার ঃ মহিউদ্দিন আহমদ, এমপি
৩৬১
 সাক্ষাৎকার ঃ অবদুল করিম সরদার, এম-পি
৩৬৪
 সাক্ষাৎকার ঃ ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান
৩৬৪
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
৩৬৬
 প্রতিবেদন ঃ শহীদ সেরনিয়াবাত
৩৭৪
 প্রতিবেদন ঃ সত্যেন সেন
৩৭৫
 সাক্ষাৎকার ঃ মোমিনউদ্দিন আহমেদ, এম-পি
৩৮১
 প্রতিবেদন ঃ শরীফ আফজাল হোসেন
৩৮১
 প্রতিবেদন ঃ অধ্যাপক আহমেদ কামাল
৩৮৩

পত্র পত্রিকায় সশস্ত্র প্রতিরোধ

৩৮৬-৪৪৮

সশস্ত্র সংগ্রামে গেরিলা বাহিনী

৪৪৯-৪৯৫
 সাক্ষাৎকার ঃ কাদের সিদ্দিকী
৪৫০
 প্রতিবেদন ঃ হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ
৪৫১
 প্রতিবেদন ঃ মোহাম্মদ মোদাবেবর
৪৫৯
 প্রতিবেদন ঃ মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান
৪৬৪
 প্রতিবেদন ঃ এম, এ, সামাদ
৪৭৫
 সাক্ষাৎকার ঃ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া
৪৭৮
 সাক্ষাৎকার ঃ এ, মাসুদ (চুলু)
৪৮০
 সাক্ষাৎকার ঃ আবদুস সামাদ
৪৮০
 সাক্ষাৎকার ঃ নাসিরউদ্দিন ইউসূফ বাচ্চু
৪৮৬
 প্রতিবেদন ঃ শাহাদাত চৌধুরী
৪৯০
 প্রতিবেদন ঃ মোঃ জহিরুল হক
৪৯২
৪৯৫
 বাংলা
 ইংরেজী

এই লেখাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কপিরাইটের অধীন। যদিও কপিরাইট আইন, ২০০০ অনুসারে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ কিছু প্রকাশনা বা তার পুনরুৎপাদন কপিরাইট লঙ্ঘনে অভিযুক্ত হবে না:

৭২ নিম্নলিখিত কার্যগুলি কপিরাইট লংঘন হইবে না, যথা:-
(থ) নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের পুনরুৎপাদন অথবা প্রকাশনা, যথা:-
(অ) জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন ব্যতীত সরকারী গেজেটে প্রকাশিত হইয়াছে এমন যে কোন বিষয়;
(আ) সরকার কর্তৃক পুনরুৎপাদন বা প্রকাশ নিষিদ্ধ করা না হইলে, সরকার নিযুক্ত কমিটি, কমিশন, কাউন্সিল, বোর্ড বা অনুরূপ অন্যান্য সংস্থার রিপোর্ট পুনরুৎপাদন বা প্রকাশ;
(ই) ভাষ্য সহকারে পুনরুৎপাদিত বা প্রকাশিত হইয়াছে জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত এমন কোন আইন;
(ঈ) সংশ্লিষ্ট আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্যান্য বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুনরুৎপাদন বা প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা না হইলে, উক্ত আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের রায় বা আদেশ পুনরুৎপাদন বা প্রকাশ;
(দ) নিম্নে বর্ণিত অবস্থায় জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন এবং তদধীনে প্রণীত কোন বিধি অথবা আদেশের যে কোন ভাষায় অনুবাদ তৈরী বা প্রকাশনা, যথা:-
(অ) উক্ত ভাষায় অনুরূপ আইন বা বিধি বা আদেশের অনুবাদ ইতোপূর্বে সরকার কর্তৃক তৈরী বা প্রকাশিত না হওয়া; অথবা
(আ) উক্ত ভাষায় অনুরূপ আইন বা বিধি বা আদেশের অনুবাদ ইতোপূর্বে সরকার কর্তৃক তৈরী ও প্রকাশিত হইয়া থাকিলে, অনুবাদটি জনগণের কাছে বিক্রয়ের জন্য মজুদ নাই:
তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ অনুবাদের উল্লেখযোগ্য স্থানে এই মর্মে একটি বিবৃতি থাকিতে হইবে যে, অনুবাদটি সরকার কর্তৃক প্রামাণিক মর্মে অনুমোদিত বা গৃহীত হয় নাই;
এই লেখাটি যারা নিজেদের প্রয়োজনে পুনঃব্যবহার করতে চান, তাঁদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, বেশ কিছু কার্যের পুনরুৎপাদন নিষিদ্ধ।